বিশেষ প্রতিবেদক, আপনজন: আজ কথা বলবো খুবই লাভজনক একটা মশার কয়েল তৈরির ব্যবসা নিয়ে। রাতে ঘুমানোর সময় যখন মশা কামড় দেয় তখনি মনে পড়ে যায় মশার কয়েলের কথা। মশারি টাঙ্গানোর পরেও মশার উপদ্রব কিন্তু কমে না। তাই, মশার কয়েলের কথা মনে পড়েই যায়। ভারত মশার অত্যাচার অনেক কমন। মশার এই অত্যাচার হতে বাঁচতে মশার কয়েলের ব্যবহার হয় অনেক। ভারতর মোট ১০০% মানুষের ৯০% মানুষই মশার কয়েল ব্যবহার করেন। আমাদের দেশে মশার কয়েলের চাহিদা প্রচুর হওয়াতে, মশার কয়েল তৈরির ব্যবসা খুবই লাভজনক। আপনার যদি এই ব্যবসায় করার মতো মূলধন থাকে। তাহলে, আমি বলবো এটা আপনার জন্য বেস্ট অপশন। খুব তাড়াতাড়িই এই ব্যবসায়ের মাধ্যমে আপনি প্রচুর মুনাফা অর্জন করতে পারবেন।
ধাপ ১: পরিকল্পনা ও রিসার্চ
মশার কয়েল তৈরির ব্যবসা শুরু করার আগে রিসার্চ করুন, কিছু কারখানা দেখুন কীভাবে কাজ করছে তারা। পরিচিত কেউ থাকলে, মশার কয়েলের ব্যবসায় তার কাছ হতে জানুন। কীভাবে শুরু করলে কম মূলধনে সাশ্রয়ী-ভাবে দক্ষ হাতে মশার কয়েলের ব্যবসায় শুরু করতে পারবেন। কোনও ভাবে অবৈধভাবে ব্যবসায় করার চেষ্টা করবেন না। অনেকেই বর্তমানে এ ব্যবসায় করে লাখ লাখ টাকার ডিল করে ইনকাম করছেন। আমি আপনার মশার কয়েলের ব্যবসায় শুরু করার প্রথমের দিকের কিছু দরকারি টপিক নিয়ে আলোচনা করবো। আশা করি আপনার এতে বুঝতে সুবিধা হবে।
ধাপ ২: মূলধন সংগ্রহ
ব্যবসা শুরুর আগে মূলধন সংগ্রহ করতে হবে। আপনার নিকট কি পরিমান মূলধন আছে সেটার উপর নির্ভর করে বাজেট করতে হবে। আপাতত ধরে নেই আপনার, পর্যপ্ত মূলধন রয়েছে। সুতরাং, পরের ধাপে আমরা আলোচনা করবো, বাজেট করা নিয়ে।
ধাপ ৩: বাজেট করা
মশার কয়েল তৈরির ব্যবসা করার মেশিন
মশার কয়েলের ব্যবসায়ের অটো মেশিন সর্বনিম্ন ৪০ লক্ষ – ৭০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত এর মধ্যে পেয়ে যাবেন। এছাড়া কিছু কয়েল মেশিনের দাম:
৪ পাঞ্চ মেশিন (১২ লক্ষ টাকা),৭ পাঞ্চ মেশিন (১৮ লক্ষ টাকা),২১ পাঞ্চ মেশিন (৬৫ লক্ষ টাকা),১২ পাঞ্চ মেশিন (৩২ লক্ষ টাকা) এই মেশিনগুলোর বিভিন্ন পার্ট রয়েছে যা আলাদাভাবে কিনে নিতে হবে অবশ্যই তা না হলে কাজ করতে পারবেন না।
পার্টস গুলো হলও: ৬০ কেজি মিক্সচার মেশিন,একটি পাঞ্চ কাটিং মেশিন যার কেপাসিটি ঘণ্টায় ২ হাজার ক্যাপাসিটি হতে হবে,দুই মডেলের দুই সেট কয়েল ডাইস গ্যারান্টিসহ,তিন সেট কয়েল কাটিং পাঞ্চ মেশিন (৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা সর্বনিম্ন),হাইপ্রেসার কুণ্ডলী লেয়ার তৈরির মেশিন কনভেয়ারসহ এসব মেশিন মশার কয়েল তৈরির জন্য আবশ্যিক। তারপর সেগুলো আপনার মশার কয়েলের কারখানায় বসাতে হবে। তার জন্য কারখানায় ইঞ্জিনিয়ার, ইলেক্ট্রনিকস এবং কিছু শ্রমিকের প্রয়োজন পড়বে আপনার। মশার কয়েল বানানোর কারখানা, মেশিন, শ্রমিক সব ঠিক করা হয় গেলে। যে কোনও ব্যবসায় চালু করতে হলে অবশ্যই সরকারি অনুমোদন দরকার হবে।
ধাপ ৪: প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র
মশার কয়েল তৈরির ব্যবসা করতে হলে অবশ্যই কিছু কাগজ পত্র থাকতে হবে। এছাড়া সরকারি অনুমদনেরজন্য এপ্লাই করতেও কিছু কাগজপত্রের প্রয়োজন হবে। যাইহোক যেসব কাগজপত্র লাগবে:
ট্রেড লাইসেন্স:
ট্রেডমার্ক: যেহেতু আপনার কয়েলটি নিজের ব্রান্ড ও লোগে বাজারজাত করবেন, সেজন্য লোগোটি ট্রেড মার্ক করে নিতে হবে।
জিএসটি সার্টিফিকেট: একক মালিকানা হলে, নিজের নামে সার্টিফিকেট হলেই হবে। আর এক মালিকানা না হলে, ব্যবসায়ের নামে ট্রেড লাইসেন্স থাকতে হবে। উপরের ৫টি লাইসেন্স ছাড়া আপনি মশার কয়েল তৈরির ব্যবসা শুরু করতে পারবেন না। এছাড়া কারখানার জন্য নিচের কাগজপত্র থাকাটা ভাল।ফায়ার লাইসেন্স,কারখানার লে আউট,প্রসেস ফ্লোর্চাট,পরিবেশের ছাড় পত্র,আয়কর প্রত্যয়ন পত্র,পরিবেশগত অনাপত্তি সনদপত্র কৃষি সম্প্রসারণ কর্তৃক প্রদত্ত সনদপত্র সরকার যদি মনে করেন আপনার কাছ থেকে আরও কাগজ ও লাইসেন্স লাগবে তাহলে সেগুলো আপনাকে অবশ্যই জমা দিতে হবে অনুমোদন পেতে হলে সরকার থেকে।
ধাপ ৫: উৎপাদন
কারখানা ভাড়া, মেশিন বসানো সবতো হলও এবার সরকারি অনুমোদন পাওয়ার পর স্টেপ হবে, আপনার কারখানা চালু করতে হবে। মশার কয়েল তৈরির কারখানাটির ব্যবসায় শুরু করতে আপনাকে কয়েল তৈরির কাঁচামাল এবং কেমিক্যাল এর প্রয়োজন পড়ব। যা আপনার আমদানি করতে হবে। বিভিন্ন রকমের গাছ,নারিকেল এর ছোলা,বালু ইত্যাদির প্রয়োজন পড়ে থাকে।
তাছাড়া বিভিন্ন রকমের কেমিক্যাল এরও প্রয়োজন আছে কয়েল বানাতে যেমন:
পাইরেথ্রাম,এমজিকে এন,বি এইচটি (বাটলেটেড হাইড্রোক্সিটোলিউইন ),ডাইমফ্লথ্রিম,এমবিথোথ্রিন,পাইথ্রেয়েড,ম্যাফ্লুথ্রিন,পাইপারনিল বাটক্রাইড,এমজিকে ২৬৪ এন,অ্যালেথ্রিন এসব কাঁচামালের কাজ একেক রকম মশার কয়েল বানাতে।
নিচে কিছু কেমিক্যাল বা কাঁচামাল সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরলাম: ক্যামিকেল মশার কয়েল তৈরির ব্যবসায়ের ক্যামিকেল
পাইরেথ্রাম: এটি কসিনিয়াম নামের গাছের একধরনের গুড়া। তবে গুড়াটি বা পাইরেথ্রাম গাছটির ফুল হতে তৈরি হয়। এ ফুলগুলো দেখতে খুবই সুন্দর হয়ে থাকে।
এমজিকে ২৬৪ এন: এই উপাদানটি .পাইথ্রেয়েডকে আরও উন্নত ও কড়া করতে ব্যবহার করা হয়।
ডাইমফ্লথ্রিম: এটি এক ধরনের কীটনাশক। যা মশার কয়েল তৈরির সবথেকে প্রয়োজনীয় উপাদান। এটি ছাড়া মশার কয়েল বানানো সম্ভবই না। এই কেমিক্যাল গুলো লাগবে আপনার মশার কয়েল বানাতে। আপনাকে অবশ্যই ভালো দক্ষ, প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কারিগর বা শ্রমিক দিয়ে মশার কয়েল গুলো বানাতে হবে। যাতে কয়েল বানানোর সময় কেমিক্যাল কম বা বেশি ব্যবহার করে না ফেলে। কেমিক্যাল কয়েলে বেশি পরলে মানুষের অনেক রকমের ক্ষতি হতে পারে। এতে মানুষের যেমন ক্ষতি, আপনার ব্যবসায়ও ডুবে যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশী। আবার যদি কম কেমিক্যাল পরে তাহলে মশার কয়েল দিয়ে কোনও কাজ হবে না আর আপনার কারখানা থেকে কেউ মশার কয়েল কিনবে না। সে জন্য আপনার ফ্যাক্টরিতে কয়েকজন দক্ষ কারিগরের খুবই প্রয়োজন।
ধাপ ৬: পণ্য বিক্রি
ব্যবসায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ এটি এই ধাপে আপনাকে আপনার মশার কয়েলগুলো বিক্রি করতে হবে। মাথায় রাখবেন, আপনার সবচেয়ে বড় কাস্টমার কিন্তু গ্রাম সাইডে।
গ্রামের দিকে বিক্রি বৃদ্ধি করার জন্য যা করতে হবে: দোকানদারদের কমশিনের পরিমাণ বেশী দিতে হবে। পণ্যেল সাপ্লাই বাড়াতে হবে। প্রতিটি দোকানের সামনে ও বাজারে আপনার কয়েলের ব্যানার ও পোস্টার লাগাতে হবে। মার্কেটিং যত সম্ভব বেশী বেশী করতে হবে।
পরিশেষে: এই ছিল আজকে মশার কয়েল তৈরির ব্যবসা নিয়ে লেখা। মনে রাখবেন কেউই এক লাফে উপরে উঠে যায় না। প্রথমে হয়তো আপনার অতো লাভ হবে না কিন্তু পরে অনেক মুনাফা অর্জন করতে পারবেন। ব্যবসায় করার ইচ্ছা আছে কিন্তু ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা, সাহস নেই তাহলে ব্যবসায় আপনার জন্য না। ব্যবসায় মানে ঝুঁকি গ্রহণের ক্ষমতা। যে যতো বেশী ঝুঁকি নিতে পারে তার ততো লাভ হয়।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct