সঞ্জীব মল্লিক, বাঁকুড়া, আপনজন: সন্ন্যাস জীবন থেকে সাংসারিক জীবনে প্রত্যাবর্তন, তারপরেই গ্রামের লোকের কাছে ‘বিনা পয়সার মাস্টার’ হিসেবে খ্যাতিলাভ বাঁকুড়ার রাজর্ষি বাবুর । সালটা ছিল ২০০০ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়ার প্ল্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতক হওয়ার পর হয়তো লাখ টাকার চাকরি জোটাতে পারতেন।কিন্তু না, বাস্তবিক জীবন থেকে নিজেকে আলাদা করে সম্পূর্ণ উল্টো পথে হেঁটেছিলেন তিনি,গ্রহণ করেছিলেন বেলুড় রামকৃষ্ণ মঠ থেকে সন্ন্যাস ধর্ম। তারপর দীর্ঘ ছয় বছরের যাত্রা রামকৃষ্ণ মিশনে। হ্যাঁ ইনি হলেন রাজর্ষি চৌধুরী, বাঁকুড়া জেলার সোনামুখী ব্লকের বোন্দলহাটি গ্রামের বাসিন্দা। ছোট থেকেই বুদ্ধিদীপ্ত ছিলেন বলে জানালেন তাঁর মা, কিন্তু ছোট থেকেই আধ্যাত্মবাদ তাকে আঁকড়ে ধরেছিল। শুধু নিজের মধ্যে আধ্যাত্ববাদ এমনটা নয়, পড়াশুনোর ফাঁকে ফাঁকে বন্ধুদের মধ্যে ভাগ করে বিভিন্ন আধ্যাত্মবোধের চিন্তাভাবনা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটা প্রতিষ্ঠান থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি অর্জন করার পর রঙিন জীবনকে ত্যাগ করা কি মুখের কথা?? বোধ হয় না। স্বাচ্ছন্দের জীবনকে পরিত্যাগ করে আধ্যাত্মবাদে ব্রতী হয়ে দীর্ঘ কয়েক বছরের যাত্রা রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসী হিসেবে। কিন্তু একসময়ের গভীর শারীরিক ব্যাধি তাকে ফিরে আসতে বাধ্য করে সাংসারিক জীবনে। সন্ন্যাস থেকে সাংসারিক জীবনে প্রত্যাবর্তন বোধহয় খুবই বিরল ঘটনা আমাদের সমাজে। কিন্তু এখানেই থেমে থাকেননি রাজর্ষি বাবু সংসার জীবনে প্রত্যাবর্তিত হয়ে নিজেকে গ্রামের লোকোর কাছে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘বিনা পয়সার মাস্টার’ হিসেবে। গ্রামের নতুন প্রজন্মের ছেলেদের কাছে তিনি খুব প্রিয় মানুষ হয়ে উঠেছেন, কারণ অবিরত বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষা দিয়েই চলেছেন,একেবারেই বিনা পয়সাতে।রাজর্ষি বাবু জানান বিনা পয়সায় শিক্ষাদানের পরিবর্তে ছাত্র-ছাত্রীদের যে ভালবাসা তিনি পান তাতেই তিনি খুশি।রাজর্ষি বাবুর মা মিনতি দেবী জানান ছেলে যখন সন্ন্যাস ধর্ম গ্রহণ করেছিল তখন তারা খুবই ভেঙে পড়েছিলেন,এখন তাদের ছেলে পারবারিক জীবনে ফিরে এসে নিজের মতো করে ছেলেদের পড়িয়ে ভালো আছে, তাতেই তারা খুশি। পূর্ণ সন্ন্যাস জীবন ত্যাগ করেছেন তো কি? এ যেন এক অন্য সন্ন্যাসের গল্প ধরা পড়লো ক্যামেরায়। এভাবেই চলছে বোন্দলহাটি গ্রামের রাজর্ষি বাবুর জীবন,চলছে তার বিনা পয়সার পাঠশালা।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct