নিজস্ব প্রতিবেদক, কোচবিহার, আপনজন: উত্তরবঙ্গের পশ্চাদপদ মুসলিম সম্প্রদায়ের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে ন্যাশ্যা শেখ উন্নয়ন বোর্ডের কাঠামোগত পরিবর্তনের দাবি জানাল উত্তরবঙ্গ অনগ্রসর মুসলিম সংগ্রাম সমিতি। ১৮ মে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে একটি বিস্তারিত আবেদনপত্র পাঠিয়ে সমিতির সাধারণ সম্পাদক মহসিন আলি জানান, বর্তমানে গঠিত বোর্ডে উত্তর দিনাজপুরসহ অন্যান্য জেলার নস্যশেখ প্রতিনিধিদের উপেক্ষা করা হয়েছে এবং বোর্ডটি একরকমভাবে কোচবিহার-কেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে।
আবেদনপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, “নস্যশেখ সম্প্রদায় কোচবিহার জেলায় সীমাবদ্ধ নয়, উত্তরবঙ্গের প্রায় প্রতিটি জেলায় এই জনগোষ্ঠীর বাস। বিশেষ করে উত্তর দিনাজপুর জেলায় এই সম্প্রদায়ের প্রায় ৩০% মানুষ বাস করেন, যেখানে কোচবিহারে এই হার মাত্র ১৩%।” এই পরিসংখ্যান তুলে ধরে সমিতি বোর্ডের বৈষম্যমূলক গঠন নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
বর্তমানে বোর্ডের চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান এবং মোট ১৯ জন সদস্যের মধ্যে ১১ জনই কোচবিহারের বাসিন্দা। এমনকি ভাইস-চেয়ারম্যানদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক—যেমন ভাইরা ভাই ও শ্যালক থাকা নিয়েও স্বচ্ছতার প্রশ্ন উঠেছে।
অভিযোগ উঠেছে যে, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল জনগণের আন্দোলনের ফসল কেড়ে নিয়ে বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছে।
উল্লেখ্য, নস্য শেখ, শেরশাবাদী, পাহাড়িয়া মুসলিম, খোট্টা মুসলিম এবং সাপুরিয়া মুসলিম প্রভৃতি সম্প্রদায়গুলিকে সরকারি ভাবে অনগ্রসর মুসলিম তালিকাভুক্ত করার ক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গ অনগ্রসর মুসলিম সংগ্রাম সমিতির দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সেই আন্দোলনেরই স্বীকৃতিস্বরূপ নস্যশেখ উন্নয়ন বোর্ড গঠনের সরকারি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে সমিতি, তবে বর্তমান কাঠামো নিয়ে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ পেয়েছে।
সমিতির তরফে প্রস্তাব রাখা হয়েছে, শুধুমাত্র নস্যশেখ নয়, উত্তরবঙ্গের সমস্ত অনগ্রসর মুসলিম সম্প্রদায়—যেমন শেরশাবাদী, খোট্টা মুসলিম, সাপুরিয়া, ও পাহাড়িয়া মুসলিম—কে একত্র করে একটি সমন্বিত উন্নয়ন বোর্ড গঠন করা হোক।
এতে সমাজিক সাম্য, ন্যায় এবং সামগ্রিক উন্নয়ন নিশ্চিত হবে বলে দাবি করা হয়েছে।
আবেদনপত্রে রাজনৈতিক গুরুত্বের দিকটিও তুলে ধরা হয়েছে। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে এই বোর্ড পুনর্গঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে প্রতিফলিত হতে পারে বলে মনে করছে সংগঠন।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক মহসিন আলি বলেন, “আমরা মুখ্যমন্ত্রীর নিকট আন্তরিকভাবে আবেদন করেছি যাতে এই বিষয়ে অবিলম্বে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয় এবং সমস্ত পশ্চাদপদ মুসলিম সম্প্রদায়ের সমান প্রতিনিধিত্ব ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা যায়।”
রাজনৈতিক মহল এবং প্রশাসনের একাংশ এই দাবিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে বলেই সূত্রের খবর। মুখ্যমন্ত্রীর দফতর এই সংক্রান্ত আবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে কি না, এখন সেটাই দেখার বিষয়।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct