আসিফ রনি ও সজিবুল ইসলাম, সুতি, আপনজন: কেন্দ্রের বিজেপি সরকার যে ওয়াকফ সংশোধিত আইন পাস করেছে সেই আইনের বিরুদ্ধে গোটা দেশের সঙ্গে বাংলাতেও শুরু হয় প্রতিবাদ মিছিল সভা। সেই প্রতিবাদ করতে গিয়ে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার অন্তর্গত সুতি, শামসেরগঞ্জ, জলঙ্গী সহ একাধিক এলাকায় ভয়ংকর রূপ নেয় আন্দোলনে। ঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয় মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে। এতে রুষ্ট হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তার রোষ গিয়ে পড়ল গোটা ওয়াকফ আন্দোলনের উপর। মঙ্গলবার মুর্শিদাবাদের সুতির ছাবকাটিতে প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী তাই রাজ্যে ওয়াকফ আন্দোলন নিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন। এমনকি যদি ওয়াকফ আন্দোলন হয় তাহলে আমার থেকে বড় শত্রু আর কেউ হবে না বলে বলে প্রকাশে ময়দানে রাজ্যের চার কোটি মুসলিমদের প্রতি হুঁশিয়ারি দেন।
প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে ওয়াকফ নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলে তিনি বলেন, ‘ওয়াকফ নিয়ে আমি আর বলব না। ডোন্ট ইনসিস্ট মি। ওয়াকফ আমাদের এখানে কোন কোয়েশ্চেন নেই। যদি ওয়াকফ নিয়ে আন্দোলন করতে হয় দিল্লিতে যান এখানে নয়। বাংলায় আপনাদের কোন প্রবলেম নেই। বাংলায় আমি আছি মনে রাখবেন। আমি হিন্দু প্রপার্টিতেও নই, মুসলিম প্রপার্টিতেও নই। আমি কখনও কারও জমি অধিগ্রহণ করি না। কোর্টে স্টে আছে। এটা সাব জুডিস কেস।’
একই সাথে মুখ্যমন্ত্রী একে বারে আঙুল তুলে রাগান্বিত হয়ে হুঁশিয়াির দেন, ‘এটা নিয়ে আর গুলোগুলি করবেন না। যদি করেন তাহলে সবচেয়ে বড় শত্রু আমি হব। যদি আপনার কেউ অধিকার কেড়ে নেয় অধিকার রক্ষা করার গ্যারেন্টি আমাদের। এনআরসি করে কেড়ে নেওয়া হচ্ছিল না? আমরা তো রাস্তায় নেমেছিলাম। আন্দোলন করেছিলাম। আপনাদের জন্য ডিসিশান টা আমায় নিতে দিন। যদি কেউ অধিকার কেড়ে নেয় সেই অধিকার রক্ষা করার গ্যারেন্টি আমাদের। আমাকে আন্দোলন করতে দিন, আপনারা সব ধর্ম একসঙ্গে মিলে মিশে থাকুন বলে জানান।’ মুখ্যমন্ত্রীর এই রণং দেহি মুর্তি স্বভাবতই মুসলিম সমাজকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। যদিও মুখ্যমন্ত্রী বারে বারে বলে এসেছেন বাংলায় ওয়াকফ আইন লাগু েহতে দেবেন না। কিন্তু এভাবে ওয়াকফ আইন আন্দোলন বাংলায় করা যাবে না এমন হুমকি এর আগে শোনা যায়নি। এমনকী কোনও বিরোধী দল, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেও বলতে দেখা যায়নি।
মুখ্যমন্ত্রী এদিনের প্রশাসনিক সভায় পশ্চিমঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফিরে এসে রাজ্যে কাজ করার আহ্বান। কর্মশ্রী প্রকল্পের আওতায় এনে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, আমি শুনেছি বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের ভিন রাজ্যে বাংলায় কথা বললে অত্যাচার করা হচ্ছে। আমরা বেশ কিছু অভিযোগ পেয়েছি। যারা অত্যাচার করছেন, দয়া করে মনে রাখবেন বাংলায় ভিন রাজ্য থেকে আসা দেড় কোটি পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছেন। আমরা তাদের আমাদের ভাই-বোনের মতো আচরণ করি এবং তাদের ভালবাসি। আমরা যদি তাদের ভালোবাসতে পারি, তাহলে আপনারা কেন আমাদের লোকদের অত্যাচার করবেন?
এই বিষয়ে তিনি জানান, কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দিয়েছেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ।
এদিন মঙ্গলবার বহরমপুর থেকে সামশেরগঞ্জ পৌঁছন হেলিকপ্টারে। হেলিপ্যাড থেকে হেঁটে বিডিও অফিসে যান। সেখানে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য উপস্থিত ছিলেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে দেখা করে অভাব অভিযোগ সমস্যার কথা শোনেন। সঙ্গে ছিলেন ডিজি রাজীব কুমার, মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct