আপনজন ডেস্ক: পৃথিবীতে প্রতি আট সেকেন্ডে একটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। অথচ আত্মহত্যা প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু। আত্মহত্যার বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো, বিশ্বব্যাপী, জাতীয় এবং আঞ্চলিকভাবে সংকটে থাকা ব্যক্তিদের আরও সহায়তা করার জন্য নেওয়া পদক্ষেপকে উৎসাহিত করা উচিত। আর তাই ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্বজুড়ে পালন করা হয় বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। আন্তর্জাতিক আত্মহত্যা প্রতিরোধ সংস্থার সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বৈশ্বিক মানসিক স্বাস্থ্য ফেডারেশন একযোগে দিবসটি পালনে কাজ করছে। অনেক কিছুর সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে আত্মহত্যার কারণ হিসেবে যোগ হয়েছে সাইবার নিরাপত্তাহীনতা। আধুনিকায়ন, শিল্পায়ন ও নগরায়ণের ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাইবার অপরাধ। লিঙ্গনির্বিশেষে ব্ল্যাকমেলের শিকার হলেও এর বড় অংশে আছে বিভিন্ন বয়সের নারীরা। সম্প্রতি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন (সিক্যাফ) একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। লিঙ্গভিত্তিক তুলনামূলক পরিসংখ্যানে সাইবার অপরাধে ভুক্তভোগীদের মধ্যে নারীর হার ৫৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এই বিশাল সংখ্যার নারীর অনেকের মধ্যে দেখা দিয়েছে আত্মহত্যার প্রবণতা। সাইবার অপরাধে ভুক্তভোগী নারীদের এই উচ্চ হার জানিয়ে দিচ্ছে, প্রযুক্তির অপব্যবহার, বিশেষ করে নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা তৈরি করছে ব্যাপক মাত্রায়। এদিকে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যার সংখ্যা ৬৯ জন নারী। যৌন হয়রানির শিকার হয়ে আত্মহত্যার সংখ্যা ১০ জন, ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৩ জন এবং যৌতুকের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৫ জন নারী। বেকারত্ব, হতাশা, বিচ্ছেদ, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, একাকিত্ব—এগুলো আত্মহত্যার সামাজিক কারণ। এটি বেশি দেখা দেয় কৃষক, চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে। পরিবারে আত্মহত্যা ও মানসিক রোগের ইতিহাস থাকলে এর ঝুঁকি বাড়ে। আত্মহত্যার জেনেটিক বা বংশগতির সঙ্গে এর সরাসরি সংযোগ রয়েছে। আত্মহত্যার মাধ্যমে মৃত্যু হয়েছে, এ রকম মানুষের মস্তিষ্কে সেরোটোনিন নামের হরমোন বা নিউরোট্রান্সমিটারের স্বল্পতা দেখা যায়। সাধারণত এককভাবে আত্মহত্যা হলেও কখনো কখনো দলগতভাবে, ধর্মীয় রীতি পালনের অংশ হিসেবেও এটি করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশে কিশোর-কিশোরী ও বিবাহিত নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আত্মহত্যার প্রবণতার কারণগুলো হয় বিবাহবিচ্ছেদ বা দাম্পত্য কলহ, সম্পর্কের জটিলতা, পারিবারিক সহিংসতা, লেখাপড়ার খারাপ ফল, মা-বাবা কিংবা প্রিয়জনের সঙ্গে দূরত্ব, মনোমালিন্য, তৃতীয় লিঙ্গ ইত্যাদি। আত্মহত্যা যারা করে, করতে চায় বা পরিকল্পনা করে, তারা কিন্তু তাদের এই ইচ্ছার কথা জানিয়ে থাকে বিভিন্নভাবে। এ বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। আত্মহত্যার প্রবণতা মেডিকেল ও সাইকিয়াট্রিক ইমার্জেন্সি। রোগী যদি সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়, তাহলে তার সঠিক চিকিৎসা করাতে হবে। যেমন বিষপান, ফাঁসি, জলে ডুবে যাওয়া, ওপর থেকে লাফ দেওয়া—এগুলোর কারণ যা-ই হোক, রোগীকে উপযুক্ত চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি তাকে অবশ্যই সাইকিয়াট্রিস্ট বা মনোরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। নিয়মিত ফলোআপে থাকতে হবে। চিকিৎসা, ওষুধ সেবন, প্রয়োজনে কাউন্সেলিং ও সাইকোথেরাপির মাধ্যমে সঠিক কারণ অনুসন্ধানই পারে একজন মানুষকে নতুন জীবন দিতে।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct