আপনজন ডেস্ক: ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের বারানসিতে কোনো হিন্দু মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের ওপর জ্ঞানবাপি মসজিদ তৈরি কি না, তা নিরূপণের জন্য মসজিদ চত্বরে সমীক্ষা কাজ চলবে। এই বিষয়ে এলাহাবাদ হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট তা বহাল রাখল। শুক্রবার সকাল থেকেই সেই সমীক্ষার বা তদন্তের কাজ শুরু হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জে বি পর্দিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রর বেঞ্চ আজ এই রায় বহাল রাখার পাশাপাশি বলেন, সমীক্ষার নামে কোনো খোঁড়াখুঁড়ি করা যাবে না। খননকাজ করা যাবে না। কাঠামোর কোনোরকম ক্ষতি করা যাবে না। সমীক্ষা চালাতে হবে সম্পূর্ণভাবে বিজ্ঞানভিত্তিক। উত্তর প্রদেশ রাজ্য সরকারের পক্ষে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা এই বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতকে নিশ্চিত করে বলেছেন, মসজিদের কোনো অংশের কোনো রকম ক্ষতি করা হবে না। খোঁড়াখুঁড়ি হবে না। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানান, সমীক্ষা নিয়ে বারানসির জেলা আদালত যে রায় দিয়েছিলেন, তাতে কোনো ভ্রান্তি চোখে পড়েনি। এই সমীক্ষা চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়াকে। বারানসি আদালতে চার সপ্তাহের মধ্যে তাদের সেই সমীক্ষা রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। মূল মামলার নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত ওই সমীক্ষার রিপোর্ট গোপন রাখার অনুরোধ জানিয়েছিল মসজিদ কমিটি। সুপ্রিম কোর্ট তা অগ্রাহ্য করে। সুপ্রিম কোর্ট জানায়, এএসআইয়ের রিপোর্ট বিচারাধীন আদালতে পাঠানো হবে ও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন জেলা জজ। যদিও আঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, জ্ঞানবাপি মসজিদের এএসআই সমীক্ষা ইতিহাসে যেতে চায় ও ‘অতীতের ক্ষত পুনরুদ্ধার’ করবে।
প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের সামনে মসজিদ পরিচালনা কমিটির পক্ষে বরিষ্ঠ আইনজীবী হুজেফা আহমাদি বলেন, এএসআই যে কাজ করেছে তা ‘ইতিহাস অনুসন্ধান’, উপাসনালয় আইন লঙ্ঘন করছে এবং ভ্রাতৃত্ব ও ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর আঘাত হানছে। শুক্রবার সকাল সাতটা থেকে বারানসির জ্ঞানবাপি মসজিদে এএসআইয়ের সমীক্ষা শুরু হয়। দুপুর ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত সমীক্ষার কাজ বন্ধ রাখা হয় পবিত্র জুম্মার নামাজের জন্য। ওই এলাকায় ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আইআইটি কানপুরের একটি বিশেষজ্ঞ দল শুক্রবার হাজির হয়েছে আদালতের আদেশ মেনে জ্ঞানবাপি মসজিদ প্রাঙ্গণে বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা চালানোর প্রক্রিয়ায় এএসআইকে সহায়তা করার জন্য। সমীক্ষার জন্য গ্রাউন্ড পেনিট্রেশন রাডার (জিপিআর) ব্যবহারে সহায়তা করার জন্য এএসআই জুলাই মাসে আইআইটি কানপুরের আর্থ সায়েন্সেস বিভাগের সাথে যোগাযোগ করেছিল। আইআইটি কানপুরের আর্থ সায়েন্সবিভাগের প্রধান অধ্যাপক জাভেদ এন মালিক এএসআই বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এই সমীক্ষার নেতৃত্ব দেবেন। অধ্যাপক মালিকের মতে, জিপিআর একটি শক্তিশালী অ-অনুপ্রবেশকারী এবং অ-ধ্বংসাত্মক কৌশল যা ইমেজিং ভূগর্ভস্থ কাঠামো এবং সাব-সারফেস ম্যাপিংয়ে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি অ-ধ্বংসাত্মক জিওফিজিক্যাল পদ্ধতি যা রাডার ডাল ব্যবহার করে পৃষ্ঠের নীচে, বিশেষত ভূগর্ভস্থ কিছু চিত্রিত করতে পরিচালিত হয়। এটি সমাধিস্থ শিল্পকর্ম, কাঠামো এবং প্রত্নতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যগুলি সনাক্ত করতে প্রত্নতত্ত্বে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct