এম মেহেদী সানি, কলকাতা, আপনজন: সম্প্রতি ‘রায় ও মার্টিন’ প্রকাশনীর দ্বাদশ শ্রেণীর ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিচিত্রা’ বইয়ের প্রচ্ছদে চিত্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। প্রচ্ছদটিতে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাককে অস্ত্রধারীর সঙ্গে উপস্থাপন করা হয়েছে পাশাপাশি প্রচ্ছদের জলছবিতে একটি নিউজ কাটিং-এ ‘জেহাদিদের’ শব্দটি ভেসে উঠেছে। বিষয়টি সামনে আসতেই সামাজিক গণমাধ্যমে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। নিন্দা জানিয়ে সরব হয়েছেন রাজ্যের সংখ্যালঘু মহল এবং বিশিষ্টজনেরা। তাঁদের মতে, শিক্ষার্থীদের এই ছবির মাধ্যমে ইসলাম বিদ্বেষী মনোভাব তৈরি হবে। অনেকেই ‘সাম্প্রদায়িক প্রচ্ছদ’ বলেও মন্তব্য করেছেন। ‘রায় ও মার্টিন’ প্রকাশনীর দপ্তরে ইতিমধ্যেই স্টুডেন্ট ইসলামিক অর্গানাইজেশনের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল গিয়ে এই বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে ।
এ প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানতে পাবলিশার্স অ্যান্ড গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিশেষ কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে বলেন, ‘এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা যারা নেওয়ার নেবেন, আমি পক্ষেও নয়, বিপক্ষেও নয়।’
বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন সিটি কলেজর উপাধ্যক্ষ ও ওয়েবকুপা রাজ্য কমিটির সহ-সভাপতি ড. মহীতোষ গায়েন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি কোনো পাঠ্য পুস্তকের প্ৰচ্ছদ এমন হওয়া উচিত নয় যাতে কোনো ধৰ্মীয় বিভাজন ও কোনো একটা নিৰ্দিষ্ট ধৰ্মীয় সম্প্ৰদায়কে, সাম্প্ৰদায়িক হিসাবে প্রদর্শন করে সন্ত্রাসী হিসেবে তুলে ধরা । এই চেষ্টা কৌশলে বা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে কোনো মানুষ বা প্রকাশক তুলে ধরলে তা নিন্দনীয় ও ঘৃণ্য। ভারতবর্ষ বৈচিত্র্যময় দেশ,পশ্চিমবঙ্গেও এক ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক, মননশীল ও ধৰ্মীয় ঐক্যের বাতাবরণ প্ৰবাহিত,সেখানে শুধু রায় ও মাৰ্টিন কেন, কোনো রুচিশীল,শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ, সম্প্ৰদায় বা কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শের সেরূপ কাজ উচিত নয়।’ বিতর্কিত প্রচ্ছদটি নিয়ে নিন্দায় সরব হয়েছেন শিক্ষাবিদ কামাল হোসেন।
তিনি বলেন, কোনো শুভবুদ্ধি সম্পন্ন প্রকাশক একটি বইয়ের কভারে হিংসাত্মক কোনো ছবি দিতে পারে না, এবং সেখানে জেহাদি কথাটাও লিখতে পারেন না, আসলে এদের জিহাদীর প্রকৃত অর্থ সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞানের অভাব আছে । বিদ্যার্থীদের মনের মধ্যে এই ছবির মাধ্যমে ইসলাম বিদ্বেষী মনোভাব প্রবেশ করাতে চায়, আর রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সঙ্গে এরকম ছবির কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না, জাতি ধর্ম -বর্ণ নির্বিশেষে এই কভারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা উচিত ।
চাপের মুখে পড়ে কার্যত নড়েচড়ে বসেছে ‘রায় ও মার্টিন’ প্রকাশনী কর্তৃপক্ষ। প্রকাশনীর কো-অর্ডিনেটর সুব্রত ঘোষ সংশ্লিষ্ট প্রচ্ছদটি পরবর্তী সংস্করণে পরিবর্তন করার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সিলেবাস ওরিয়েন্টেড কভার পেজটি বানানো, যদি কোনও ভুল হয় বা বিষয়টি যদি কাউকে আঘাত করে আমরা পরবর্তী সংস্করণে প্রচ্ছদটি পরিবর্তন করে দেব।’
বুধবার রায় ও মার্টিন প্রকাশনী দপ্তরে বিষয়টি জানিয়ে রাজ্যের স্টুডেন্ট ইসলামিক অর্গানাইজেশনের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল স্মারকলিপি প্রদান করলে প্রকাশনীর কো-অর্ডিনেটর সুব্রত ঘোষ ওই সংগঠনকে জানায়, ‘নতুন সংস্করণে বিতর্কিত প্রচ্ছদ ও বইয়ের ভেতরের ত্রুটিপূর্ণ অংশ সংশোধন করা হবে । ইতিমধ্যে বাজারে বিক্রি হয়ে যাওয়া বইগুলো ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য একটি আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করা হবে।’’ ছাত্র সংগঠন স্টুডেন্ট ইসলামিক অর্গানাইজেশনের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াকিল এ কথা জানিয়ে প্রচ্ছদ প্রসঙ্গে একরাশ ক্ষোভ উগরে দেন।
তিনি বলেন, বইয়ের প্রচ্ছদে এমন একটি চিত্র ব্যবহার করা হয়েছে, যা কেবল অপ্রাসঙ্গিকই নয়, বরং গভীরভাবে বিভ্রান্তিকর ও সাম্প্রদায়িক মানসিকতার প্রতিফলন। শুধু তাই নয়, বইয়ের ভেতরেও ইসলাম সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর ও নেতিবাচক তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। এটি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার পাশাপাশি আমাদের সমাজের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে হুমকির মুখে ফেলে এবং কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মনে বিভাজন ও বিদ্বেষমূলক মনোভাব জন্ম দিতে পারে। আমরা প্রকাশনী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি, প্রকাশনী কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করেছে। আমরা রায় ও মার্টিন প্রকাশনীকে এই প্রতিশ্রুতিগুলি দ্রুত বাস্তবায়নের পাশাপাশি ভবিষ্যতে যেন এমন দায়িত্বহীন পদক্ষেপের পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে বিষয়েও সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছি।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct