এম মেহেদী সানি , কলকাতা, আপনজন: শুক্রবার কলকাতা নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রথম উড়ানে ৩২১ জন পুরুষ ও মহিলা পবিত্র হজের উদ্দেশ্যে কাবা অভিমুখে রওনা হলেন । এ দিন বিকালে আরও একটি উড়ানে ৩২১ জন পুরুষ ও মহিলা পবিত্র হজের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেন। বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন হজ কমিটির চেয়ারম্যান সাংসদ খলিলুর রহমান, রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সংখ্যালঘু দপ্তরের প্রধান সচিব আইএএস পিবি সেলিম, শাকিল আহমেদ, রাজ্য হজ কমিটির কার্যনির্বাহী আধিকারিক মুহাম্মদ নকি, পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকী, এম নূরুল ইসলাম সহ বিশিষ্টজনেরা । তবে এ বছর গত প্রায় দশকের রীতি অনুযায়ী বিমান ওড়ার মুহূর্তে উড়লো না সবুজ পতাকা। অন্যান্য বারের মতো এ বছর বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকা রাজ্যের বিশিষ্ট কর্মকর্তারা বিমানের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারেননি। কেন্দ্রের কড়া নিরাপত্তা বলয়ে আটকে যান তাঁরা। ফলে অন্যান্য বারের মতো বিমানের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে সবুজ পতাকা ওড়ানো তো দূর, বিমান ওড়ার মুহূর্তে হাত নাড়িয়ে বিদায় জানানো গেল না হবু হাজীদের।
ইসলামের পঞ্চস্তম্ভ হজ ঘিরে ধর্মপ্রাণ ইসলাম ধর্মালম্বী মানুষের উৎসাহ উদ্দীপনা তুলনামূলক অনেকটাই বেশি থাকে। শুক্রবার কাবার উদ্দেশ্যে পাড়ি দেবে হবু হাজিরা। নিয়ম অনুযায়ী বুধবার-বৃহস্পতিবার থেকেই হজযাত্রীরা নিউ টাউনের মদিনাতুল হুজ্জাজে আসতে শুরু করেন । শুক্রবার সকালে মদিনাতুল হুজ্জাজ থেকে হজযাত্রীদের সরকারি ব্যবস্থাপনায় শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত বাসে করে বিমানবন্দরের পৌঁছে দেওয়া হয় । মদিনাতুল হুজ্জাজ থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত কলকাতার রাজপথের দু’ধারে ব্যানারে ব্যানারে সেজে উঠেছে মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছা বার্তায়। রাজ্য হজ কমিটির পক্ষ থেকেও লাগানো হয়েছে শুভেচ্ছা বার্তার ব্যানার এবং পথনির্দেশিকা। এ দিন মদিনাতুল হুজ্জাজে উৎসবের মেজাজ লক্ষ্য করা গেলেও বিমানবন্দর চত্বরে ছিল কড়া নিরাপত্তার মোড়কে ।
মদিনাতুল হুজ্জাজ চত্বরে উৎসবের পরিবেশে পরিণত করা হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত অস্থায়ী তাবু। সর্বত্রই মুখরিত ছিল ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে। মদিনাতুল হুজ্জাজ থেকে হজযাত্রীদের বিদায় জানাতে পরিবারের তরফ থেকে উপস্থিত হয়েছিলেন অনেকেই, সেসময় দেখা যায় কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েছেন কেউবা আবার মঙ্গল কামনায় হাত তুলে দোয়া করছেন আল্লাহর কাছে। শুক্রবার প্রথম ফ্লাইট হওয়ায় হজযাত্রী এবং তাদের আত্মীয় পরিজনদের জুম্মার নামাজের জন্য মদিনাতুল হুজ্জাজ চত্বরে তিনটি স্থানে পবিত্র জুম্মার নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য হজ কমিটি। লক্ষ্য করা যায় তিনটি স্থানেই মুসল্লিদের উপচে পড়া ভিড় । হজযাত্রী এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে জুম্মার নামাজ আদায় করেন হজ কমিটির চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান, সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের প্রধান সচিব পিবি সালিম, সংখ্যালঘু দফতরের কমিশনার শাকিল আহমেদ, স্পেশাল অফিসার ওবায়দুর রহমান, রাজ্যের সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান, এনাউর রহমান, মোদাসসার মোল্লা, সাহিদ আলম, মুহাম্মদ নকী, একে এম ফারহাদ-সহ অন্যান্যরা ।
শুক্রবার হাজীদের প্রথম উড়ান ছিল ১১.১৫ মিনিটে, বিমানবন্দরে হজযাত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম । ফেরার সময় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ফিরহাদ বলেন, ‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর নেতৃত্বে গত কয়েক বছর ধরে হজ পরিষেবা প্রদান করা হচ্ছে । তিনি বাংলার হজ যাত্রীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। পরিষেবা প্রদানে যাতে কোনও ঘাটতি না থাকে সে ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ।’ হবু হাজীদের কাছে ফিরহাদ হাকিম আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা যেন হজ পাকে গিয়ে মহান আল্লাহর কাছে পশ্চিমবঙ্গের জন্য এবং ভারতবর্ষের জন্য, ভারতবর্ষের একতার জন্য, ভারতবর্ষের ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া চান।
প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাজ্যের হজ যাত্রীদের যাবতীয় অভাব-অভিযোগের দ্রুত সমাধানের লক্ষ্যে হজ গ্রিভ্যান্স অ্যাপ চালু করা হয়েছে বলে জানান রাজ্য হজ কমিটির চেয়ারম্যান সাংসদ খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, এই অ্যাপের মাধ্যমে হজযাত্রীরা তাঁদের যাবতীয় সমস্যার কথা হজ কমিটির কর্তাদের জানাতে পারবেন । হজ যাত্রীদের সুবিধার্থে প্রথম দিনে দুটি উড়ানে চারজন স্টেট হজ ইন্সপেক্টর (খাদিমুল হুজ্জাজ) পাঠানো হয়েছে বলে জানান খলিলুর রহমান।
রাজ্য হজ কমিটির কার্য নির্বাহী আধিকারিক মুহাম্মদ নকি জানান, এবছর কলকাতা বিমান বন্দর থেকে প্রায় ৮ হাজার ৫০০ জন হজে যাবেন । তার মধ্যে বাংলার রয়েছেন প্রায় ৫ হাজার জন । অসম থেকে ৭৬৫ জন, ওড়িশা থেকে ২৮৬ জন, ত্রিপুরা থেকে ৪৩ জন, অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে ২ জন, বিহার থেকে ৯৪১ জন, ছত্রিশগড় থেকে ২ জন, দিল্লি থেকে ২ জন, ঝাড়খন্ড থেকে ১১৩৩ জন, মহারাষ্ট্র থেকে ২ জন, মনিপুর থেকে ৪৫৯ জন যাবেন । প্রথম দিনে দুটি ফ্লাইটে ৬৫২ জন হজযাত্রী রওনা দিলেন। শেষ উড়ান রওনা দেবে আগামী ২৯ মে। তবে প্রশ্ন উঠছে খাদিমুল হুজ্জাজ পাঠানো নিয়ে। সূত্রে জানা গিয়েছে এ বছর মোট ২৫ জন খাদিমুল হুজ্জাজ হজ যাত্রীদের সঙ্গে যাবেন। যদিও সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ১৫০ জন প্রতি একজন স্টেট হজ ইন্সপেক্টর থাকেন।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct