আপনজন ডেস্ক: দেখতে দেখতে বিশ্বকাপ শুরুর মাস অক্টোবর চলেই এল। আর ৪ দিন পরেই ভারতে বসতে চলেছে ক্রিকেট মহাযজ্ঞ। উইজডেনের চোখে যে ৬ বোলার বিশ্বকাপে সবচেয়ে উইকেট নিতে পারেন, তাঁদেরই নিয়েই এ আয়োজন—
কুলদীপ যাদব (ভারত)
চোট ও ছন্দহীনতা মিলিয়ে বেশ কিছুদিন ভারতীয় দলের বাইরে ছিলেন কুলদীপ যাদব। তবে সেরে ওঠার পর কুলদীপ যেন নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করেছেন। ভারতের এই ‘চায়নাম্যান’ নিজের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে দৃশ্যমান অনেক কাজ করেছেন। বিশ্বকাপে অংশ নিতে চলা দলগুলোর মধ্যে এ বছর ওয়ানডে তাঁর উইকেটসংখ্যাই সবচেয়ে বেশি (৩৩ উইকেট)। ফাইনালে শ্রীলঙ্কা মাত্র ৫০ রানে গুটিয়ে যাওয়ার দিনে বোলিং করতে পেরেছেন শুধু ১ ওভার। তবু এশিয়া কাপে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিদের তালিকায় ছিলেন তিনে (৯ উইকেট)। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতিও জুটেছে। বিশ্বকাপেও মাঝের ওভারগুলোতে তিনি ভারতের ‘ট্রাম্প কার্ড’ হতে পারেন।
শাহিন আফ্রিদি (পাকিস্তান)
২০১৯ সালে নিজের প্রথম বিশ্বকাপের সময় একেবারেই তরুণ ছিলেন। পাকিস্তানের একাদশে ছিলেন ৫টি ম্যাচে। এতেই নিয়েছেন ১৬ উইকেট। বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩৫ রানে ৬ উইকেট নিয়ে পাদপ্রদীপের আলোয় চলে আসেন। সেটাই হয়ে যায় পাকিস্তানের বিশ্বকাপ ইতিহাসে সেরা বোলিং ফিগার। ৪ বছর পর সেই শাহিন আফ্রিদি দলের প্রধান ফাস্ট বোলার। নাসিম শাহ চোটে পড়ে বিশ্বকাপ দল থেকে ছিটকে পড়ায় বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে আফ্রিদিকে। ফুল লেংথ সুইংয়ে শুরুতেই উইকেট তুলে নিতে সিদ্ধহস্ত তিনি। ডেথ ওভারে পিন পয়েন্ট ইয়র্কারগুলো ব্যাটসম্যানকে আরও বেকায়দায় ফেলে। এখন পর্যন্ত ৪৪ ওয়ানডে খেলে ২৩.৩৬ গড়ে ৮৬ উইকেট নিয়েছেন।
মিচেল স্টার্ক (অস্ট্রেলিয়া)
এ বছর মাত্র ৪টি ওয়ানডে খেললেও বিশ্বকাপ প্রস্তুতিটা যে মন্দ হচ্ছে না, সেটা গত রাতেই নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে হ্যাটট্রিক করে বুঝিয়ে দিয়েছেন। আগের দুই বিশ্বকাপে স্টার্কই ছিলেন সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। ২০১৫ সালে ট্রেন্ট বোল্টের সঙ্গে যৌথভাবে (২২ উইকেট), ২০১৯ সালে এককভাবে (২৭ উইকেট)। দুটি বিশ্বকাপ খেলেই সবচেয়ে বেশি উইকেট পাওয়া বোলারদের তালিকায় সেরা পাঁচে উঠে এসেছেন স্টার্ক। মাত্র ১৪.৮১ গড় আর ৪.৬৪ ইকোনমি রেটে নিয়েছেন ওই ৪৯ উইকেট। ইনিংসে সবচেয়ে বেশি তিনবার ৫ উইকেট নেওয়ার বিশ্বকাপ রেকর্ডটাও স্টার্কের।
যশপ্রীত বুমরা (ভারত)
যশপ্রীত বুমরার মতো ফাস্ট বোলার পাওয়াকে ভারত আশীর্বাদ হিসেবে দেখতেই পারে। তাঁর অনুপস্থিতি দলকে কতটা ভোগায়, সেটা গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই দেখা গেছে। পিঠে অস্ত্রোপচারের কারণে প্রায় ১১ মাস মাঠের বাইরে ছিলেন। গত আগস্টে ৩২৭ দিন পর ভারতের জার্সিতে খেলতে নেমেই হয়েছিলেন ম্যাচসেরা। তখন থেকে পূর্ণোদ্যমে বোলিং করছেন। তবে এই বিশ্বকাপ মাথায় রেখেই খেলেছেন বেছে বেছে। এ বছর যে ৫টি ওয়ানডে খেলেছেন, সেখানে বোলিং কোটা পূরণ করেছেন মাত্র দুবার। নিয়েছেন ৮ উইকেট। ২০১৯ বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছিলেন বুমরাই (১৮)।
ট্রেন্ট বোল্ট (নিউজিল্যান্ড)
বাংলাদেশে আসার আগে ইংল্যান্ড সফরেও খেলেছেন ২টি ওয়ানডে। সেই ২ ম্যাচেই নিয়েছেন ৮ উইকেট। ২০১৫ বিশ্বকাপে স্টার্কের সঙ্গে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি (২২ উইকেট) ছিলেন। ২০১৯ সালে নিয়েছিলেন ১৭ উইকেট, যা ওই বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বয়স ৩৪ পেরিয়েছে। স্টার্কের মতো বোল্টেরও এটা শেষ বিশ্বকাপ হতে পারে। আইপিএল খেলার ঢের অভিজ্ঞতা থাকায় এবারের বিশ্বকাপেও বোল্টকে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিদের তালিকায় রাখতেই হচ্ছে।
মোহাম্মদ সিরাজ (ভারত)
আইসিসি ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের ১ নম্বরে থেকে বিশ্বকাপ খেলতে নামছেন কোন বোলার, জানেন নিশ্চয়। মোহাম্মদ সিরাজ—একসময় আইপিএলে দেদার রান বিলানোর জন্য যাঁকে নিয়ে ট্রল হতো, সেই বোলারই এখন অন্যদের ছাড়িয়ে শীর্ষে! বল হাতে সিরাজ কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেন, সেটা তো সর্বশেষ এশিয়া কাপ ফাইনালেই দেখা গেছে। সেদিন ২১ রানে ৬ উইকেট নিয়ে রেকর্ড বইয়ে ঝড় তুলেছেন ২৯ বছর বয়সী পেসার। এ বছর ওয়ানডেতে ফাস্ট বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট তাঁর (৩০)। ৫ ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে এশিয়া কাপে ছিলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। বাংলাদেশের বিপক্ষে বিশ্রামে না থাকলে অথবা পাকিস্তানের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ম্যাচটা বৃষ্টিতে পণ্ড না হলে হয়তো এশিয়া কাপেও সবচেয়ে বেশি উইকেটের মালিক হতেন। এবার বিশ্বমঞ্চে তাঁর প্রমাণের পালা।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct