আপনজন ডেস্ক: কর্নাটকে দলে বিদ্রোহ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে বিজেপি। বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পেরে বিক্ষুব্ধ নেতাদের দলত্যাগের স্রোত অব্যাহত। সেই তালিকায় যুক্ত হল সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জগদীশ শেট্টারের নাম। দলীয় টিকিট না পেয়ে সোমবার সকালেই তিনি যোগ দিলেন কংগ্রেসে। কর্নাটকের এই প্রভাবশালী লিঙ্গায়েত নেতার দলত্যাগ রুখতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পর্যন্ত চেষ্টা করেছিলেন। হুব্বালি-ধারওয়াদ কেন্দ্র থেকে শেট্টার রাজ্য বিধানসভায় ছয়বার জিতেছেন। ৬৭ বছর বয়সী এই প্রভাবশালী নেতাকে এবার প্রার্থী করা হয়নি। ‘অপমানিত, অসম্মানিত ও বিস্মিত’ শেট্টার রবিবার বিধায়ক পদ ছেড়ে দেওয়ার পাশাপাশি বিজেপি থেকেও ইস্তফা দেন। গতকাল রাতেই তিনি প্রাক্তন কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ডি কে শিবকুমার ও এআইসিসির পর্যবেক্ষক রণদীপ সিং সুরযেওয়ালার সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সোমবার সকালে বেঙ্গালুরুতে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেসহ সাধারণ সম্পাদক কে সি বেণুগোপাল এবং রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা (কর্নাটকের দায়িত্বপ্রাপ্ত), কেপিসিসি সভাপতি ডি কে শিবকুমার এবং বিধায়ক দলের নেতা ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া এর উপস্থিতিতে কংগ্রেসে যোগ দেন উত্তর কর্নাটক অঞ্চলের লিঙ্গায়েত নেতা শেট্টার।
শীর্ষস্থানীয় নেতাদের উপস্থিতিতে কংগ্রেসে যোগ দিয়ে শেট্টার বলেন, ‘রাজ্যে এই দলকে হাতে করে তৈরি করেছি। কিন্তু মর্যাদা পেলাম না। কয়েকজনের জন্য দলটা শেষ হয়ে যাচ্ছে। আজ থেকে কংগ্রেসের নীতি ও আদর্শ অনুযায়ী চলব।’ কংগ্রেস সূত্রের খবর, শেট্টারকে তাঁর পুরোনো কেন্দ্র থেকেই প্রার্থী করা হবে। কর্নাটকের ভোট আগামী ১০ মে। ১৩ মে গণনা ও ফল ঘোষণা। এবার বিধানসভার ভোটের আগে কর্নাটক বিজেপিতে ক্ষোভ চূড়ান্ত। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেস যোগ দেন দুই সাবেক বিধায়ক ননজুদাস্বামী ও মনোহর আয়নাপুর। তাঁদের সঙ্গে কংগ্রেসে ফেরেন মহীশুরের সাবেক মেয়র পুরুষোত্তম। নানজুদাস্বামী ছিলেন বিজেপির তফসিল জাতি সেলের উপসভাপতি। মনোহর আয়নাপুর তফসিল জাতিভুক্ত বানজারা সম্প্রদায়ের নেতা। রাজ্যের ৪২টি কেন্দ্রে তফসিল জাতির প্রভাব রয়েছে। ক্ষোভের সামাল দিতে না দিতেই গত সপ্তাহে বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেন আরেক প্রবীণ লিঙ্গায়েত নেতা লক্ষ্মণ সাবাদি। সম্প্রতি প্রভাবশালী মন্ত্রী কে এস ঈশ্বরাপ্পাও দলত্যাগ করেছেন দুর্নীতির অভিযোগে। তিনি অবশ্য কোনো দলে যোগ দেননি। দক্ষিণের এই রাজ্যে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাইয়ের মন্ত্রিসভা ‘৪০ শতাংশ’ বলে পরিচিতি পেয়েছে। কারণ, রাজ্যের ঠিকাদারদের সংগঠন কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চিঠি লিখে সব প্রকল্পে ‘৪০ শতাংশ ঘুষ’ চাওয়া নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছিল।
কর্নাটকে সবচেয়ে প্রভাবশালী দুই সম্প্রদায় লিঙ্গায়েত ও ভোক্কালিগা। রাজ্যের জনগোষ্ঠীর ১৭ শতাংশ লিঙ্গায়েত, ১৩ শতাংশ ভোক্কালিগা। রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রধান নিয়ন্ত্রকও এ দুই সম্প্রদায়। তাদের পাশাপাশি রয়েছে অনগ্রসর, তফসিলি জাতি-উপজাতি ও মুসলমান সম্প্রদায়। লিঙ্গায়েতদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা বি এস ইয়েদুরাপ্পা রাজ্যে বিজেপিকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। ৮২ বছর বয়সি এই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে বিজেপি এবার টিকিট না দিলেও প্রার্থী করেছে তাঁর ছেলেকে। জগদীশ শেট্টার ও লক্ষ্মণ সাবাদি যোগ দেওয়ায় কংগ্রেস মনে করছে, বিজেপির লিঙ্গায়েত দুর্গে এবার হানা দেওয়া সহজ হবে। লিঙ্গায়েত সমর্থন অটুট রাখতে বিজেপি অবশ্য ওই সম্প্রদায় থেকে ৫৪ জনকে প্রার্থী করেছে। ভোক্কালিগা সম্প্রদায় বরাবর থেকেছে কংগ্রেস ও জনতা দল (ধর্মনিরপেক্ষ) বা জেডিএসের দিকে। গতবারের নির্বাচনে বিজেপি প্রথমবার সেখানে কিছু আসন পায়। এবার পুরোনো মহীশুর অঞ্চলে কংগ্রেসের প্রধান প্রতিপক্ষ জেডিএস। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ডি কে শিবকুমার এই সম্প্রদায়ের প্রধান নেতা। অনগ্রসর নেতৃত্ব পুরোপুরি হাতে রেখেছেন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া। দলিত ভোট জোটবদ্ধ করছেন সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। মুসলমান ভোট পুরোপুরি কংগ্রেসের দিকে। জনমত জরিপও এখন পর্যন্ত কংগ্রেসের পক্ষে। ধারণা করা হচ্ছে, ২২৪ সদস্যবিশিষ্ট বিধানসভায় কংগ্রেস এবার একাই সরকার গড়তে পারবে। কর্নাটকের কোলার জেলায় ২০১৯ সালে এক জনসভায় রাহুল ‘মোদি পদবি’ নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন। যার ফলে তার সাংসদ পদ খারিজ হয়ে যায়। গতকাল সেই কোলার থেকেই তিনি শুরু করেন কর্নাটক নির্বাচন অভিযান। বোন প্রিয়াঙ্কাকে পাশে নিয়ে মোদি সরকারকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, এবার অন্তত ১৫০ আসন জিততে হবে, যাতে বিজেপি দল ভাঙানোর সুযোগ না পায়। ২০১৮ সালে কংগ্রেস ও জেডিএস সরকার গড়লেও বিজেপি ক্ষমতা দখল করেছিল ওই দুই দল ভাঙিয়েই, তা যেন আর না হয়।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct