আপনজন ডেস্ক: দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার (এসএ) উপকূলজুড়ে দুই শতাধিক সামুদ্রিক প্রজাতির প্রাণহানি ঘটেছে। কয়েক সপ্তাহে বিষাক্ত শৈবাল বিস্তারের ফলে এ ঘটনা ঘটেছে। সংরক্ষণবিদরা একে ‘মাছের জন্য ভয়াবহ এক সিনেমা’ বলে বর্ণনা করেছেন। মার্চ থেকে ছড়িয়ে পড়া এই শৈবাল বিস্তার এখন প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে, যা কাছাকাছি ক্যাঙ্গারু দ্বীপের আকারের সমান। বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ ভেনেসা পিরোত্তা বলেন, এটি নজিরবিহীন ঘটনা, কারণ শৈবাল বিস্তার ক্রমাগত বাড়ছে। অন্য বিজ্ঞানীরা বলেছেন, শৈবাল থেকে নির্গত বিষের কারণে মাছ, রে ফিশ, হাঙরসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক জীব শ্বাসরোধে মারা যাচ্ছে। এ ছাড়া অজফিশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ব্র্যাড মার্টিন বলেন, শৈবাল বিস্তার সাধারণ ঘটনা হলেও বর্তমান বিস্তারের ‘ব্যাপকতা’ সামুদ্রিক জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছে।
শৈবালের বিষ গিল ও টিস্যুর ক্ষতি করে, যা লোহিত রক্তকণিকাকে আক্রমণ করে বলে জানান মার্টিন।
তিনি বলেন, শৈবাল ঘন হওয়ায় জলের অক্সিজেন কমে যাচ্ছে, ‘ফলে মাছ শ্বাসরোধে মারা যাচ্ছে। এটি মাছের জন্য ভয়াবহ এক সিনেমার মতো’। স্থানীয়দের পাঠানো মৃত সামুদ্রিক প্রাণীর ছবি দিয়ে ঘটনাটি নথিভুক্ত করা হয়েছে, যেখানে বড় সংখ্যায় হাঙর ও রে ফিশকে রক্তাক্ত অবস্থায় সৈকতে ভেসে উঠতে দেখা গেছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তিন মিটার দীর্ঘ একটি গ্রেট হোয়াইট হাঙরও মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
দুই শতাধিক প্রজাতির মধ্যে কিছু প্রজাতি বিশেষভাবে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, বিশেষ করে রিফ অঞ্চলের কাঁকড়া ও পাফার ফিশের মতো প্রাণী, যারা কম সচল ও বিষাক্ত শৈবাল থেকে সরে যেতে পারে না।
মানুষের জন্য শৈবাল সরাসরি ক্ষতিকর না হলেও উচ্চ মাত্রায় এক্সপোজার ত্বকে জ্বালাপোড়া ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এসএ সরকার সৈকতে বিবর্ণ পানি ও ফেনা দেখা দিলে সাঁতার না কাটার পরামর্শ দিয়েছে।
সাধারণত রৌদ্রোজ্জ্বল ও উষ্ণ আবহাওয়ায় শৈবাল বিস্তার ঘটে এবং গত সেপ্টেম্বর থেকে এসএ সমুদ্রের তাপপ্রবাহের সম্মুখীন, যেখানে তাপমাত্রা গড়ের চেয়ে প্রায় ২.৫ ডিগ্রি বেশি। মার্চ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় অস্বাভাবিক উষ্ণ আবহাওয়া এই শৈবাল বিস্তারের আকার ও স্থায়িত্ব বাড়িয়েছে।
এসএতে এই ধরনের বৃহৎ বিষাক্ত শৈবাল বিস্তারের শেষ ঘটনা ২০১৪ সালে রেকর্ড করা হয়েছিল।
এ ঘটনা বাণিজ্যিক মৎস্য শিকারকেও প্রভাবিত করেছে। কিছু এলাকায় আগাম শিকার বন্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় উপকূলবর্তী ব্যবসায়ীরা পর্যটকদের সংখ্যা কমে যাওয়ার সমস্যার মুখোমুখি, কারণ সৈকতে মৃত সামুদ্রিক প্রাণী ভেসে আসছে।
গবেষক ও এসএ সরকার পশ্চিম দিকে ছড়িয়ে পড়া শৈবাল বিস্তার নজরদারিতে রেখেছে।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct