সারিউল ইসলাম, ধুলিয়ান, আপনজন: লোকমুখে তাদের দোকানের নাম ছিল ‘মুহাব্বত কি দুকান’। ধুলিয়ান শহরের রতনপুর এলাকায় ছোট্ট একটি টালির ঘর ভাড়া নিয়ে সেখানেই ফুলের দোকান করেছিল দুই বন্ধু। হাসান আলি ও ভীম দাস দুই বন্ধু মিলে ফুলের ব্যবসা করত। পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠান বাড়িতে ফুলের কাজ বা বিয়ের গাড়ি সাজানো সবটাই করত তাঁরা। তাঁদের অধীনে আরও চার-পাঁচজন কাজ করত। কিন্তু প্রায় এক সপ্তাহের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও সেই দোকান খোলা হয়নি তাঁদের। কারণ, তাঁদের মোহাব্বত কি দুকান ‘ধুলিয়ান ফুল ভান্ডার’ ভাঙচুর করেছিল দুষ্কৃতিরা। শুক্রবার জুম্মার নামাজ পড়ার জন্য সকাল ১১ টার মধ্যে দোকান বন্ধ করে হাসান বাড়ি চলে গিয়েছিল। একইসঙ্গে বাড়ি যায় ভীমও। নামাজের পর দোকান খোলার কথা থাকলেও পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হওয়ায় বিকেলে দোকান খুলতে যায়নি তাঁরা। সেদিন সন্ধ্যায় ভীম হাসানের কাছে খবর পাঠায়, তাঁদের দোকান টি ভাঙচুর হয়েছে। দোকানের ভেতরে থাকা ফ্রিজ, ফুল, বিভিন্ন সরঞ্জাম ভেঙে নষ্ট করে দিয়েছে দুষ্কৃতিরা। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে হাসান ও ভীম কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না। শেষমেষ তাঁদের পরামর্শ দিয়ে পাশে থাকার আশ্বাস দেন হাসানের কলেজ শিক্ষক তথা পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক আসিফ ফারুক। তিনি জানান, “ওঁদের বর্তমান পরিস্থিতি খুব একটা ভালো না। হয়তো পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিত। আমি সংগঠনের তরফ থেকে ওঁদের কিছু আর্থিক সহায়তা তুলে দেব বলেছি। ওঁরা নিজেদের ব্যবসা আবার নতুনভাবে শুরু তো করুক। আমরা পাশে আছি।” হাসান জানান, প্রায় বছর সাতেক আগে একটি ফুলের দোকানে কাজ করত সে। সেখানে কিছুদিন পর ভীম কাজ শুরু করে। দুজনের মধ্যে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে বন্ধুত্বের সম্পর্ক। ২৮ বছর বয়সী হাসানের বাড়ি কাঞ্চনতলা কামাত এলাকায়। ২০ বছর বয়সী ভীমের বাড়ি রতনপুরে। তাঁরা একটা সময় খুব কাছের বন্ধু হয়ে যায়। এঁকে অপরের বাড়িতে যাওয়া-আসা, খাওয়া, বসা সব করত তাঁরা। তাঁদের বয়সের ফারাক থাকলেও বন্ধুতে কোন ঘাটতি ছিল না। প্রায় এক বছর আগে দুই বন্ধু সিদ্ধান্ত নেয়, তাঁরা নিজেরাই ফুলের দোকান করবে। এতে তাঁদের আয়ও বাড়বে, তাঁরা নিজ স্বাধীনতায় কাজ করবে। সেইমত রতনপুর এলাকায় থানা থেকে সামান্য দূরত্বে একটি দোকান ভাড়া নেয় দুই বন্ধু। নতুনভাবে পথচলা শুরু করে তাঁরা। কিন্তু দোকানের একবছর পূর্ণ না হতেই তাঁদের এমন ক্ষতি যেন সবকিছু স্তব্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু তারপরেও হাসান-ভীম হাল ছাড়েনি। কাঁধে কাঁধ রেখে দুই বন্ধু আবারও নতুনভাবে দোকান শুরু করতে উদ্যোগী হয়েছে। তাঁদের সম্প্রীতির বাঁধন অটুট করে ‘মোহাব্বত কি দুকান’ নতুনভাবে শুরু করতে পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন হাসানের শিক্ষক আসিফ ফারুক।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct