আপনজন ডেস্ক: গত ৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়কে বহাল রেখে সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে কর্মরত ২৫,৭৫৩ জন শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীকে বরখাস্ত করে। পরে, সুপ্রিম কোর্ট শিক্ষকদের আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের চাকরিতে বহাল রাখার অনুমতি দেয়। কিন্তু অশিক্ষক কর্মচারীদের ক্ষেত্রে সেই নির্দেশ দেওয়া হয়নি। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের স্কুলগুলিতে নিয়োগপ্রাপ্ত গ্রুপ-সি এবং গ্রুপ-ডি কর্মীরা চরম সংকটে পড়েন। সেই সংকট থেকে তাদের বাঁচাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে মাসিক বিশেষ ভাতা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে শনিবার মুখ্যমন্ত্রী চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষকর্মীদের উদ্দ্যেশ্যে বলেন, আপনারা বেতন পাচ্ছেন না। আমাদের বেশ কিছু সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্প রয়েছে। আমরা শিক্ষা বিভাগকে এর বাইরে রেখেছি। শনিবার বিকেলে বিক্ষোভকারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে টেলিফোনে কথোপকথনে মমতা বলেন, মুখ্যসচিব, রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী ও আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করেই আমরা সমাধানসূত্র বের করেছি।
মমতা বলেন, রাজ্য সরকার বহু বছর ধরে ডানলপের শ্রমিকদের একই রকম ১০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিয়ে আসছে। আমরা স্কুলের গ্রুপ-সি কর্মীদের ২৫ হাজার টাকা এবং গ্রুপ-ডি কর্মীদের ২০ হাজার টাকা মাসিক ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মমতা বলেন, ওরা রাজি কি না, তা আমাকে জানাতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ পুরো বাছাই প্রক্রিয়াটি দুর্নীতি গ্রস্ত এবং ব্যাপক আকারে কারচুপি ও জালিয়াতি হয়েছে যা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।
দুই সপ্তাহ পরে, সুপ্রিম কোর্ট নবম, দশম, একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষককে শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেয় এবং রাজ্য সরকারকে নিয়োগ প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু ‘সি’ ও ‘ডি’ গ্রুপের কর্মীদের কোনো ছাড় দেওয়া হয়নি।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি খান্না বলেছিলেন, আমরা কেবল শিক্ষকদের মেয়াদ বাড়াব, চতুর্থ শ্রেণীভুক্ত প্রার্থীদের নয়। গ্রুপ সি এবং ডি কর্মীদের ক্ষেত্রে আমরা প্রার্থনা গ্রহণ করতে আগ্রহী নই, কারণ দুর্নীতিগ্রস্ত প্রার্থীর সংখ্যা যথেষ্ট বেশি।
যে শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারীরা রাস্তায় নেমেছেন সেইসব যোগ্যদের তালিকা আর’ যারা চাকরি সুরক্ষিত করতে অসৎ উপায় অবলম্বন করেছেন অর্থাৎ অযোগ্য প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ্যে আনার আশ্বাস দিয়েছেন মমতা।
এই সপ্তাহের গোড়ার দিকে একটি প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে মমতা তালিকা পৃথকীকরণের জন্য জোর দেওয়ার জন্য বিক্ষোভকারীদের তিরস্কার করেছিলেন, দাবি করেছিলেন যে এটি তাদের উদ্বেগের বিষয় নয়।
তিনি বলেন, ‘আমি যোগ্য ও অযোগ্য প্রার্থীদের নিয়ে কথা বলব না, কারণ আমি প্রমাণসহ কোনো তালিকা পাইনি। আমরা সুপ্রিম কোর্টের আদেশের বিষয়ে সবার জন্য রিভিউ (পিটিশন) করব। ওদের উচিত ছিল আমাদের বলা যে এই প্রার্থীদের বাদ দাও, এই প্রার্থীদের রেখে দাও, কিন্তু আমাদের বলা হয়নি।
সুপ্রিম কোর্ট চাকরি খারিজ করার পর থেকেই মমতা নিয়োগ কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার জন্য মামলা দায়ের করা আইনজীবীদের দোষারোপ করেছেন।
মমতা বলেন, মে মাসের প্রথম সপ্তাহে আমরা রিভিউ পিটিশন জমা দিতে পারব। নেওয়া হচ্ছে আইনি পরামর্শ। তাদের যাতে আবার পরীক্ষায় বসতে না হয়, সেদিকেও আমরা চেষ্টা করব। শীর্ষ আদালত যদি পুরোপুরি খারিজ করে দেয়, তাহলে আমরা আইন লঙ্ঘন না করে চাকরি রক্ষার বিকল্প পথ খুঁজব।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct