এম মেহেদী সানি l, কলকাতা, আপনজন: নরেন্দ্র মোদীর সরকার যে ওয়াকফ সংশোধনী বিল (২০২৪) এনেছে, তার প্রতিবাদে তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলকে সমাবেশ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার কলকাতা ধর্মতলার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে ওয়াকফ সংশোধনী বিল (২০২৪) বাতিলের দাবিতে সরব হন তৃণমূলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বরা। ওই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, লোকসভায় তৃণমূলের মুখ্যসচেতক সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, পরিবহন মন্ত্রী স্নেহাশীষ চক্রবর্তী, রাজ্য সংখ্যালঘু তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা ইটাহারের বিধায়ক মোশারফ হোসেন, প্রাক্তন রাজ্যসভার সাংসদ সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান প্রমুখ।
এদিনের সভায় শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন যে, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার সংবিধানকে সম্মান করে না। রাজ্যের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা করছে না। প্রসঙ্গত, ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটির সদস্য কল্যাণ। কেন্দ্রকে নিশানা করে কল্যাণ বলেছেন যে, বিজেপির স্বৈরাচারী আচরণের জন্যই দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো বিপদের মুখে। তাঁর কথায়, ‘সংবিধানের প্রস্তাবনা দেশের চোখ। বিজেপি সরকার প্রস্তাবনার সেই আদর্শ অনুসরণ করছে না।’
সমাবেশ থেকে মোদিকে নিশানা করলেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন ‘ভারতবর্ষের সংবিধানকে আপনি সম্মান দেন না, সংবিধানকে বোঝার মতো ক্ষমতা আপনার নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষ দেশে কোনও ভেদাভেদ করা যায় না । মানুষের অধিকারকে কেড়ে নেওয়া যায় না। বাংলাদেশে বা পাকিস্তানে আপনি পাবেন না। বা আপনি ইরানে যান, ইরাকে যান, তাদের সংবিধানে সেকুলার কথাটা খুঁজে পাবেন না। কিন্তু ভারতবর্ষ এমন এক দেশ, তাকে দেখতে হলে সেকুলার। ভারতবর্ষের আইন, ভারতবর্ষের মানসিকতা, ভারতবর্ষের মানুষ সংবিধানকে মেনে চলবে। সংবিধানের প্রস্তাবনা হচ্ছে সংবিধানের চোখ। সংবিধানটা কী যদি বুঝতে হয়, তাহলে যে চোখ দিয়ে দেখতে হবে। সেই চোখটাই হচ্ছ প্রস্তাবনা। চোখকে বন্ধ করে অন্ধ হয়ে কখনও কোনও জিনিস দেখা যায় না। আজ যদি মোদীজি আপনি অন্ধ হয়ে যেতে চান, ভারতবর্ষের সংবিধানকে আপনি সম্মান দেন না, সংবিধানকে বোঝার মতো ক্ষমতা আপনার নেই’।
কল্যাণ বলেন, ‘ওয়াকফ কী? নিজের সম্পত্তি আল্লাহের কাছে সমপর্ণ করা। আমি যে মুহূর্তে সমপর্ণ করলাম, সেই সম্পত্তির মালিক আমি নই। সম্পত্তি মালিক হচ্ছে আল্লাহ। আইন একটা সিস্টেম তৈরি করে দিয়েছে, সেই সিস্টেমের মধ্যে এই আল্লাহর সম্পত্তিতে যাঁরা রয়েছেন, সে ওয়াকফ বোর্ড বলুন, ওয়াকফ কাউন্সিল বলুন, এবং সমস্ত ধর্মীয় মুসলিম তাঁরা দায়িত্ববদ্ধ আল্লাহর সম্পত্তি রক্ষা করতে। এই আল্লাহর সম্পত্তিকে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে কেন? সেটা কি সংবিধান সম্মত নাকি সংবিধান বর্হিভূত’?
তৃণমূলের আইনজীবী সাংসদের কথায়, ‘ভারতের সংবিধান ১২৬ ধারা বলছে, ধর্মীয় আচরণের স্বাধীনতা। একজন মুসলিমের অধিকার রয়েছে। তাহলে সেই সম্পত্তিতে যদি আঘাত দেওয়া হয়, সেই চিন্তাভাবনা, সেই বিল ভারতীয় সংবিধানের ১২৬ নম্বর ধারাকে লঙ্খন করে। ভারতবর্ষের বুকে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দিয়েছে সংবিধান। তাদের আঘাত করা যায় না। আমি হিন্দু হলেও আমার যদি মন্দির থাকে, আমার যদি জায়গা থাকে, আমার যদি ধর্মীয় আবেগ থাকে, সেই আবেগকে যেমন কেউ আঘাত দিতে পারে, তেমনি সংবিধান অনুযায়ী মুসলিম মানুষের ধর্মের আবেগকে নষ্ট করা যায় না’।
ওয়াকফ ইস্যুতে এবার কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম। কেন প্রমাণ দিতে হবে ভারত মাতার সন্তান ? তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে সভা থেকে এই প্রশ্নই তুললেন তিনি।
অন্যদিকে ফিরহাদ বাংলাদেশে সনাতনী নেতা চিন্ময়কৃষ্ণ দাস প্রভুর গ্রেফতারি ও সেখানকার সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের প্রসঙ্গেও টেনে আনেনতার বক্তৃতায়।
ফিরহাদ বলেন, “হ্যাঁ, বাংলাদেশে যেটা হচ্ছে সেটা অন্যায় হচ্ছে। বাংলাদেশে সংখ্যাগুরুদের দায়িত্ব সেখানকার সংখ্যালঘু ভাইয়েদের নিরাপত্তা দেওয়া। আর তেমনই ভারতের সংখ্যাগুরুদের দায়িত্ব, এখানকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা।
মন্ত্রী স্নেহাশীষ চক্রবর্তীও এদিন বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়ান, বক্তব্য রাখেন ওয়াকফ সংশোধনী বিল (২০২৪) বাতিলের পক্ষে। এদিনের সমাবেশের মুখ্য আয়োজক রাজ্য সংখ্যালঘু তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা ইটাহারের বিধায়ক মোশারফ হোসেন ওয়াকফ সংশোধনী বিলকে ষড়যন্ত্র বলে দাবী করে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য চলতি বছরের অগাস্টে সংসদের ওয়াকফ সংশোধনী বিল পেশ করেন কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু । কিন্তু বিলের বিভিন্ন ধারা নিয়ে আপত্তি তোলেন তৃণমূল-সহ বিরোধীরা । বিলটি এখন যৌথ সংসদীয় কমিটিতে। এদিকে ২৫ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে গিয়েছে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন। ৮ ডিসেম্বর লোকসভা পেশ করা হতে পারে ওয়াকফ সংশোধনী বিল । সঙ্গে যৌথ সংসদীয় কমিটির রিপোর্টও । সূত্রের খবর তেমনই ।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct