আপনজন ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গ সরকার মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছে যে রাজ্যে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি) চিহ্নিতকরণের জন্য একটি নতুন প্রক্রিয়া পরিচালনা করা হবে এবং এটি তিন মাসের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। বিচারপতি বি আর গাভাই এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মসিহর বেঞ্চ ৭৭টি সম্প্রদায়ের (বেশিরভাগই মুসলিম) ওবিসি শ্রেণিবিন্যাস বাতিল করার কলকাতা হাইকোর্টের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দায়ের করা আবেদনের শুনানি হয় এদিন।
পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে হাজির হয়ে সিনিয়র অ্যাডভোকেট কপিল সিব্বাল বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের নেতৃত্বাধীন দুই বিচারপতির বেঞ্চের সামনে এটি জমা দিয়েছেন, যা কলকাতা হাইকোর্টের ২০২৪ সালের মে মাসের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজ্য সরকারের আবেদনের শুনানি করছে, যাতে ৭৭ টি সম্প্রদায়, বেশিরভাগ মুসলিমকে ওবিসি হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছিল, যা তাদের সংরক্ষণের সুবিধা পাওয়ার যোগ্য করে তুলেছিল।
বিচারপতি এজি মাসিহকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চকে কপিল সিব্বল বলেন, পশ্চিমবঙ্গ অনগ্রসর শ্রেণি কমিশন পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে জানিয়েছে যে রাজ্যের ওবিসি তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য কমিশনে আবেদন করা সম্প্রদায়ের বেঞ্চমার্ক সমীক্ষা করা হবে।
বেঞ্চ বিষয়টি তিন মাস পিছিয়ে দিয়ে জুলাইয়ে এটি গ্রহণের জন্য তার অনুরোধে সম্মত হয়েছে।
সেই আবেদন বিবেচনা করে বেঞ্চ জুলাই মাসে বিষয়টি তালিকাভুক্ত করে। বিচারপতি গাভাই বলেন, যদি পুরো প্রক্রিয়াটি পুনরায় করা হয় এবং তার পরে নতুন করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় এবং কেউ ক্ষুব্ধ না হন, তবে এই প্রশ্নটি একাডেমিক হয়ে উঠবে”।
বেঞ্চ তার আদেশে বলেছে, মি. সিব্বাল জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ অনগ্রসর শ্রেণি কমিশন অনগ্রসর শ্রেণির বিষয়টি নতুন করে খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নিচ্ছে। তিনি আরও জমা দিয়েছেন যে এটি সম্ভবত ৩ মাস সময় নেবে। জুলাই মাসে পোস্ট করুন। বলা বাহুল্য, উল্লিখিত অনুশীলনটি কোনও পক্ষের অধিকারের প্রতি ক্ষুণ্ণ হবে না।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ২২ মে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চ ২০১০ সাল থেকে রাজ্য কর্তৃক জারি করা ৭৭ শ্রেণির মুসলিমের ওবিসি শংসাপত্রগুলি বাতিল ঘোষণা করে। কলকাতা হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণ করে বলে, এই সব সম্প্রদায়গুলিকে ওবিসি মর্যাদা দেওয়ার জন্য “ধর্মই একমাত্র মাপকাঠি বলে মনে হয়”। কারণ, যে ধরনের সমীক্ষা করে ওবিসি নির্ধারণ করা হয় তা মানা হয়নি বলে কলকাতা হাইকোর্ট মন্তব্য করে। আর তার জেরেই ৭৭টি ওবিসি বাতিল করা হয়। এরপর কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে যায়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে মামলার শুনানিতে বিলম্ব হওয়ায় দাবি ওঠে নতুন করে ওবিসি নিয়ে সমীক্ষা করার। এ ব্যাপারে ২০২৮ সালের ১৮ অক্টোবর নবান্নে রাজ্যের মুখ্য সচিবের দফতরে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। ওবিসি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায় রাজ্য সরকারের পক্ষে না এলেও কীভাবে ওবিসি সমস্যা সমাধান করা যায় তা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। সেই বৈঠকে ডেবরার বিধায়ক হুমায়ুন কবির প্রস্তাবে বলেন,, কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের ১৮৮ পাতার ৩৬০ নম্বর পয়েন্টে বলা হয়েছে ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস কমিশন চাইলে নতুন করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে সার্ভে করে নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী নতুন লিস্ট তৈরি করতে পারে। এরপরই জল্পনা শুরু হয় নতুন করে ওবিসি সমীক্ষা নিয়ে। তার কিছুদিন পর এই নতুন করে সমীক্ষার ইঙ্গিত দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডিসেম্বরে বসিরহাটের সন্দেশখালিতে প্রশাসনিক বৈঠকে ওবিসি প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ওবিসি ছেলেমেয়েদের একটু সমস্যা হচ্ছে, কারণ কোর্টে একটা কেস করে কেসটাকে আটকে রেখে দেওয়া হয়েছে। কেসটা এখন সুপ্রিম কোর্টেও আছে। আমরা এটাও চেষ্টা করছি যদি কোন পদ্ধতি বের করে দেওয়া যায়। সুপ্রিম কোর্টে কপিল সিব্বালের আর্জি তারই ফলশ্রুতি বলে মনে করা হচ্ছে।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct