সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: মাওবাদী ঘুঁটি অচল হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুশাসনে। হাজারো চেষ্টা করেও, ভুয়ো লিফলেট ছড়িয়ে, খুনের হুমকি-ধমকি দিয়েও জঙ্গলমহলের বুকে আর মাওবাদীদের ফেরাতে পারেনি গেরুয়া ব্রিগেড। উনিশের ভোটে ভুয়ো প্রতিশ্রুতি দিয়ে জঙ্গলমহলের ৫টি লোকসভা কেন্দ্রেই জয়ের মুখ দেখেছিল পদ্মপার্টি। কিন্তু বাস্তব বুঝতে অসুবিধা হয়নি সেখানকার বাসিন্দাদের। তাই একুশের ভোটে তাঁরা আর ভুল করেননি। গেরুয়া ব্রিগেডকে দূরে সরিয়ে রেখে বাংলার মেয়েকেই কাছে টেনে নিয়েছিলেন জঙ্গলমহলের জনতা। কিন্তু সেই জঙ্গলমহলকেই এবার অচল ও অশান্ত করার ছক কষছে গেরুয়া ব্রিগেড। আর এই খেলায় তাঁদের ঘুঁটি হয়ে উঠেছে ‘কুড়মি সমাজ পশ্চিমবঙ্গ’ নামের একটি সংগঠন।
এদেরকে রেল ও জাতীয় সড়ক বাদ দিয়ে জঙ্গলমহলের সব রাস্তা অবরোধ কর্মসূচিতে নামাচ্ছে গেরুয়া বাহিনী। কার্যত ফেব্রুয়ারি মাসের ১৩-১৪ তারিখ থেকেই সেই অবরোধ কর্মসূচিতে নামছে এই সংগঠনটি। আর কুড়মিদের এই সংগঠনের কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে ‘খেমাশুলি পার্ট-২’। কুড়মিদের আদিবাসী তালিকাভুক্তি-সহ বিভিন্ন দাবিতে গত বছর পুজোর আগে খড়গপুরের খেমাশুলিতে কেন্দ্র সরকারের অধীনে থাকা রেলপথ আর জাতীয় সড়ক টানা পাঁচদিন অবরোধ করেছিল কুড়মিদের একাধিক সংগঠন। তবে এবার রেল বা জাতীয় সড়ক অবরোধ নয়, বরং রাজ্যের বিভিন্ন সড়ক আটকে হবে দাবি আদায়ের এই আন্দোলন। কুড়মি সমাজ পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সভাপতি রাজেশ মাহাতো এই বিষয়ে জানিয়েছেন, ‘গত বছর যখন আমরা খেমাশুলিতে আন্দোলন করেছিলাম তখন রাজ্য সরকার আমাদের আশ্বাস দিয়েছিল কুড়মিদের আদিবাসী তালিকা ভুক্তির স্বপক্ষে রাজ্য সরকারের তরফে কেন্দ্র সরকারের কাছে তিন মাসের মধ্যে সংশোধিত সিআরআই রিপোর্ট পাঠানো হবে। কিন্তু চার মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও সেই রিপোর্ট কেন্দ্রের কাছে জমা পড়েনি। তাই এবার রাজ্যকে ১৫ দিনের চরমসীমা বেঁধে দিয়ে আমরা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। ২৮ জানুয়ারি পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনির চকতারিণী এলাকায় আমাদের সংগঠনের রাজ্য কমিটির এক সাংগঠনিক সভায় আমরা এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পনেরো দিন অপেক্ষার পর ১৬ তম দিনে আন্দোলনের দিন ঘোষণা করা হবে। রাজ্য কমিটির সদস্যদের সহমতের ভিত্তিতে এবার রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধেই আন্দোলন হবে।’ আর এখানেই সন্দেহ এই কুড়মি সংগঠনের পিছনে গেরুয়া বাহিনীর পূর্ণ মদত আছে। সেই জন্যই তাঁরা রেল ও জাতীয় সড়ক ছেড়ে জঙ্গলমহলের রাজ্য সড়কগুলি অবরোধ করার তাল ঠুকছে। গত বছরের আন্দোলনে এই কুড়মি সংগঠনটি ছাড়াও ছিল ছোটনাগপুর টোটেমিক কুড়মি নামের একটি সংগঠন। এরা দুইজনে মিলে কুরমি মাহাতো সমাজ’ নামে একটি মঞ্চ গঠন করে ২০-২৪ সেপ্টেম্বর খেমাশুলিতে রেল ও জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছিল। তার জেরে দূরপাল্লার ট্রেন পরিষেবা নিদারুণ ভাবে ব্যাপত হয়। যার জেরে মুখ পোড়ে কেন্দ্র সরকারের। কিন্তু এবারের আন্দোলনের রূপরেখা কার্যত বলে দিচ্ছে এই দুই সংগঠনের সঙ্গেই গেরুয়া শিবিরের বোঝাপড়া হয়ে গিয়েছে। তাই রেল ও জাতীয় সড়ক অবরোধ না করে এবার তাঁরা রাজ্য সড়ক ও জেলা সড়কগুলি অবরোধ করার তাল ঠুকছে। অর্থাৎ আন্দোলন হবে সম্পূর্ণ ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে। যেহেতু সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন ও বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন তাই এই কুড়মি সমাজকে মাঠে নামিয়ে জঙ্গলমহলকে ফের অশান্ত করে তোলার ছক কষছে গেরুয়া শিবির, এমনটাই মনে করছেন রাজ্যের আধিকারিকেরা। যদিও কুড়মিদের এই দাবিদাওয়া ও আন্দোলন নিয়ে রাজ্যের বনদফতরের প্রতিমন্ত্রী তথা ঝাড়গ্রামের তৃণমূল বিধায়ক বিরবাহা হাঁসদা জানিয়েছেন, ‘সিআরআই রিপোর্ট কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল। আদিবাসীদের সারনা ধর্মের কোড চালুর জন্যও বিধানসভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেটা নিয়ে তো কেন্দ্রের তরফে উচ্চবাচ্য নেই। কুড়মিদের দাবির প্রতি রাজ্য সরকার বরাবরই সহানুভূতিশীল। ওরা এখন এই বিষয় নিয়ে ভোটের রাজনীতি করছে।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct