এম মেহেদী সানি, কলকাতা, আপনজন: কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকেই সাম্প্রদায়িক বাতারবরণ তৈরি হয়েছে দেশজুড়ে। সেই সাম্প্রদায়িকতার বিষ প্রবেশ করেছে পশ্চিমবাংলায়ও । বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কুকুর ও মুসলিম প্রবেশ বন্ধের আপত্তিকর ‘নোটিশ’ থেকে শুরু করে স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞের মুসলিম গর্ভবতীকে চিকিৎসা প্রত্যাখ্যান- সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনাসমূহ নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবার কলকাতা মেডিকেল কলেজের নাক কান গলা বিভাগের অধ্যাপক ডা. বিজন অধিকারীর বিরুদ্ধে ইন্টার্ন ডাক্তারকে “সন্ত্রাসী” বলার অভিযোগ উঠল। ইন্টার্ন ডাক্তারের পোশাক সম্পর্কেও ওই অধ্যাপক আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যেই ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে মেডিকেল কলেজ ছাত্র ইউনিয়ন। তাঁরা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়ে শনিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “মেডিকেল কলেজ স্টুডেন্টস ইউনিয়ন কলেজে স্বাধীনতার পরিবেশ গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে সমস্ত শিক্ষার্থীর তাদের জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বৈষম্যহীন পরিবেশে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার অধিকার রয়েছে। একজন ইন্টার্ন ডাক্তারের পোশাক সম্পর্কে অধ্যাপক ডা. বিজন অধিকারীর সাম্প্রতিক মন্তব্য এবং তাকে “সন্ত্রাসী” বলা মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং গভীরভাবে উদ্বেগজনক। এই ধরনের মন্তব্য শ্রদ্ধা ও মর্যাদার নীতিকে ক্ষুন্ন করে যা কলকাতা মেডিকেল কলেজের মৌলিক বৈশিষ্ট্য। আমরা পরিস্থিতিটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করছি এবং এটি মোকাবেলায় যথাযথ ব্যবস্থা নেব। আমরা অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই এবং আমরা এই ধরনের বিভেদ সৃষ্টিকারী ও সাম্প্রদায়িক ধারণার বিরুদ্ধে।”
অভিযোগ, গত সপ্তাহের শুক্রবার ওয়ার্ড রাউন্ড এর সময় একজন ইন্টার্ন ডাক্তারের দাড়ি ছোট করে রাখতে পরামর্শ দেওয়ার সময় ‘সন্ত্রাসী’ বলে আখ্যায়িত করেন। একই ঘটনা ঘটে চলতি সপ্তাহের সোমবার, এ দিন ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিহিত একজন ইন্টার্ন ডাক্তারকে ওয়ার্ড রাউন্ড চলাকালীন পোশাকের কারণে অধ্যাপক ডা. বিজন অধিকারী বের করে দেন বলে অভিযোগ। জানা গিয়েছে দু’জন ইন্টার্ন ডাক্তারই মুসলিম। এই ঘটনায় কলকাতা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
এ বিষয়ে কলকাতা মেডিকেল কলেজের নাক কান গলা বিভাগের ওই অধ্যাপক ডা. বিজন অধিকারীকে ফোন করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে ‘আপনজন’-কে বলেন, “ওটা (সন্ত্রাসী) মজা করে বলেছিলাম, যেহেতু স্টুডেন্ট, এইজন্য বলেছিলাম দাড়িটা একটু ছোট করে রাখতে। এখন দেখছি ওর তো মনে হয় খারাপ লেগেছে, এমন কিছু খারাপ ভাবে বলিনি। এখন দেখছি স্টুডেন্টদের কিছু বলাও যাবে না, বকাও যাবে না, এখন মনে হচ্ছে আসলে ভালোও চাইতে নেই। এবার থেকে কাউকে কিছু বলব না। এ বিষয়ে আমার কোন মন্তব্য নেই যা বলবেন আমার স্যার বলবেন। অভিযোগ এখন আমার বিরুদ্ধে যে কেউ করতে পারে, এখন আপনার বিরুদ্ধেও আমি অভিযোগ করতে পারি কেন কল করলেন আমাকে। কে কি করল সেটা যদি মনে হয় তাহলে তদন্ত সাপেক্ষ, তখন যা হওয়ার হবে।”
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct