সিরাজ সরদার: লিস্তিনে পুনরায় ব্যাপক নারকীয়তা শুরু করেছে ইসরাইল। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী হামাস প্রাচীন কালের যুদ্ধাস্ত্রগুলতি মারা বন্ধ করে হঠাৎ করে আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র তথা রকেট ও ড্রোন দিয়ে ইসরাইলে ব্যাপক আক্রমণ চালিয়েছে গত ৭ অক্টোবর। তাতে ৫ হাজার রকেট ও অনেক ড্রোন ব্যবহার করেছে তারা। একই সঙ্গে সেদিন অনেক হামাস যোদ্ধারা ইসরাইলের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে ভেতরে ঢুকে ব্যাপক হামলা করেছে। ইসরাইলও পাল্টা ভয়াবহ আক্রমণ শুরু করেছে। তিন লাখ সংরক্ষিত সামরিক সদস্যকে তলব, সীমান্ত জুড়ে ৩ লাখ সেনা মোতায়েন এবং ইউরোপ থেকে অনেক রিজার্ভ সেনা এনেছে। দেশটি ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে অবিরাম ব্যাপক আক্রমণ চালাচ্ছে। এ আক্রমণে ইসরাইল প্রায় ৫ লাখ সেনা মোতায়েন করেছে, এর মধ্যে গাজায় ৩.৭৩ লাখ। আক্রমণ থেকে শরণার্থী শিবির ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও রক্ষা পাচ্ছে না। এ আক্রমণে নিষিদ্ধ ঘোষিত সাদা ফসফরাস বোমা নিক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। গাজা পুরোপুরি বিধ্বস্ত ও মৃত্যুপুরিতে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘের মতে, গাজায় প্রায় এক লাখ লোক বাস্তুচ্যুৎ হয়েছে। ইসরাইল গাজায় পানি, বিদ্যুৎসহ সব কিছু সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। সেখানে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। পশ্চিম তীরেও মানুষ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। এ যুদ্ধে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত উভয় পক্ষের প্রায় ২ হাজার লোক প্রাণ হারিয়েছে। তন্মধ্যে হাজারের অধিক ইসরাইলি, ১১ জন মার্কিনি ও ১০ জন নেপালি রয়েছে। এছাড়া, উভয় পক্ষের কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছে। তন্মধ্যে অনেক মার্কিনিসহ বিভিন্ন দেশের বহু লোক আছে। গাজায় একই পরিবারের ১৯ জন সদস্য নিহত ও ৪ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছে। হামাসের ১৫শ’ সদস্যকে হত্যা করেছে বলে দাবি করেছে ইসরাইল। হামাসের হাতে ১৩০ জন ইসরাইলি সেনা ও সাধারণ মানুষ বন্দি হয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকজন মার্কিনি ও অন্য দেশের লোক রয়েছে। হামলা বন্ধ না হলে বন্দিদের হত্যা করার হুমকি দিয়েছে হামাস। এ হামলা সম্পর্কে কিছুই জানতে না পারার কারণে ইসরাইলের গোয়েন্দাদের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ উঠেছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হবে। মধ্যপ্রাচ্যেকে পাল্টে দেব বলেও হুঁশিয়ারি জানিয়েছেন তিনি। হামাসের এ আকস্মিক ও ভয়াবহ হামলায় ইসরাইলের শক্তিমত্তার বড়াই বড় রকমে ধাক্কা খেয়েছে। সাধারণ ইসরাইলিদের মধ্যে চরম আতংক সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে ঠাঁই নিয়েছে। গাজার পার্শ্ববর্তী শহরগুলো থেকে সব ইসরাইলিকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ইসরাইলের সাবেক গোয়েন্দা উপ-প্রধান বলেছেন, জিম্মিদের উদ্ধার করাই বড় চ্যালেঞ্জ। লেবাননের হিজবুল্লাহও ইসরাইলে হামলা চালিয়েছে। তাদেরও কিছু লোক নিহত-আহত হয়েছে। যুদ্ধের চতুর্থ দিনে পশ্চিম তীরে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক যুদ্ধ হয়েছে। ইসরাইলের এক কমান্ডার গাজা থেকে সব ফিলিস্তিনদের পালিয়ে মিশরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। মিশর সংশ্লিষ্ট সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। হামাসও ইসরাইলের একটি শহর থেকে সব বাসিন্দার সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। হামাসের প্রধান হানিয়ে বলেছেন, যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বন্দিদের বিষয়ে কোনো সমঝোতা হবে না। তবে সংগঠনের পলিট ব্যুরোর সদস্য মারযুক বলেছেন, হামাসের সামরিক কার্যক্রমের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে এবং এখন যে কোনো মধ্যস্থতা বা সংলাপের জন্য তারা প্রস্তুত। ইসরাইলের সাবেক এমপি আবু শাহাদেহ বলেছেন, উগ্র ডান ফ্যাসিস্টদের কারণে আমাদের জীবন এখন মহাবিপদে। এ যুদ্ধের কারণে ইসরাইলি মুদ্রা শেকেলের ব্যাপক দরপতন হয়েছে, যা গত ৮ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ইসরাইল-হামাসের চলতি যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে বিশ্বব্যাপীই। জ্বালানি তেলসহ অনেক পণ্যের মূল্য বেড়েছে। বহু দেশে অসংখ্য মানুষ ফিলিস্তিনদের পক্ষে বিক্ষোভ সমাবেশ করছে। মুসলিম দেশগুলোতে বিক্ষোভকারীদের প্রধান শ্লোগান হচ্ছে, ‘ইসরাইলের কালো হাত ভেঙ্গে দাও গুড়িয়ে দাও’। ‘বদরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার।’ ‘বিশ্ব মুসলিম ঐক্য গড়ো, ফিলিস্তিন স্বাধীন করো’। পশ্চিমা দেশগুলোতেও ইসরাইল ও ফিলিস্তিনদের পক্ষে বিপক্ষে ব্যাপক মিছিল-মিটিং হচ্ছে। রাশিয়া বলেছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সব চেয়ে নির্ভরযোগ্য সমাধান। ইইউ ফিলিস্তিনিদের সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে। আমেরিকা ইসরাইলের পক্ষে যুদ্ধাস্ত্র প্রেরণ করেছে। এ যুদ্ধে ইসরাইলকে সামরিক সহায়তা করার তীব্র নিন্দা করেছে রাশিয়া। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের বর্তমান পরিস্থিতিতে চীনা নাগরিকদের সেখানে না যাবার পরামর্শ দিয়েছে। ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরো ইসরাইলের বিরুদ্ধে গাজায় গণহত্যার অভিযোগ করে বলেছেন, ‘আমরা অতীতে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও নৃশংসতা প্রত্যক্ষ করেছি। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৪টি ছাত্র সংগঠনের জোট এক বিবৃতিতে চলমান সংঘাতের জন্য ইসরাইলকে দায়ী করে দেশটিকে একটি বর্ণবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। ইসরাইলিদের মনে রাখতে হবে, ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠি হয়ে চতুর্দিকে মুসলিম দেশগুলোর মাঝখানে শান্তিতে বাস করতে হলে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং মধ্যপ্রাচ্য সংকট নিরসনে তাদের আন্তরিক ও উদ্যোগী হতে হবে। নতুবা টিকে থাকা হবে কঠিন।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct