নিজস্ব প্রতিবেদক, কলকাতা, আপনজন: মাসের বেতন মাসে সুনিশ্চিতকরণ,স্থায়ীকরণ ও বেতন কাঠামোর দাবিতে ধর্মতলায় ঝাড়ু হাতে বিক্ষোভ দেখালেন এনএসকিউএফ বৃত্তিমূলক শিক্ষক ও ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্টরা। তৃণমূল সরকারের আমলেই নিয়োগ হয়েছেন তবুও সমস্যার সম্মুখীন এনএসকিউএফ শিক্ষকদের। এবার বেতনে কোপ পড়েছে এনএসকিউএফ শিক্ষকদের। মুখ্যমন্ত্রী বারবার কেন্দ্রের বঞ্চনা নিয়ে আওয়াজ তুলেছেন। কেন্দ্রের পাওনা বকেয়া নিয়ে সুর চড়িয়েছেন। তবে, বিক্ষোভকারীদের দাবি, সমগ্র শিক্ষা অভিযানের দুই হাজার ৭৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র সরকার। তবুও এনএসকিউএফ শিক্ষকদের বেতন মেলেনি জানুয়ারি মাস থেকে। তাদের বক্তব্য, সমগ্র শিক্ষা অভিযানের অধীনে স্কুল শিক্ষা দপ্তরের অধীনস্ত ভোকেশনালাইজেশন অফ স্কুল এডুকেশনের অন্তর্ভুক্ত ২০১৩ সাল থেকে সিলেবাসে নিযুক্ত নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বিভিন্ন সরকার ও সরকার পোষিত ৭২৬টি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিভিন্ন কারিগরি বিষয়ে শিক্ষাদান অর্থাৎ ন্যাশনাল স্কিলস কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক প্রকল্প শুরু হয়। এই বিষয়গুলিতে ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে কলমে শিক্ষাদান দেওয়া হয়। রাজ্যে এনএসকিউএফ শিক্ষকদের সংখ্যা ১৪৫২ জন। সাধারণ বিষয়ের সাথে সাথে ইনফরমেশন টেকনোলজি,অটোমোটিভ,হেল্থ কেয়ার,বিউটি এন্ড ওয়েলনেস, টুরিজম এন্ড হসপিটালিটি, এগ্রিকালচার প্রভৃতি বিষয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসে। স্থায়ী বিষয় ও স্থায়ী নিয়োগনীতি থাকা স্বত্বেও অতিরিক্ত মুনাফার লোভে রাজ্য সরকার এনএসকিউএফ শিক্ষক নিয়োগ থেকে সরকারি বিদ্যালয় পরিচালনা বেশ কিছু বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হয়। বেসরকারি সংস্থাগুলিকে সমগ্র শিক্ষা মিশনের কোষাগার থেকে অর্থ দেওয়া হয় এবং এছাড়াও কমিশন বাবদ অতিরিক্ত অর্থ দেওয়া হয় বেসরকারি সংস্থাগুলিকে। সরকারের আর্থিক ক্ষতি হলেও দপ্তরের বেশ কিছু আধিকারিক বেসরকারি সংস্থার সাথে হাত মিলিয়ে এই ধরনের দুর্নীতি করে চলেছেন বলে অভিযোগ। এই প্রকল্পে কেন্দ্র ৬০ শতাংশ টাকা ও রাজ্য ৪০ শতাংশ টাকা প্রদান করে। রাজ্য সরকার ৪০ শতাংশ প্রদান করছে না বলে অভিযোগ বিক্সোভকারীদের। তাদের অভিযোগ, সেজন্যই বেতনের টাকা শিক্ষকদের মিলছে না।
তাদের আরও অভিযোগ, এবিষয়ে বহুবার মুখ্যমন্ত্রী, দপ্তর,শিক্ষামন্ত্রী ও কারিগরী মন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন শিক্ষকরা, কিন্তু কোনো সুরাহা মেলেনি এনএসকিউএফ শিক্ষকদের। এবার তাই বাধ্য হয়ে ঝাড়ু হাতে রাস্তায়। অভিযোগ গত বছরের অক্টোবরে ২১৮ জন ল্যাব অ্যাসিস্ট্যাণ্টদের পুরোপুরি ছাঁটাই করে দেওয়া হয়েছে। এনএসকিউএফ শিক্ষক পরিবার সংগঠনের পক্ষ থেকে এদিন জ ধর্মতলার গান্ধী মূর্তির পাদদেশে জেলার বহু শিক্ষক, শিক্ষিকা ও ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্টরা ঝাড়ু দিয়ে ও বস্তা নিয়ে রাস্তার আবর্জনা কুড়োলেন। পশ্চিমবঙ্গ এনএসকিউএফ শিক্ষক পরিবারের রাজ্য সম্পাদক শুভদীপ ভৌমিক বলেন, শিক্ষক হয়েও মাসের বেতন মাসে পাচ্ছি না। আমাদের যখন তখন ছাঁটাই করে দিচ্ছে, আমাদের সাথে সরকার অমানবিক আচরণ করছেন, অবিলম্বে আমাদের ছাঁটাই হওয়া ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্টদের বকেয়া বেতন সহ বিদ্যালয়ে পুনর্বহাল এবং কর্মরতদের ৬০ বছর পর্যন্ত চাকুরী সুনিশ্চিত করা হোক। পশ্চিমবঙ্গ এনএসকিউএফ সংগঠনের রাজ্য সভাপতি সৌরভ সর বলেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীকে বারংবার দুর্নীতির কথা বলা হলেও সুরাহা হয়নি। এনএসকিউএফ দুর্নীতিতে যুক্ত দোষীদের কঠোর শাস্তি চাই । সরকারি বিদ্যালয়ে স্থায়ী বিষয়ে বেসরকারী সংস্থা দিয়ে অস্থায়ীভাবে এনএসকিউএফ শিক্ষক নিয়োগ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে”।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct