সাদ্দাম হোসেন, শিলিগুড়ি, আপনজন: পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৭৫তম প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে রাজভবনে এক অনুষ্ঠানে গত শুক্রবার কেন্দ্রকে সতর্ক করেছিলেন রাজ্যের সমস্ত বকেয়া মেটাতে সাত দিনের মধ্যে না মেটালে দল ব্যাপক আন্দোলনে নামবে। সোমবার সেই সুরে আরও একবার হুঁশিয়াির দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোচবিহার ও শিলিগুড়িতে দুটি সভায় কেন্দ্রকে হুঁশিয়ারি দেন। প্রথমে কোচবিহারের রাসমেলার মাঠের প্রশাসনিক সভামঞ্চে ১৯৮টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তিনি। তারপর সেই সভায় বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, একশো দিনের কাজ করিয়েও তাদের শ্রমের টাকা দেওয়া হচ্ছে না। বাংলার গরিব মানুষদের জন্য আবাস যোজনার ঘর বরাদ্দ করা হচ্ছে না। ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে। তার মধ্যে বকেয়া নাম মেটালে সাধারণ মানুষকে নিয়ে আন্দোলনে ঝাঁপাব। একই ভাবে কোচবিহার থেকে শিলিগুড়িতে এসে রাজ্য সরকারের উত্তরবঙ্গের সচিবালয় উত্তরকন্যার সামনে সরকারি পরিষেবা প্রদান কর্মসূচিতে একই সুরে কেন্দ্রকে আক্রমণ করেন। মমতা বিজেপির উদ্দেশ্যে বলেন, বাংলার মানুষ ঘর পাবে না আর তোমার অট্টালিকায় থাকবে তা হতে পারে না। এটা কোনওভাবে বরদাস্ত করা যায় না। তবে, তিনি এও জানিয়ে দেন, কেন্দ্রের টাকার পরোয়া করে না রাজ্য। তিনি সব সময় মানুষের পাশে আছেন। তাই এর সমাধান তিনিই করে দেবেন।
তাই আবাস যোজনার বরাদ্দ বা ১০০ দিনের কাজের বকেয়া না দলে মমতা সাফ জানিয়ে দেন, ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বকেয়া টাকা কেন্দ্র না দিলে ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ধর্না শুরু করবে দলীয় কর্মীরা। রাজ্যের প্রতিটি বুথে ধর্না চালাবেন তৃণমূল কর্মীরা। এর জন্য যে ১১ লক্ষ মানুষের ১০০ দিনের কাজের টাকা বকেয়া আছে তাদের নিয়ে মিটিং করবেন।
উল্লেখ্য, তৃণমূল সূত্রের দাবি, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা থেকে কেন্দ্রের পাওনা ৯,৩৩০ কোটি টাকা, ১০ দিনের কাজ থেকে ৬,৯০০ কোটি টাকা, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনে ৮৩০ কোটি টাকা, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় ৭৭০ কোটি টাকা, স্বচ্ছ ভারত মিশনের অধীনে ৩৫০ কোটি টাকা, মিড ডে মিলের জন্য ১৭৫ কোটি টাকা এবং অন্যান্য প্রকল্পের জন্য বাংলার পাওনা অর্থ কেন্দ্রে আটকে রেখেছে। যদিও বকেয়া আদায়ের জন্য বেশ কিছুদিন ধরে তৃণমূল কংগ্রেস সক্রিয় রয়েছে। গত ২০ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করে বকেয়া কেন্দ্রীয় তহবিল নিয়ে আলোচনা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বৈঠকের পর তিনি বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রস্তাব দিয়েছেন, রাজ্য ও কেন্দ্রের আধিকারিকরা একসঙ্গে বসে বিষয়গুলি পরিষ্কার করতে পারেন। এমনকি জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে রাজ্য সরকারের আধিকারিকদের একটি দল নয়াদিল্লি সফরে গিয়ে তাদের কেন্দ্রীয় আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করে। ওইসব আধিকারিকদের মতে, তারা ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে কথিত অনিয়ম এবং সেগুলি সমাধানের জন্য গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
প্রতিনিধি দলটি কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের সচিব শৈলেশ কুমার সিংয়ের সাথেও দেখা করেন। মোদি সরকারের কেন্দ্রীয় টাকা দিতে দেরি হওয়ার প্রতিবাদে নভেম্বরে রাজ্য বিধানসভা চত্বরে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রীর নেতৃত্বে তৃণমূল বিধায়করা। তার আগে মহাত্মা গান্ধীর জন্মবার্ষিকীতে নয়াদিল্লির রাজঘাটে কেন্দ্রের টাকা দেওয়ার দাবিতে ধর্নায় নেতৃত্ব দেন দলের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রাজ্যের বকেয়া আটকে রাখা নয়, সোমবার কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার বিরুদ্ধেও অভিযোগ তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন যে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে গেরুয়া শিবিরকে ভোট না দিলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য বিজেপি জনগণকে হুমকি দিয়েছে।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে কোচবিহারের স্থানীয়দের, বিশেষ করে রাজবংশীদের ভোটার তালিকায় নাম রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
তিনি বলেন, বিজেপি নির্বাচনের জন্য কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে ব্যবহার করছে। গেরুয়া শিবিরকে ভোট না দিলে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) এবং সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (সিবিআই) গোয়েন্দাদের তাদের বাড়িতে পাঠানোর জন্য জনগণকে ফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী আরও দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, তিনি কোনও নির্দিষ্ট দেবতার উপাসনা করার জন্য বিজেপির কোনও আদেশ অনুসরণ করবেন না। মমতা বলেন, আমি রামায়ণ, কুরঅান, বাইবেল এবং গুরু গ্রন্থ সাহিব অনুসরণ করি... গরিব মানুষের বাড়িতে গিয়ে বাইরে থেকে আনা খাবার খেয়ে নাটক করি না।’ মমতার আরও অভিযোগ, লোকসভা ভোটের আগে রাজনীতি করার জন্য কেন্দ্র সিএএ-র প্রসঙ্গ তুলছে। এর আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা শান্তনু ঠাকুর দাবি করেন, আগামী সাত দিনের মধ্যে গোটা দেশে সিএএ লাগু করা হবে।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct