আপনজন ডেস্ক: শনিবার উত্তরপ্রদেশে আলিগড়ে গোমাংস বহন করার সন্দেহে বজরং দল ও গোরক্ষা বাহিনীর আক্রমণে চারজন গুরুতর জখম হলেন। জানা গিয়েছে, আলিগড়ের আত্রাউলি শহরের বাসিন্দা আরবাজ, আকিল, কাদিম ও মুন্না খান। হামলার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিকবার শেয়ার করা হয়েছে। অভিযোগ, উত্তেজিত জনতা ওই চারজনকে নগ্ন করে ধারালো অস্ত্র, ইট, লাঠি ও রড দিয়ে আঘাত করে। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, বজরং দলের স্থানীয় নেতারা একটি পশুবাহী গাড়ি আটক করে। বজরং দলের দাবি,এই গাড়ির মধ্যে উত্তরপ্রদেশে নিষিদ্ধ গোমাংস আছে। তারা গাড়ি থেকে চারজনকে নামিয়ে ব্যাপক মারধর করে। গাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ এসে তাদেরকে মুক্ত করে।
পুলিশ প্রাথমিকভাবে জানায়, তারা গোমাংস নয়, মহিষের মাংস বহন করছিলেন। উল্লেখ্য, গোমাংস উত্তরপ্রদেশে নিষিদ্ধ হলেও মহিষের মাংস নিষিদ্ধ নয়। আলিগড় পুলিশের (গ্রামীণ) সুপারিনটেন্ডেন্ট অমৃত জৈন জানিয়েছেন, একটি পুলিশ টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে চারজনকে উদ্ধার করেছে এবং দ্রুত দিন দয়াল উপাধ্যায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চারজনের মধ্যে তিনজন গুরুতর আহত। আক্রান্ত আকিলের বাবা সালিম খান বলেন, আমি আঘাতগুলোর বর্ণনা দিতে পারছি না। আপনি ভিডিওগুলি দেখতে পারেন। আমার ছেলে হাসপাতালে তার জীবনের জন্য লড়াই করছে। বজরং দলের কর্মীদের বিরুদ্ধে এখন একটি এফআইআর দায়ের করেছেন সালিম খান। সালিম দ্বারা দায়ের করা এফআইআরে বলা হয়েছে, চারজন পুরুষ ২৪ মে আলিগড়ের আল-আম্মার ফ্রোজেন ফুডস মিট ফ্যাক্টরি থেকে মাংস নিয়ে পিক-আপ ট্রাকের মাধ্যমে আত্রাউলিতে ফিরছিলেন। সকাল ৮টা ৩০ মিনিটের দিকে, মাংস বহনকারী পিক-আপ যানটি হারদুয়াগঞ্জ পুলিশ স্টেশনের কাছে সাধু আশ্রমে আটক করেন। হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো দাবি করেছে যে তাদেরকে এই রুটে গরুর মাংস পাচারের বিষয়ে খবর দেওয়া হয়েছে। এফআইআর-এ ১৩ জন অভিযুক্তের মধ্যে নাম উল্লেখ করে বিজেপি নেতা অর্জুন সিং এবং ভিএইচপি নেতা রাজকুমার আর্যর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আলিগড় পুলিশের (গ্রামীণ) সুপারিনটেন্ডেন্ট অমৃত জৈন অমৃত জৈন জানান,মাংসটি আটক করা হয়েছে এবং ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। একটি মামলা রুজু করা হয়েছে এবং ঘটনাগুলির যথাযথ তদন্ত করা হবে। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে দুই সপ্তাহ আগে একই যানবাহনের সঙ্গে যে পূর্বের ঘটনা ঘটেছিল, সেটি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার পর নিশ্চিত হয় গোমাংস ছিল না। তিনি আরও উল্লেখ করেন, গবাদি পশুর মাংস সম্পর্কি তথ্য সহ পরিবহনের সমস্ত নথি আইনানুযায়ী সঠিক ছিল। আলিগড়ের এই ঘটনাকে অমানবিক এবং দেশের জন্য চরম লজ্জাজনক ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সর্বভারতীয় সভাপতি মাওলানা মাহমুদ আসাদ মাদানি। তিনি বলেন, গোমাংস সন্দেহে আক্রমণ দেশের শান্তি ও আইনের প্রতি গুরুতর হুমকির লক্ষণ। এই ঘটনা ক্রমাগত ঘটছে, মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। কিন্তু কঠোর আইন এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও গো-রক্ষকরা নির্ভয়ে মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে এবং তাদের সমর্থন করা হচ্ছে।
মাওলানা মাদানি বলেন, সরকারের স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা উচিত যে, এই ধরনের কর্মকাণ্ড কোনও অবস্থাতেই সহ্য করা যাবে না।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct