এম মেহেদী সানি, কলকাতা, আপনজন: উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল ঘোষণা করেছে পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। সেই ফলাফলে রাজ্যের নিরিখে মেধাতালিকা অনুযায়ী সপ্তম স্থানে থাকা হাওড়ার মোহাম্মদ সাজিদ হোসেন দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। এই প্রথম কোনো উর্দু মাধ্যমে শিক্ষার্থী রাজ্যের মধ্যে প্রথম দশের মেধাতালিকায় স্থান পেলেন। উর্দু মাধ্যমে প্রথম, রাজ্যে সপ্তম সাজিদের প্রাপ্ত নম্বর ৪৯১, শতাংশের নিরিখে ৯৮.২। তাঁর বাড়ি হাওড়া জেলার শিবপুরে। সে হাওড়া হাই স্কুলের ছাত্র। ছাত্রের সাফল্যে সন্তোষ প্রকাশ করে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলতাব আলম ‘আপনজন’কে বলেন, ‘আমরা সকলেই খুবই আনন্দিত, ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। মোহাম্মদ সাজিদ পঞ্চম শ্রেণী থেকেই আমাদের বিদ্যালয়ের ছাত্র। বরাবরই প্রতিটি ক্লাসে প্রথম হয়েছে। মাধ্যমিকেও সে ৬৫৬ নম্বর পেয়ে উর্দু মাধ্যমে প্রথম হয়েছিল। আমরা তার সাফল্যে গর্বিত। আমাদের আরও একটি ছাত্রী খুব ভালো ফল করেছে, তার নাম আদিবা শামস, প্রাপ্ত নম্বর ৪৮১।’ প্রধান শিক্ষক জানান, সাজিদের ছোট ভাইও হাওড়া হাই স্কুলের ছাত্র, সেও অত্যন্ত মেধাবী। মোহাম্মদ সাজিদ হোসেনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা তিন ভাই বোন, বাবা মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন বস্ত্র ব্যবসায়ী, মা গৃহবধূ। তাঁর স্বপ্ন সিভিল সার্ভিস অফিসার হওয়া। স্বপ্ন পূরণে সাজিদের প্রচেষ্টাই কোনো খামতি নেই। সাজিদ এবং বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাধ্যমিকের পর সাজিদ বিজ্ঞান বিভাগে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছিল। পড়াশোনা শুরু করে জোর কদমে কিছুদিন যেতেই সিভিল সার্ভিস অফিসার হওয়ার স্বপ্ন মাথাচাড়া দেয়। সাজিদ তখন মনে করেন কলা বিভাগ নিয়ে উচ্চমাধ্যমিকে পড়াশোনা করলেই সিভিল সার্ভিস অফিসার হওয়ার জন্য সর্বভারতীয় পরীক্ষায় কিছুটা এগিয়ে থাকা যাবে। স্বপ্ন সফল করতে সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেন, বিজ্ঞান বিভাগ পরিবর্তন করে কলা বিভাগ নিয়ে পুনরায় পড়াশোনা শুরু করেন। শেষমেষ চূড়ান্ত পরীক্ষায় সাফল্যের পালক ছিনিয়ে নিয়ে সাজিদ নিজের মুকুটে জুড়ে নিল। স্বপ্নের কথা জানাতে গিয়ে সাজিদ বলে, আমি আইএএস অফিসার হতে চাই। দেশের জন্য এবং সমাজের সর্বস্তরের মানুষের পাশাপাশি আমরা সংখ্যালঘু সমাজের উত্তরণের জন্য কাজ করতে চাই।’ উল্লেখ্য এ বছর সারা রাজ্য থেকে উর্দু মাধ্যমে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল ৮২১৩ জন, যাদের মধ্যে পাশ করেছে ৭১৮০ জন, পাশের হার ৮৭.৪২ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ পরিচালিত পরীক্ষায় বাংলা মাধ্যম ছাড়াও নেপালি, সাঁওতালি এবং উর্দু মাধ্যমেও পরীক্ষা নেওয়া হয়। এবছর নেপালি মাধ্যমে পরীক্ষা দিয়েছিল ৭৮১২ জন, যাদের মধ্যে পাশ করেছে ৭২৮০ জন, পাশের হার ৯৩.১৯ শতাংশ। সাঁওতালি মাধ্যমে পরীক্ষা দিয়েছিল ৭৫৫ জন, পাশ করেছে ৬৮৫ জন, পাশের হার ৯০.৭৩ শতাংশ। উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল অনুযায়ী এ বছরের নেপালি ভাষায় প্রথম হয়েছে কালিম্পং-এর গীতাঞ্জলি ছেত্রী, সাঁওতালি ভাষায় প্রথম হয়েছে ঝাড়গ্রামের মিনতি হেমব্রম।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct