ফোনটা কেটে গেলো
শিবশঙ্কর দাস
রিংটোন বাজতে না বাজতেই ফোনটা রিসিভড হয়ে গেল। সুমিতা যেই বলল, “হ্যালো... “অমনি ওপার থেকে ভেসে এল, “আরে, কী সৌভাগ্য আমার। আমি তোমার ফোনের জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। আমি জানতাম তোমার ফোন আসবে।…” “হ্যালো হ্যালো। …”“দেখেছো আমি যেই তোমার কথা ভাবি অমনি তোমার ফোন চলে আসে। কী যে খুশি হয়েছি সে আর তোমাকে বোঝাতে পারবো না। ইউ..ম্মা, ইউ..ম্মা..”“হ্যালো? হ্যালো? আগে আমার কথাটা একটু শুনুন…”“পরে তোমার কথা শুনবো। বল তুমি কী চাও? তোমার জন্য আমি দারুণ একটা জিনিস এনেছি। তুমি যখন বলবে তখনই নিয়ে যাবো? ইউ..ম্মা, ইউ..ম্মা..”সুমিতা বুঝতে পারল লোকটা ফোনের মধ্যৈই কাঙ্খিত মহিলাকে এখনও চুমু খাচ্ছে। রাগে সুমিতার কান গরম হয়ে উঠল। লোকটা পাগল নাকি। কে ফোন করেছে তা না জেনেই চুমু খাওয়ার জন্য হামলে পড়ছে। তবু রাগলে চলবে না। কাজের লোকের ভীষণ অভাব। অনেক কষ্টে বকুলকে জোগাড় করা গেছে। একদিন আসে তো দুদিন শরীর খারাপের অজুহাত দেয়। তবু সুমিতা বকুলকে ছাড়ানোর কথা ভাবতে পারে না। রান্না বান্না সেরে প্রতিদিনই স্কুল যেতে দেরি হয়ে যায়। বকুল থাকাতে একটু সাহায্য অন্তত হয়। তবু দুদিন ধরে আসছে না শরীর খারাপ বলেছে। আর আগামী কাল আসতে পারবে কিনা জানার জন্যই সুমিতা ফোনটা করেছিল । বকুলের নিজের কোন ফোন নেই। ওর বরের ফোনেই ফোন করে খবর নিতে হয়। বকুল কাজটা ছেড়ে দিলে এই মুহূর্তে সুমিতা অথৈ জলে পড়বে ভেবেই মিষ্টি করে বলল, “দাদা, আপনি যাকে ভাবছেন আমি সে নই। আমি সেই দিদিমণি বকুল যার বাড়িতে কাজ করে । বকুলের শরীর এখন কেমন আছে। কালকে আসতে পারবে কিনা জানতে চাইছিলাম। ফোনটা কেটে গেল। সুমিতার মাথায় বাজ ভেঙে পড়ল। ফোনটা কেটে গেল নাকি কেটে দিল? লোকটা কি লজ্জা পেলো নাকি ভয়! সুমিতা আবার চেষ্টা করল। ফোনটা আবার কেটে গেলো।বারদুই চেষ্টা করার পর সুমিতা বুঝতে পারল বকুলের শরীর আর সুস্থ হবে না।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct