আপনজন ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার অভিযোগ করে বলেনে, আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় করা একটি রাজনৈতিক খেলা এবং আধার নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের চক্রান্ত আমরা রুখে দিলাম। কারণ এটা বাংলা। এটা অন্য জায়গা নয়। কলকাতায় ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো দাবি করেন, রাজ্যে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) লাগু করতেই এই চক্রান্ত করা হয়েছে।তিনি বলেন, “আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় করার নোংরা ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল, আমরা তা বন্ধ করেছি। এটা বাংলা, অন্য কোনও জায়গা নয়। এটা ভুলে গেলে চলবে না।তাঁর অভিযোগ, রাজ্যে ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।মমতা বলেন, মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের আধার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। এটা করার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে? কী কারণে কার্ড ডিঅ্যাক্টিভেট করা হল, তাও তাঁরা জানেন না। হয়তো পাঁচ বছর পর এঁদের বিদেশি বলা হবে বলে দাবি তৃণমূল সুপ্রিমোর কথায়, “ভোটব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখে এটা নোংরা রাজনৈতিক খেলা।কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করে মমতা অভিযোগ করেন, এনআরসি আনার পূর্বাভাস হিসাবে আধার কার্ডগুলি নিষ্ক্রিয় করা হচ্ছে।রাজ্য সরকারকে না জানিয়েই আধার কার্ড বাতিলের কারণ জানতে চেয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে অশান্ত সন্দেশখালিতে যেতে বাধা দেওয়ার জন্য নিযুক্ত এক শিখ আইপিএস অফিসারের মঙ্গলবারের ঘটনার কথা উল্লেখ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এই ঘটনা রাজ্যের সুনাম ক্ষুণ্ণ করেছে।এক পাঞ্জাবি অফিসারের কী দোষ ছিল? তিনি তার দায়িত্ব পালন করছিলেন। শুধু পাগড়ি পরা বলে আপনি কীভাবে তাকে খালিস্তানি বলতে পারেন? এমন অনেক মুসলিম রয়েছেন যাঁরা আইএএস, আইপিএস এবং ডব্লিউবিসিএস অফিসার। আপনি কি তাদের পাকিস্তানি বলবেন?’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন যে সশস্ত্র বাহিনীতে পাঞ্জাব রেজিমেন্ট এবং গোর্খা রেজিমেন্ট রয়েছে তবে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বাঙালিদের বিশাল অবদান থাকা সত্ত্বেও কোনও বেঙ্গল রেজিমেন্ট নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বাংলার সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষায় আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এবং তা নষ্ট করার যে কোনও প্রচেষ্টা রুখতে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেব।বিজেপি অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে ওই পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক নিয়ম মেনে দায়িত্ব পালন না করার অভিযোগ তুলেছে।প্রসঙ্গত আধার নিষ্ক্রিয় হওয়ার খবর চাউর হতেই পাশে থাকার বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছিলেন, “যাঁদের আধার নিষ্ক্রিয় হয়েছে প্রয়োজনে তাঁদের নাগরিক পরিষেবা দিতে বিকল্প কার্ড দেবে রাজ্য সরকার। ইতিমধ্যে বিশেষ হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর চালুরর সঙ্গে সঙ্গে ওয়েবসাইট চালু করা হযেছে, যেখানে কারও আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় করে দিলে তিনি অভিযোগ জানাতে পারবেন। যদিও আধার কার্ড বাতিলের বিতর্কের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের আধার সংস্থা ইউআইএডিআই জানিয়েছে, প্রযুক্তিগত ত্রুটি থেকেই এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। মতুয়া নেতা তথা বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরেকেও সেই কথা বলতে শোনা যায়। বেশ কিছু নিষ্ক্রিয় আধার পরবর্তীতে সক্রিয় হবার খবরও পাওয়া যায়। এদিন এই সামগ্রিক পর্ব নিয়ে সরব হয়েছেন মমতা। তাঁদের চাপের কারণেই যে কেন্দ্র পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে, তা বোঝানোর চেষ্টাও করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে এটাও জানাতে ভোলেননি আধার নিষ্ক্রিয় করার ব্যাপারটি আদতে ভোট রাজনীতি ছাড়া আর কিছু নয়।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct