এম মেহেদী সানি: ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ ফিজিওলজিক্যাল সায়েন্সেস (IUPS) এর ফেলো নির্বাচিত হয়েছেন সৌদি আরবের কিং ফয়সল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত বাঙালি বিজ্ঞানী গওছুল আজম খান ৷ ২০২৪ সালে আগে ভারত থেকে গুজরাটের শর্মিষ্ঠা ঘোষ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ ফিজিওলজিক্যাল সায়েন্সেস (IUPS) এর ফেলো নির্বাচিত হয়েছিলেন ৷ জানা গিয়েছে ২০২৪ সালের আগে আন্তর্জাতিক স্তরের এই ফেলোশিপ নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে ভারতীয়দের তেমন কোন রেকর্ড নেই ৷
বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী ও গবেষকদের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া মানেই এক অনন্য অর্জন । সেইরকম একটি মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি হলো “ফেলো অফ দ্য ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ ফিজিওলজিক্যাল সায়েন্সেস (IUPS)”। এটি শুধুমাত্র বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ফিজিওলজিস্টদের প্রদান করা হয়, যারা মানবদেহের কার্যপ্রণালী, রোগ প্রতিরোধ, ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে যুগান্তকারী অবদান রেখেছেন । সম্প্রতি টাইপ ২ ডায়াবেটিস (T2DM) দীর্ঘমেয়াদে পেরিফেরাল আর্টারিয়াল ডিজিজ সমস্যার সমাধানে এক যুগান্তকারী ভ্যাকসিন উদ্ভাবন করে সাড়া ফেলেছিলেন বাঙালি গবেষক অধ্যাপক গওছুল আজম খান ৷ এই ভ্যাকসিনটি ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের পেটেন্ট ও ট্রেডমার্ক অফিস থেকে অনুমোদন পেয়েছে । গত বছর ৯ই সেপ্টেম্বর প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী পেটেন্ট কনফার্মেশন নম্বর ২৮০৯ ৷ এবার গওছুল আজম খানের মুকুটে জুড়লো নয়া পালক ৷ ২০২৫ সালে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ ফিজিওলজিক্যাল সায়েন্সেস (IUPS) এর ফেলো নির্বাচিত হয়েছেন তিনি ৷ এ সাফল্যের পর সন্তোষ প্রকাশ করে গওছুল আজম আপনজন’কে বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ ! আমি সম্মানিত বোধ করছি যে আমি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ ফিজিওলজিক্যাল সায়েন্সেস (IUPS) এর ফেলো নির্বাচিত হয়েছি । এই স্বীকৃতি আমার শিক্ষাজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক ৷ আমি এবং আমার সহকর্মী, পরামর্শদাতা এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞ, যাদের সমর্থন এবং সহযোগিতা এই অর্জনকে সম্ভব করেছে । বিশ্বের মানচিত্রে ফিজিওলজিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে আমার প্রচেষ্টা জারি থাকবে ইনশাআল্লাহ।’
উল্লেখ্য গওছুল আজম খান কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে ১৯৯৫ সালে ফিজিওলজি নিয়ে সাম্মানিক স্নাতক হন । ১৯৯৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি পাশ করেন । বিশ্ববিদ্যালয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রথম হয়ে গোল্ড মেডেল পান । তিনি ফিজিওলজিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার তরফ থেকে প্রফেসর এ.কে. মুখার্জি মেমোরিয়াল মেডেল অ্যাওয়ার্ড পান । ২০০৩ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন । কিছুদিন সুইডেনে কাজ করেন, তারপর চলে যান আমেরিকা । বিজ্ঞান গবেষণায় অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে আমেরিকা থেকেই বেশ কতকগুলি অ্যাওয়ার্ড পান । জাপান ও কানাডাতেও ছিলেন কিছুদিন । এর মধ্য ২০০৯ সালে দেশের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ‘ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন’ বা ডিআরডিও’তে সিনিয়র সায়েন্টিস্ট হিসাবে যোগ দেন । কাজ করেন প্রায় ৮ বছর । ফের পাড়ি জমান বিদেশে ৷ ফিজির স্কুল অফ মেডিসিন-এ অধ্যাপনা করেন । বর্তমানে সৌদি আরবের কিং ফয়সল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন গওছুল আজম খান ৷
জানা গিয়েছে, অধ্যাপক গবেষক গওছুল আজম খান দেশ-বিদেশের নামীদামি সংস্থায় গবেষণা এবং অধ্যাপনা করেছেন ৷ লন্ডনের প্রখ্যাত বিজ্ঞান গবেষণা সংস্থা ‘রয়্যাল সোসাইটি অফ বায়োলজি”র ‘চার্টার্ড সায়েন্টিস্ট’ সম্মানে ভূষিত হন বাঙালি গবেষক ও অধ্যাপক গওছুল আজম খান । দেশ-বিদেশের প্রায় দুই ডজন সম্মান ও পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। কাজ করেছেন ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও’তেও । আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ফিজি, জাপান, কানাডা প্রভৃতি দেশের নামিদামি সংস্থায় গবেষণামূলক কাজ করেছেন গওছুল আজম খান। প্রসঙ্গত, ১৯৭২ সালের ৯ আগস্ট পশ্চিম মেদিনীপুরের মোহনপুর থানার অন্তর্গত আঁতলা গ্রামে অধ্যাপক গওছুল আজম খানের জন্ম । তার মরহুম পিতা হাজি আবদুল আজিজ খান ছিলেন সাধারণ চাষি, মা সাবাতুন বিবি গৃহবধূ ।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct