নিজস্ব প্রতিবেদক, বহরমপুর, আপনজন: রবিবার বহরমপুর ট্রেক্সটাইল কলেজে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হল। চাতক ফাউন্ডেশন আয়োজিত আন্তর্জাতিক সেমিনারের বিষয় ছিল “আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আরবি ভাষা ও বিশ্ব বাজার”। এদিনের সেমিনারে বসেছিল চাঁদের হাট । সেমিনারের শুরুতেই সকলকে সালাম জানিয়ে মহান আল্লাহর শুকরিয়া প্রকাশ করে সেমিনারের সূচনা করেন চাতক সম্পাদক শেখ মফেজুল। মাওলানা বাবর আলির ক্বেরাতপাঠের মধ্য দিয়ে সেমিনার শুরু হয়। স্বাগত ভাষণ দেন চাতক এর সোশ্যাল মিডিয়া সম্পাদক অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান । পাক কথন পরিবেশন করেন সেমিনারের চেয়ারপার্সন ইতিহাসবেত্তা, চাতকের মুখ্য উপদেষ্টা খাজিম আহমেদ । আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ড মেহেদী হাসান, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড সাইদুর রহমান, মুখ্য আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড মাহফুজুর রহমান আখন্দ।
সেমিনারের চেয়ারপার্সন খাজিম আহমেদ পাক কথন উপস্থাপন করেন বিশ্বের আরবি ভাষা সম্পর্কিত ঐতিহাসিক অবদানের কথার মধ্যে দিয়ে। তিনি বলেন, ভারতের সাথে আরব দুনিয়ার ব্যবসা ও রাজনীতি সহ অন্যান্য সম্পর্কিত যে ভাব বিনিময় তা এক দুদিনের নয়, হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে আরব-আরবি ভাষার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে চলেছে। ভারত উপমহাদেশে মূলত ব্যবসাভিত্তিক জীবন জীবিকার কথা মহান নবীর সময় থেকেই চলে আসছে বলে তিনি উল্লেখ করেন । আরবি সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে কিভাবে কতজন ব্যক্তি অনন্য ভূমিকা গ্রহণ করেছে, তাও তিনি এক ঝলক তুলে ধরেন । কেন এই ধরনের সেমিনারের আয়োজন করতে হলো, তাও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বিশিষ্টজনদের এই বিষয় নিয়ে আলোচনা সভা, সেমিনার করার কথা বললেও, তারা উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। ফলত চাতককেই সেই কাজ করতে হচ্ছে আজ। আমার সেই ইচ্ছা, উদ্যোগ আজ সফল হল। আমি আশা করব আজ থেকে এই যাত্রা পথ আরো দীর্ঘতর হবে। তিনি আরো আশা ব্যক্ত করেন যে, আর্থ-সমাজিক উন্নয়ন কিভাবে আমাদের আরবি ভাষা চর্চার মাধ্যমে পরিবর্তন ঘটবে, তারও তিনি নয়া কৌশল উপস্থাপন করেন। তিনি আরো বলেন, চাতকের মাধ্যমে আমি এই জেলার সদর শহর বহরমপুরকে একটি আন্তর্জাতিক স্তরের সাংস্কৃতিক শহর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই । যার পথচলা ২৩ বছর আগেই শুরু হয়েছে এই চাতক ফাউন্ডেশন এর মাধ্যমে । শুধু সেমিনার করে শেষ নয়, এর সঙ্গে ডকুমেন্ট হিসাবে আমরা চাতকের বিশেষ সংখ্যাও প্রকাশ করতে পারলাম। এ এক অন্য অনুভুতি, আনন্দ, প্রাপ্তি । আমার বিশ্বস্থ সহযোগী পরম স্নেহভাজন মফেজুল সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে দিল। বাংলাদেশের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামি ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক তথা সেমিনারের মুখ্য আলোচক ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ এক নয়া তথ্য পরিবেশন করেন । তিনি বলেন ইসলামই একমাত্র আরবিসংস্কৃতি চর্চার ধারক ও বাহক, যা সারা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছে। আমি যদি এখন গুড মর্নিং বলি, পৃথিবীর অন্য প্রান্তে তখন সন্ধ্যাকালীন সময়, তাহলে সেই গুড মর্নিং বা সুপ্রভাত সেখানে চলে না। কিন্তু ইসলামি সংস্কৃতি বড় গ্রহণযোগ্য ভাষা হলো আসসালামু আলাইকুম, আল্লাহ আকবার, মাশাল্লাহ, সুভানআল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, ফি আমানিল্লাহ ইত্যাদি শব্দগুলো। যা সবই আরবি ভাষা। প্রসঙ্গত ড. সাইদুর রহমান, ডক্টর মেহেদী হাসান নানাভাবে ভাষা চর্চা ও কর্মসংস্থানের এবং অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক উপযোগিতার কথা জোরে সোরে তুলে ধরেন । মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রী, মুর্শিদাবাদ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র ছাত্রী সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তের অন্যান্য কলেজের ছাত্রছাত্রীরা এদিন হাজির ছিলেন। সেমিনারে হাজির ছিলেন বিভিন্ন নিজামিয়া মাদ্রাসার ছাত্র , আলেমসহ উৎসাহি ব্যক্তিবর্গ । সর্বোপরি খালিদা খাতুন ও নাদিরা খাতুন দুজন দুটি ইসলামী সংগীত পরিবেশন করে সবাইকে মোহিত করে দেন। এছাড়াও সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন কালিয়াচক কলেজের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুস্তাফা জামাল, কলকাতা বঙ্গবাসী কলেজের ইকোনমিক্স এর অধ্যাপক ড আব্দুল হাদী, দক্ষিণ দিনাজপুর আব্দুল গনি কলেজের ভূগোলের অধ্যাপক ড মোহাম্মদ ইসমাইল প্রমুখ। সমগ্র সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন চাতক ফাউন্ডেশন এর সম্পাদক শেখ মফেজুল । এদিন আনুষ্ঠানিক ভাবে চাতক পত্রিকার বিশেষ সংখ্যাসহ দুটি গ্রন্থও প্রকাশ হয় । এর মধ্যে শেখ মফেজুল সম্পাদিত চাতক প্রকাশন থেকে প্রকাশিত “ইসলামি অর্থনীতি ও বাঙালি মুসলমান উন্নয়নের পথ সন্ধান”। অন্যটি হল মহম্মদ সাহাবুদ্দিন এর “বাবরি মসজিদ হল রাম মন্দির”।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct