পাশারুল আলম , গোয়ালপোখর, আপনজন: রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বাংলার রাজনীতির এক নিবেদিতপ্রাণ কর্মী, বামপন্থী রাজনীতির অভিজ্ঞ নেতা এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কংগ্রেস কমিটির সহ-সভাপতি হাফিজ আলম সাইরানি (৬৪) ইন্তেকাল করলেন। সোমবার বেলা ১-৩০ নাগাদ কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) তার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছিলেন। ১৯৬০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করা সাইরানি তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্তেই যে আন্তরিকতা ও ত্যাগের পরিচয় দিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার তার মরদেহ কলকাতায় রাখা হবে। বুধবার ৩০ অক্টোবর সকাল দশটায় তার নিজ গ্রামের বাড়িতে জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। গ্রামের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। তিনি ছিলেন সূর্যাপুরী জনজাতির এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।হাফিজ আলম সাইরানীর জন্ম উত্তর দিনাজপুরের বিনারদহ গ্রামে, একটি সূর্যাপুরী বাঙালি মুসলিম পরিবারে। তাঁর বাবা ছিলেন সেই অঞ্চলের একজন সুপরিচিত জমিদার। সাইরানীর রাজনৈতিক আগ্রহ এবং সামাজিক দায়িত্ববোধ তাঁর পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে উদ্ভূত। তার বড় ভাই, রমজান আলী, একজন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ এবং প্রাক্তন বিধায়ক, যিনি তাকে রাজনীতির পথে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। শৈশব থেকেই মেধাবী সাইরানী শিক্ষার প্রতি ছিলেন আগ্রহী। চাকুলিয়া হাইস্কুলে পড়াশোনা শেষ করে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীকালে, মালদা বি.এড কলেজ থেকে বিএড ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৯৬ সালে সাইরানী প্রথমবারের মতো গোয়ালপোখর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হন। সেসময় ৩৮৯১৫ ভোটে জিতেছিলেন। এই নির্বাচনে তাঁর অর্জিত সফলতা তাঁকে উত্তর দিনাজপুর জেলার দায়িত্ব পালনে অগ্রণী ভূমিকা পালনে সহায়তা করে। ২০০১ সালেও গোয়ালপোখর কেন্দ্র থেকে তিনি তিনি জেনে ৪৭, ৯৯৯ ভোটে। তাঁর ভালো ভাবমূর্তি এবং মানুষের প্রতি আন্তরিকতা তাঁকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ত্রাণ ও সমবায় বিভাগের মন্ত্রিত্বে উন্নীত করে। বামফ্রন্ট সরকারের কার্যক্রম পরিচালনায় তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত।
সাইরানি বামফ্রন্ট এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সেক্রেটারি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে দীর্ঘদিনের সহযোগিতা সত্ত্বেও ২০২২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি অল ইন্ডিয়া ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে পদত্যাগ করেন এবং ৩ নভেম্বর ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন। তাঁর এই সিদ্ধান্ত ছিল তাঁর রাজনৈতিক জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য মোড়।
সাইরানির ব্যক্তিত্বে ছিল এক আন্তরিকতা ও দৃঢ়তার মিশ্রণ, যা তাকে একজন আদর্শ নেতায় পরিণত করেছিল। তার কাছাকাছি থাকা সহকর্মী এবং ছাত্রদের প্রতি ছিল তাঁর স্নেহ ও সহানুভূতি। একজন শিক্ষক হিসেবে যেমন তিনি ছাত্রদের মাঝে প্রিয় ছিলেন, তেমনি একজন রাজনৈতিক নেতাও তিনি ছিলেন জনহিতৈষী। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তান রেখে যান।
হাফিজ আলম সাইরানির প্রস্থান তাঁর রাজনৈতিক সহযোগীদের জন্য গভীর বেদনার কারণ। তাঁর চলে যাওয়ায় বাংলা রাজনীতি একজন প্রকৃত সমাজকর্মী ও নেতাকে হারালো। তাঁর কাজ এবং ত্যাগ চিরকাল মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকবে।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct