আপনজন ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতিকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী চলমান উত্তেজনার মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কানাডার নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির মধ্যে মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বৈঠকে ‘কানাডা বিক্রির জন্য নয়’ এবং ‘কখনো বিক্রি হবে না’—সরাসরি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মুখের ওপর মন্তব্য করেছেন কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী কার্নি। গত সপ্তাহে কানাডার নির্বাচনের পর এটি কার্নির প্রথম হোয়াইট হাউস সফর।
দুই দেশের সম্পর্কে ঐতিহাসিক অবনতি, অর্থনৈতিক টানাপোড়েন এবং সম্পর্ক পুনর্গঠনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনার মধ্যেই ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যকার সীমান্তকে ‘কৃত্রিম’ বলে উল্লেখ করেন। পাশাপাশি তিনি কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হওয়ার সম্ভাব্য সুবিধাগুলো কার্নির সামনে তুলে ধরেন। ট্রাম্প দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যুক্ত হলে কানাডার জন্য অনেক সুবিধা আসবে। এর আগেও তিনি কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন এবং এ বিষয়ে একাধিকবার তার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
জবাবে কার্নি বলেন, ‘যেমন আপনি আবাসন ব্যবসা সম্পর্কে জানেন, কিছু জায়গা থাকে যা কখনো বিক্রির জন্য নয়। তেমনি, কানাডাও বিক্রির জন্য নয় এবং কখনো হবে না।’ তবে ট্রাম্প কার্নির এই মন্তব্যকে নাকচ করে দিয়ে বলেন, ‘কখনো এই কথা বলবেন না যে কখনোই হবে না। সময় বলে দেবে।’
বৈঠক কতটা ফলপ্রসূ হয়েছে—এই প্রশ্নের জবাবে কার্নি সতর্কভাবে বলেন, ‘আমাদের আরও অনেক কাজ বাকি। আমি এটা বলতে চাই না যে একটি বৈঠকে সবকিছু বদলে যাবে, তবে এখন আমরা একত্রে কাজ শুরু করেছি।’
এই বৈঠকের প্রাক্কালে ট্রাম্প নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ কানাডার ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি দেশটিকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের ঘাড়ে চড়ে চলা’ দেশ বলে উল্লেখ করেন। এর কিছুক্ষণ পরই তিনি ওয়েস্ট উইংয়ের বাইরে কার্নিকে স্বাগত জানান।
ট্রাম্প লেখেন, ‘আমেরিকা প্রতিবছর কানাডাকে ২০০ কোটি ডলারের ভর্তুকি দিচ্ছে, সঙ্গে দিচ্ছে বিনামূল্যে সামরিক সুরক্ষা এবং আরও অনেক কিছু। আমাদের তাদের কিছু দরকার নেই, শুধু বন্ধুত্ব ছাড়া, যেটি আশা করি সবসময় থাকবে। প্রধানমন্ত্রী কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছেন, সম্ভবত ওটাই আমার একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন থাকবে।’
অন্যদিকে, নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্পবিরোধী অবস্থান নেওয়া কার্নি সফর শুরুর সময় ‘এক্স’-এ লেখেন, ন্যাটোভুক্ত কানাডার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ধরনে বড় ধরনের রূপান্তর ঘটবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের পুরনো সম্পর্ক যেখানে ক্রমেই একীভূত হচ্ছিল, তা শেষ। এখন প্রশ্ন, আগামীতে দুই দেশ কীভাবে সহযোগিতা করবে।’ ট্রাম্পের আরোপিত শুল্ক বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি সর্বোত্তম চুক্তির জন্য লড়াই করব।’
এর আগে, ৬০ বছর বয়সী লিবারেল নেতা কার্নি নির্বাচনের সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তিনি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কানাডার স্বার্থ রক্ষা করবেন। তিনি বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আমাদের কখনোই নিজের করে নিতে পারবে না’ এবং হুঁশিয়ার করেছিলেন যে, দুই দেশের সম্পর্ক আর কখনো আগের মতো হবে না।
উল্লেখ্য, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকোর মধ্যে একটি মুক্ত-বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, অন্যান্য দেশের পাশাপাশি কানাডীয় পণ্যের ওপরও ২৫ শতাংশ এবং ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করেছে, যা মুক্ত-বাণিজ্য চুক্তির আওতাভুক্ত নয়। চীন ছাড়া কানাডা একমাত্র দেশ, যেটি প্রত্যুত্তরে মার্কিন পণ্যের ওপর নিজস্ব শুল্ক আরোপ করে প্রতিশোধ নিয়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct