পিঁপড়ে ও ফড়িং
আহমাদ কাউসার
একটি বাগানে কয়েকটি পিঁপড়া খাবারের খুঁজে এলো। সামনে শীতের দিন আসছে। তাদের অনেক খবার সংগ্রহ করতে হবে। কারণ শীতে পিঁপড়া খাবার সংগ্রহ করতে পারেনা, শীতের কারণে গর্ত থেকে বের হতে পারে না। পিঁপড়েরা শীত সহ্য করতে পারেনা। পিঁপড়ে গুলেো মাটিতে কোন খাবার খুঁজে পেলনা। তাই তারা একটি পেয়ার গাছে খাবার খুঁজতে উঠলো। পিঁপড়েগুলেো মধ্যে সবচেয়ে বয়ষ্ক পিঁপড়েটা দেখতে পেল একটা ডালে একটা মাকড়সার জালে একটি ফড়িং আটকে আছে। নড়াচড়া করতে পারছেনা। বয়ষ্ক পিঁপড়ে ফড়িংকে ডেকে বললো, ’ফড়িং ভাই, শুনতে পাচ্ছ?তুমি কিভাবে মাকড়সার জালে আটকালে’?ফড়িং পিপড়ের ডাক শুনে জবাব দিল, ’ভাই আমি উড়ার সময় মাকড়সার জালটা খেয়াল করিনি, তুমি আমাকে বাচাও ভাই, আজ দুই দিন হলো এখানে আটকা পড়ে আছি, পেটে কোন দানা পরেনি’। পিপড়ে ফড়িংয়ের কথা শুনে বললো, ’তুমি চিন্তা করোনা আমি তোমাকে উদ্ধার করবো’। বয়ষ্ক পিঁপড়ের সাথে থাকা বাকি পিঁপড়ে গুলো অন্য ডালে খাবার খুঁজতেছিল। ফড়িংয়ে সাথে বয়ষ্ক পিঁপড়ের কথাগুলো ওরা শুনছিল। কথা শুনে ওরাও বয়ষ্ক পিঁপড়ের কাছে এলো এবং দেখলো ফড়িংটা মাকড়সার জালে আটকে আছে। বয়ষ্ক পিঁপড়ে বাকী পিঁপড়েদেরকে মাকড়াসা জাল কেটে ফড়িংটাকে উদ্ধার করতে বললো। যেই কথা সেই কাজ। বয়ষ্ক পিঁঁপড়েসহ ওরা মোট চারটা পিঁপড়ে ছিল। চার পিঁপড়ে মাকড়াসার জাল চার দিক থেকে কাটতে লাগলেো। কিছুক্ষণের মধ্যে মাকড়সার জাল কেটে ফড়িংটাকে উদ্ধার করলো। মাকড়সার জাল থেকে ফড়িং মুক্ত হতে পেরে পিপড়েগুলোকে কৃতজ্ঞতা জানাল ফড়িং। পিঁপড়েগুলোর সংগ্রহ করা খাবার ফড়িংকে খেতে দিল। ফড়িংটা দুইদিন যাবত না খেয়ে দুর্বল হয়ে পরেছে। ঠিকমতেো উড়তে পারছেনা। কিছুক্ষণপর বয়ষ্ক পিপড়ে ফড়িংটাকে বললো, ’ফড়িং ভাই, এবার তুমি তোমার বাসায় যাও আমরা খাবার খুঁজতে যাই। ফড়িংটা আস্তে আস্তে ডানা মেলে বাসার
দিকে চলে গেল। আর পিপড়েগুলো খাবার খুঁজতে গেল। তার কিছুদিন পর ফড়িংটা একটা ফসলের মাঠ দিয়ে উঠে যাচ্ছে, হঠাৎ তার দৃষ্টি গেল নিচের দিকে। খেয়াল করে দেখলো বয়ষ্ক পিপড়েটা একটা ক্ষেতের আইল দিয়ে পিলপিল করে হেঁটে যাচ্ছে। ফড়িংটা পিঁপড়েটাকে ডাক দিল, ’পিঁপড়ে ভাই, শুনছো’?পিঁপড়েটা উপর দিকে তাকিয়ে দেখতে পেল সেই ফড়িটা। ফড়িংটা নিচে নেমে এলো। ---কেমন আছো পিঁপড়ে ভাই?---হ্যাঁ, ভাই আছি কোনরকম। ---তুমি কেমন আছো---আমি বেশ ভালো আছি। ---তো, পিঁপড়ে ভাই, তুমি কোনরকম আছো কেন?, কি হয়েছে তোমার?---কি বলবো ভাই, সামনে শীত, তুমি তো জানো শীতকালে আমরা গর্ত থেকে বের হতে পারিনা। শীতের কারণে। তাই এই গরমেই আমাদেরকে শীতের খাবার সঞ্চয় করে রাখতে হয়। এই এলাকায় খাবারের সঙ্কট চলছে, সারাদিন ঘুরাঘুরি করে যে খাবার পাই সেগুলো প্রতিদিনের আহারেই যথেষ্ট নয়, আর সঞ্চয় তো দূরের কথা!---তাহলে তো বড় চিন্তার বিষয়। ---তো তোমার সাথের বাকি পিপড়েগুলো কোথায়?---ওরা অন্যদিকে খাবার সংগ্রহ করতে গেছে। ---তো, এই ফসলের জমিতে কিছু খাবার খুঁজে পাও নি?--এই জমিতে খাবার তো আছে, কিন্ত জমির ---মালিক জমিতে কীটনাশক দিয়ে রেখেছে। --ও, তাই!ফড়িং মনে মনে সে দিনের উপকারের কথা ভাবতে লাগলো। সেদিন এই পিঁপড়ে আমাকে উদ্ধার না করলে আমি মরে যেতাম। তাই পিঁপড়ের এই দুঃসময়ে তাকে সহযোগিতা করা দরকার। ---পিপড়ে ভাই, যদি কিছু মনে না কর, তাহলে আমি তোমার এই দুঃসময়ে তোমাকে সহযোগিতা করতে চাই--কি সহযোগিতা, ফড়িং ভাই?--নদীর ওপারে অনেক ফসলের জমি আছে। ফসল পেকেছে। সেইখানে কোন কীটনাশক নাই। আমি তোমাকে সেখানে নিয়ে যাব, তুমি ইচ্ছেমতো খাবার খেয়ে সঞ্চয়ের জন্য নিয়ে আসতে পারবে। পিঁপড়া ফড়িংয়ের কথা শুনে খুশি হলো। ফড়িংয়ের কথায় রাজি হলো। ফড়িং পিঁপড়েকে তার পিঠের উপর উঠে বসতে বললো, পিপড়ে ফড়িংয়ে পিঠে বসলো আর ফড়িং উড়াল দিয়ে নদী পাড় হলো। পিঁপড়ে ইচ্ছেমতো খাবার খেয়ে সঞ্চয়ের জন্য খাবার নিয়ে আসলো। এভাবে প্রতিদিন ফড়িং পিঁপড়েকে নদীর ওপারে নিয়ে যায়, আর পিপড়েও প্রতিদিন খাবার খেয়ে সঞ্চয়ের জন্য নিয়ে আসে।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct