নিজস্ব প্রতিবেদক, ঝাড়গ্রাম, আপনজন: গত বছরের ১৬ আগস্ট ঝাড়গ্রামের এক নাবালিকা স্কুল যাওয়ার সময় নিখোঁজ হয়ে যায়, পরিবার-পরিজন সারাদিন খোঁজাখুঁজি করার পর না পেয়ে শেষমেষ ঝাড়গ্রাম থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। গত ১৭ই আগস্ট ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনাহা একটি সিট গঠন করেন যার মাথা হিসেবে তিনি নিজেই দায়িত্ব নেন, এবং এই কেসের তদন্তের ভার দেন ঝাড়গ্রাম থানার আইআইসি বিপ্লব কর্মকারকে। সিট গঠনের পরেই ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশ সুপার ও ঝাড়গ্রাম থানার আইসির তত্ত্বাবধানে ১৭ই আগস্ট খোঁজখবর নিয়ে দুজনের নাম বেরিয়ে আসে। তড়িঘড়ি দুপুরবেলায় কৌশিক সিংহ ওরফে (লাদেন) ও অজয় দাস নামে দুই ব্যক্তিকে পুরাতন ঝাড়গ্রাম থেকে গ্রেফতার করে ঝাড়গ্রাম থানার আইসি, এদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর “বাবর বেগ” নামে আরেক ব্যক্তির নাম উঠে আসে। ঝাড়গ্রাম থানার পুলিশ ধৃত “বাবর বেগকে” ঝাড়গ্রাম বিবেকানন্দ পল্লী থেকে গ্রেফতার করে। তিন অভিযুক্তকে একসাথে বসিয়ে ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনা ও ঝাড়গ্রাম থানার আইসি বিপ্লব কর্মকার জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলে এই কান্ডের মূল মাথা “পিংকি বিশাল” এর নাম জানা যায়। ১৮ আগস্ট পুরুলিয়া জেলার বলরামপুর থানার এলাকা থেকে পিংকি বিশাল কে গ্রেফতার করে ঝাড়গ্রাম থানার পুলিশ। সব শেষে এই ঘটনার ধৃত চারজনকে একত্রিতভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে পুরো রহস্য স্পষ্ট হয় ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশ সুপারের কাছে, সেই দিনই সন্ধ্যে নাগাদ ঝাড়গ্রাম রেল স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে পুলিশ নিখোঁজ নাবালিকাকে উদ্ধার করে। ১৯শে আগস্ট অভিযুক্ত কে ঝাড়গ্রাম ADJ-2 আদালতে পেশ করা হয়। ১৭ই সেপ্টেম্বর এই কেসের চার্জসিট জমা করেন ঝাড়গ্রাম থানার আইসি বিপ্লব কর্মকার, শেষমেস ১৬ জনের সাক্ষ্য প্রমাণের পরিপ্রেক্ষিতে ADJ-2 ঝাড়গ্রাম জেলা আদালত দশ মাসের মধ্যে এই কেসের সাজা ঘোষণা করলেন। নারী পাচার চক্রের মূল মাথা পিংকি বিশাল, কৌশিক সিংহ ওরফে (লাদেন), অজয় দাস ও বাবুর বেগকে কুড়ি বছরের কারাদণ্ড ঘোষণা করলো, এরই সাথে নাবালিকাকে ৩ লক্ষ টাকা সরকারি ক্ষতিপূরণ দেওয়া নির্দেশ দেন ঝাড়গ্রাম ADJ-2 আদালতের বিচারকের। এই কেসের সরকারি আইনজীবী কুনাল কান্তি ঘোষ জানান, এই কেসের মূল অভিযুক্ত পিংকি বিশাল ওই নাবালিকাকে ঝাড়গ্রাম থেকে অপহরণ করে বাইরে পাচার করার চক্রান্ত করে ছিলো। পাচার করার আগেই তাদের চক্রান্তকে ভেস্তে দেয় ঝাড়গ্রাম জেলার পুলিশ সুপার ও ঝাড়গ্রাম থানার আইসি। সঠিক সাক্ষ্য প্রমাণ এর ভিত্তিতে নাবালিকার পরিবার তার বিচার পেয়েছে। এই সাজা ঘোষণার পর ঝাড়গ্রাম জেলার পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনাহা ও ঝাড়গ্রাম থানার আইসি বিপ্লব কর্মকার কে সাধুবাদ জানিয়েছেন নাবালিকার পরিবার পরিজনরা।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct