আপনজন ডেস্ক: সাহস ও ভ্রাতৃত্ববোধের হৃদয়গ্রাহী প্রদর্শনীতে, মেওয়াত অঞ্চলের মুসলমানরা শনিবার একটি বাসে ভ্রমণকারী কয়েক ডজন বৃন্দাবন ও মথুরা ফেরত তীর্থযাত্রীকে উদ্ধার করেছে, যা শনিবার আগুনে পুড়ে যায়। প্রায়শই সাম্প্রদায়িক সহিংসতা এবং গণপিটুনিতে জর্জরিত মেওয়াতের নুহ বিধানসভা এলাকায় এই ঘটনা সম্প্রীতির নিদর্শন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই ঘটনাটি ঘটেছে গত শনিবার রাত দুটোর সময়। উত্তরপ্রদেশের হিন্দুদের পবিত্র শহর বৃন্দাবন থেকে তীর্থযাত্রীদের বহনকারী একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস। মেওয়াত অঞ্চলের ধুলাভাত গ্রামের টোল গেটের কাছে বাসটিতে আগুন লেগে যায়। ফলে দশজন তীর্থযাত্রী প্রাণ হারান ও বহু যাত্রী আগুনে জখম। কিন্তু স্থানীয় মুসলমানদের সাহসী পদক্ষেপের জন্য বহু তীর্থযাত্র রক্ষা পান। বাসটিতে ৬৪জন যাত্রী ছিলেন। এদের মধ্যে প্রায় ১০ প্রাণ হাারলেও বাকিদের নিরাপদে উদ্ধার করেন স্থানীয় মুসলিমরা। বীরত্বপূর্ণ উদ্ধারের বিবরণ নুহের বিধায়ক আফতাব আহমেদ সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন। গ্রামবাসীদের নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টারও প্রশংসা করেছেন বিধায়ক। আফতাব আহমেদ বলেন, পাঞ্জাবের জলন্ধর থেকে কয়েক ডজন মানুষ সাত দিনের ধর্মীয় তীর্থযাত্রা শেষ করে বৃন্দাবন থেকে বাসে করে ফিরছিলেন। আমাদের গ্রাম ধুলাভাতের টোল গেটের কাছে বাসটিতে আগুন লেগেছিল এবং কয়েক ডজন যাত্রী প্রাণের ঝুঁকিতে ছিলেন। গ্রামবাসীরা সাহসিকতার সঙ্গে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন এবং যাত্রীদের উদ্ধারের চেষ্টা করেন। দুঃখের বিষয়, গুরুতর দগ্ধ হওয়ায় দশজনকে জনকে বাঁচানো যায়নি। বাকিরা গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, কিছু যাত্রীকে শহীদ হাসান খান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। কয়েকজনকে রোহতক মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে। এই দুঃখজনক মুহূর্তে আমরা ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের পাশে আছি। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন, পরিস্থিতির ভয়াবহতা দেখিয়েছেন এবং উল্লেখ করেছেন যে শান্তি নামে এক মহিলাকে তার গুরুতর অবস্থার কারণে রোহতকের পিজি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। আহমেদ বিলম্বিত হস্তক্ষেপের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সমালোচনা করেন।
উল্লেখ্য, সমাজের কিছু অসাধু অংশ মেওয়াতের ভ্রাতৃত্ব ভাঙার জন্য সব সময় নানা ধরনের গুজব ছড়ায়। কখনও অভিযোগ ওঠে যে বেশিরভাগ গরু জবাইয়ের ঘটনা এখানে ঘটে, আবার কখনও বলা হয় এই এলাকা গুন্ডাদের আস্তানা।
এই বীরত্বপূর্ণ কাজটি মেওয়াতের সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার ইতিহাসের সম্পূর্ণ বিপরীতে দাঁড়িয়েছে। গত বছর এই নুহ বিধানসভা এলাকা ধর্মীয় তীর্থযাত্রার পরে এই অঞ্চলটি বড় আকারের সহিংসতার সাক্ষী হয়ে দাাঁড়ায়। যার ফলে অসংখ্য প্রাণহানি, যানবাহনে অগ্নিসংযোগ এবং একজন ইমামের মর্মান্তিক হত্যার ঘটনা ঘটেছিল। তা সত্ত্বেও, মুসলিম দ্বারা হিন্দু তীর্থযাত্রীদের রক্ষা সম্প্রীতির অনন্য নিদর্শন।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct