নিজস্ব প্রতিবেদক, কলকাতা, আপনজন: কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর এজলাসে উঠে নিয়োগ সংক্রান্ত একটি মামলা। সোমবার সিবিআইয়ের সিট রিপোর্ট পেশ করেছে আদালতের কাছে। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, মোট ২১ হাজার পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি করেছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন। সেই দুর্নীতি করতে গিয়ে ৯ হাজার ওএমআর শিট বিকৃত করা হয়েছে। নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে এর আগে প্রাথমিক চার্জশিট পেশ করেছিল সিবিআই। সেই চার্জশিটেই বলা হয়েছিল, ওএমআর শিট বিকৃত করে অযোগ্যদের চাকরি দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় শান্তিপ্রসাদ সিনহা ও সুবীরেশ ভট্টাচার্য সরাসরিভাবে জড়িত বলে জানানো হয়েছিল চার্জশিটে। শুধু তাই নয়, নবম-দশমে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে নেমে সিবিআই আরও জানিয়েছিল, ‘স্কুল সার্ভিস কমিশনের দফতর এবং উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ থেকে হার্ড ডিস্ক উদ্ধার করা হয়েছে’। বাংলার স্কুল সার্ভিস কমিশনের ওমএমআর শিট সংক্রান্ত হার্ড ডিস্ক কীভাবে গাজিয়াবাদে গেল সেটাই সবচেয়ে বড় অবাক হওয়ার ব্যাপার ছিল। এর পরই কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এ ব্যাপারে আরও গভীর তদন্তের নির্দেশ দেন। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে এজন্য সিবিআইয়ের অধীনে সিট গঠন করতে বলা হয়। অশ্বিনী সিংভির নেতৃত্বে সেই সিট সোমবার সেই রিপোর্ট পেশ করেছে বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর এজলাসে। তাতে সিট এও জানিয়েছে, ‘স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে খুব কম করে ২১ হাজার পদে নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে। ৯ হাজারের বেশি উত্তরপত্র বিকৃত করা হয়েছে।’ এর আগে গত সপ্তাহে হাইকোর্টের নির্দেশে স্কুল সার্ভিস কমিশন ১৮৩ জন অযোগ্য চাকরি প্রাপকের নামের তালিকা প্রকাশ করে। তার পর আরও ৪০ জন অযোগ্যের হদিশ পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রেও ওমআর শিট বিকৃত করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। মূল প্যানেল থেকে ওয়েটিং লিস্ট, নিয়োগের সর্বত্র দুর্নীতি হয়েছে! নিয়োগ এসএসসি দুর্নীতি মামলার শুনানি চলাকালীন কলকাতা হাইকোর্টে এমনটাই দাবি করল সিবিআই। আর সেই দাবি শুনে বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু জানিয়ে দিলেন, ‘অপরাধে যুক্ত কাউকে রেয়াত করা হবে না’। গ্রুপ-ডি কর্মী নিয়োগে দুর্নীতি সংক্রান্ত এক মামলায় সিবিআইয়ের সিটের নবনিযুক্ত প্রধান অশ্বিন সাংভিকে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। সেই শুনানিতে উপস্থিত হয়ে অশ্বিন জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত প্রায় ২১ হাজার পদের নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে’। সিবিআইয়ের দাবি, -’ওই ২১ হাজারের মধ্যে ৯ হাজারের বেশি উত্তরপত্র বিকৃত করা হয়েছে’। আদালতে সিবিআইয়ের সিট প্রধান আরও জানান,-’ উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ থেকে উদ্ধার হওয়া এসএসসি-র হার্ড ডিস্কই এই তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে’। সিবিআইয়ের তরফে জানানো হয়, ‘প্রথমে ভাবা হয়েছিল মেধাতালিকায় গোলমাল রয়েছে। কিন্তু পরে দেখা যায় দুর্নীতি অনেক বড়! এই সব নথি এসএসসি-কে দেখানো হয়েছে।’ সিটের প্রধানের চাঞ্চল্যকর দাবি শুনে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু উল্লেখ করেন, দুর্নীতিতে যুক্ত আছে এমন কাউকে ছেড়ে কথা বলা হবে না। তিনি এদিন এজলাসে বলেন, ‘আমি অবাক হচ্ছি। তদন্তে আপনার যা সাহায্য লাগবে আদালতে এসে জানাবেন। আদালত সব রকম সাহায্য করবে। এই দুর্নীতির শেষ দেখা দরকার। যারা এই দুর্নীতিতে যুক্ত তাঁদের কাউকে ছাড়া হবে না।’ এহেন হুঁশিয়ারিতে তটস্থ অনেকেই বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct