কেন্দ্রের মসনদে দ্বিতীয়বারের মতো ‘সম্রাটের’ ভূমিকায় নরেন্দ্র মোদি। তার শাসনামলে দেশের মুদ্রাস্ফীতি তলানিতে, বৃদ্ধি পেয়েছে বিদ্বেষের মাত্রা। যদিও নির্বাচনে ডাক দিয়েছিলেন ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’। বাস্তবে তার যথার্থ প্রতিফলন না ঘটলেও প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসে নিজের ইমেজ তৈরি করতে সিদ্ধহস্ত হয়ে উঠেছেন। তা নিয়ে আলোকপাত করেছেন ড. দিলীপ মজুমদার।
দেশের ৭৫% সম্পদ রয়েছে ⁶ মানুষের হাতে। দেশের ৯ জন বিলিওনিয়ারের সম্মিলিত ধনরাশি দেশের ৫০% গরিব মানুষের থেকেও বেশি। ভারত যদি ৫ লক্ষ কোটি টাকার অর্থনীতির দেশ হয়ও তাহলে লাভ হবে বহুজাতিক সংস্থারই, সাধারণ মানুষের নয়।জিডিপির অঙ্কে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আর্থিক সংকটের পরিচয় পাওয়া যায় না। মানুষের কর্মসংস্থানের দিকটা দেখা দরকার। এখানেও দেখি মোদির ছাতি চাপড়ানো জুমলাবাজি। কি, না তিনি বছরে ২ কোটি মানুষকে চাকরি দেবেন। বেকার বলে দেশে আর কিছু থাকবে না একেবারে।মৈত্রীশ ঘটক ও উদয়ন মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, “ গৃহস্থালির সমীক্ষার ভিত্তিতে সিএমআইই ২০১৬ সালে থেকে কর্মসংস্থানের যে হিসেব কষেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০১৭ সালে দেশে মোট কর্মীর সংখ্যা ছিল ৪০ কোটি লক্ষ। ২০১৮ সালে সেটা কমে দাঁড়ায় ৪০ কোটি ৬২ লক্ষ, ২০১৯এর ফেব্রুয়ারিতে তা ৪০ কোটিতে ঠেকেছে। ২০১৭ সালে নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে ১৮ লক্ষ, কিন্তু এটা সেই বছরের নতুন কর্মপ্রার্থীর সংখ্যার ১২ শতাংশ, আর মোদি বছরে আড়াই কোটি নতুন কাজ দেওয়ার কথা বলেছিলেন তার ৭ শতাংশ। সিএমআইই-র অন্য এক রিপোর্ট অনুসারে ২০১৪ থেকে ২০১৮, এই চার বছরে দেশে কর্মসংস্থানের বার্ষিক গড় বৃদ্ধির হার ছিল ১.৯ শতাংশ। আগের চার দশকের চেয়ে এই হার কম, অর্থাৎ ইউপিএ-র দশ বছরে যে হারে নতুন কাজ তৈরি হয়েছিল, গত চার বছরে কাজ তৈরি হয়েছে তার চেয়ে কম হারে।“ সরকারি পরিসংখ্যান দেখলে, লেবার বুরোর হিসেবে, ২০১৫-১৬ সালে বেকারত্বের অনুপাত ছিল ৩.৭ শতাংশ। জাতীয় নমুনা সমীক্ষা সংস্থার তথ্য হিসেবে সংবাদ মাধ্যমে যা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে দেখছি ২০১৭-১৮ সালে বেকারত্বের হার দাঁড়ায় ৬.১ শতাংশ,গত চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। “কর্মসংস্থানের তো এই অবস্থা। গত সাড়ে নয় বছরে ১৯ কোটি কর্মসংস্থান তো দূরের কথা, উলটে দেশজুড়ে শূন্যপদের পরিমাণ ৯লক্ষ ৬৪ হাজার ৩৫৯। সেটা সরকার নিজেই জানিয়েছেন সাংসদ মালা রায়ের প্রশ্নের উত্তরে।
।। তৃতীয় তরঙ্গ।
ভারতের কৃষিখাত আয়তনে বিশাল। এবং সমস্যাজর্জরিত। ভারতের প্রায় ৭০% মানুষের জীবন-জীবিকা কৃষিনির্ভর। গত শতকের সত্তর দশকে সবুজ বিপ্লবের ফলে অবস্থার কিছু পরিবর্তন হয়। কিন্তু গত কয়েক দশকে কৃষির সঙ্গে যুক্ত মানুষদের আয় কমে গেছে। জল সংকট, বন্যা ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিপর্যয় তো আছেই তার সঙ্গে বড় ধরনের বিনিয়োগের অভাবও আছে। নব্বুইয়ের দশক থেকে আজ পর্যন্ত ৩ লক্ষেরও বেশি কৃষক আত্মহত্যা করেছেন এই কারণে।প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন তিনি কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করে দেবেন।তার জন্যই কি ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে কৃষি আইন পাস হল সংসদে ?কিন্তু সে আইন কি কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা করবে ?এসব আইনে কৃষকরা রাজ্য নিয়ন্ত্রিত বাজারগুলির পরিবর্তে পছন্দের ক্রেতার কাছে পণ্য বিক্রি করতে পারবেন বলে সরকারপক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। কিন্তু কৃষকরা কি বল্ছেন ? তাঁরা বলছেন কৃষি সংস্কার আইনের ফলে তাদেরকে ফসল বিক্রির জন্য বেসরকারি ক্রেতাদের সঙ্গেই দর কষাকষি করতে হবে। তাঁদের আশঙ্কা, নতুন আইনগুলির ফলে তাঁরা বৃহৎ কৃযি ফার্মগুলির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এঁটে উঠতে পারবেন না ; বড় প্রতিষ্ঠানগুলি কৃষিপণ্যের মূল্য নিজেদের ইচ্ছেমতো নির্ধারণ করতে পারবে।তাই কৃষকরা নামলেন আন্দোলনের পথে।তখন সরকার তাঁদের বিচ্ছিন্নতাবাদী ও জাতীয়তাবিরোধী আখ্যা দিতে লাগলেন।
।। চতুর্থ তরঙ্গ।
‘মেক ইন ইণ্ডিয়া’। চমৎকার স্লোগান। শুনতে ভালো। চিত্ত চমৎকার হয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন আসলে এটা ‘মেস ইন ইণ্ডিয়া’।ধরা যাক শিল্পের ক্ষেত্রটি। কৃষি আর শিল্প –এ দুটি অর্থনীতির মেরুদণ্ড। কৃষির ক্ষেত্রটি আমরা দেখলাম। এবার দেখি শিল্পের ক্ষেত্রটি। এখানে কাজের সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে কেন ?কারণ শিল্প-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলি কলকারখানা ও যন্ত্রপাতিতে নতুন বিনিয়োগ করছে না। ২০১৪ সালে এই বিনিয়োগের অঙ্ক ছিল জিডিপির ৩৪.৩%, কিন্তু ২০১৭ সালে সেটা কমে দাঁড়াল ৩০.৭%। বাড়তি চাহিদা আসতে পারত রপ্তানি থেকে। সেখানেও ভাটার টান। বিশেষজ্ঞের মতে, “ ২০১৪ সালের আগের দুই দশকে ভারতের রপ্তানি বছরে গড়পড়তা ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ বেড়েছে, গত চার বছরে সেই হার কমে দাঁড়িয়েছে ১.৬%। এর ফলে চলতি খাতে বিদেশি মুদ্রার ঘাটতি অনেকটা বেড়ে ২.৯% -এ পৌঁচেছে। এটাই মার্কিন ডলারের দাম চড়তে চড়তে ৭০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার একটা বড় কারণ। “অসংগঠিত ক্ষেত্রের অবস্থা আরও করুণ। মাঝারি ও ছোট শিল্প গভীর সমস্যায় আচ্ছ্ন্ন। সি এম আইই-র হিসেব, নোট বাতিলের পরে অসংগঠিত ক্ষেত্রে প্রায় ৩৫ লক্ষ মানুষ তাঁদের কাজ হারিয়েছেন।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct