জাইদুল হক: দেশের অন্যতম শিল্প বিশ্লেষক সংস্থা হুরুন ইন্ডিয়া ‘৩৬০ ওয়ান ওয়েলথ হুরুন ইন্ডিয়া রিচ লিস্ট ২০২৩’ সম্প্রতি প্রকাশ করেছে। গত মাসে প্রকাশিত এই তালিকায় ভারতের যেসব ধন ব্যক্তি বা শিল্প গোষ্ঠীর কমপক্ষে এক হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে তাদের মধ্যে ১৩১৯জন স্থান পেয়েছেন। হুরুন ইন্ডিয়ার ১২তম প্রকাশিত এই তালিকায় নতুন ধনী যুক্ত হয়েছেন ২৭৮জন। হুরুন ইন্ডিয়ার রিপোর্টে দেখা গেছে, তাদের তালিকার থাকা ধনী ব্যক্তিদের সমষ্টিগত সম্পদ বেড়েছে ৮.৫ শতাংশ, যেখানে গড় সম্পদ কমেছে ৯.৩ শতাংশ। প্রায় ১,০৫৪ জন ব্যক্তি তাদের সম্পদ বৃদ্ধি বা একই রয়েছে, যার মধ্যে ২৭৮ জন নতুন মুখ ২৬৪ জনের সম্পদ হ্রাস পেয়েছে এবং ৫৫ জন বাদ পড়েছেন। শিল্প পণ্য, ধাতব ও খনির বিভাগভিত্তিক অবদানের দিক থেকে তালিকায় সর্বাধিক সংখ্যক নতুন প্রবেশকারী যুক্ত হয়েছে।
হুরুন ইন্ডিয়ার ধনী তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন মুকেশ আম্বানি। যার শিল্পগোষ্ঠীর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৮, ০৮,৭০০ কোটি টাকা। তারপরেই রয়েছেন গৌতম আদানি। আদানি গোষ্ঠীর সম্পত্তির পরিমাণ ৪,৭৪,৮০০ কোটি টাকা।
হুরুন ইন্ডিয়া রিচ লিস্ট ২০২৩-এ পশ্চিমবঙ্গকেও সংশ্লিষ্ট করেছে। সেই তালিকায় রাজ্যের অতি ধনীদের সম্মিলিত সম্পদ বেড়েছে ৩০ শতাংশ।
হুরুন ইন্ডিয়া ২০১৯ সালে প্রকাশিত পশ্চিমবঙ্গের ধনীদের তালিকায় ৪০জনকে সংশ্লিষ্ট করেছিল। ২০২৩-এর তালিকায় কলকাতার বাসিন্দা এমন ৫২জন ধনীকে স্থান দেওয়া হয়েছে।
ইন্ডিয়া রিচ লিস্ট সম্পর্কে বলতে গিয়ে ৩৬০ ওয়ান ওয়েলথ-এর প্র্যাকটিস হেডের ডিরেক্টর নিশিত দোশি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, পশ্চিমবঙ্গের ধনী তালিকার সদস্যদের মোট সম্পদের ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি রাজ্যের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনৈতিক প্রভাবের স্পষ্ট প্রমাণ। বিশেষ করে কলকাতা এই মর্যাদাপূর্ণ তালিকায় থাকা ৯৮ শতাংশ মানুষের পছন্দের বাসস্থান হিসেবে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে।
হুরুন ইন্ডিয়ার ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং প্রধান গবেষক আনাস রহমান জুনায়েদ বলেন, ২০২৩ সালের তালিকাভারতের ক্রমবর্ধমান সম্পদ সৃষ্টির এক মনোমুগ্ধকর ঝলক প্রদান করে। এই বছর, আমরা কেবল মাত্র পশ্চিমবঙ্গ থেকে ১৯ জন নতুন প্রবেশকারীকে অন্তর্ভুক্ত করতে দেখছি, যা রাজ্যের গতিশীল অর্থনৈতিক পরিবেশের প্রমাণ।
হুরুন ইন্ডিয়ার প্রকাশিত ২০২৩ সালের তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের ৫২ জন ধনীর তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাঙ্গুর গোষ্ঠী। বেনু গোপাল বাঙ্গুর অ্যান্ড িফ্যামিলির মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৫৭,১০০ কোটি টাকা। তাদের পণ্য সামগ্রীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল শ্রী সিমেন্ট। তার পরের স্থান গোয়েঙ্কাদের। সঞ্জীব গোয়েঙ্কা গোষ্ঠীর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৩৩,৯০০ কোটি টাকা। সঞ্জীব গোয়েঙ্কাদের ব্যবসার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বিদ্যুৎ বণ্টন ব্যবস্থা। সিইএসসি-র মালিক তারা। এছাড়া পার্কসার্কাসের কোয়েস্ট মল, কেবল ব্যবসা রয়েছে। তৃতীয় স্থানে পোশাক শিল্প ব্যবসায়ী রবি মোদি। বেদান্ত ফ্যাশন হল তাদের পোশাক সামগ্রীর মূল ব্র্যান্ড।
বিশেষ সূত্র জানাচ্ছে রাজ্যের শীর্ষ ধনীদের মধ্যে মাত্র চারজন বাঙালি রয়েছেন। এদের মধ্যে অন্যতম খাদ্য সামগ্রীর ব্যবসায়ী লক্ষ্মী চা গোষ্ঠীর দীপঙ্কর চ্যাটার্জি অ্যান্ড ফ্যামিলি রাজ্যের ধনী তালিকায় সাত নম্বর স্থানে রয়েছে। তাদের সম্পত্তির পরিমাণ ৭,৬০০ কোটি টাকা। তার পরেই রয়েছে ইমামি গোষ্ঠী। ইমামি গোষ্ঠীর রাধ্যে শ্যাম গোয়েঙ্কা অ্যান্ড ফ্যামিলির মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৭,২০০ কোটি টাকা। রাজ্যের ধনী তালিকায় ১৮তম স্থানে রয়েছে বাঙালি প্রতিষ্ঠান বিস্ক ফার্ম বিস্কুট গোষ্ঠী। বিস্ক ফার্মের অর্পণ পাল অ্যান্ড ফ্যামিলির মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৩,৬০০ কোটি টাকা।
২২তম স্থানে আছে বাঙালি স্বর্ণ প্রতিষ্ঠান সেনকো গোল্ড। সেনকো গোল্ডের শুভঙ্কর সেন অ্যান্ড ফ্যামিলির মোট সম্পত্তির পরিমাণ ২,৪০০ কোটি টাকা।
রাজ্যের আরও এক বাঙালি শিল্প প্রতিষ্ঠান পতাকা শিল্প গোষ্ঠীও রাজ্যের প্রথম পঞ্চাশের তালিকায় স্থান কেরে নিয়েছে। বিশিষ্ট শিল্পপতি মোস্তাক হোসেনের পতাকা শিল্প গোষ্ঠীর বিড়ি, রেশম, চা ছাড়াও আরও ব্যবসা রয়েছে। পতাকা শিল্প গোষ্ঠীর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ২,৩০০ কোটি টাকা। ২৫ তম স্থান পেয়েছে আরও দুই শিল্প প্রতিষ্ঠান শ্যাম স্টিল ইন্ডাস্ট্রিস ও উষা মার্টিন। তবে রাজ্যের মধ্যে পঞ্চাশতম স্থানে রয়েছে শ্যাম স্টিলের আরও এক কর্ণধার গোবিন্দ বেরিওয়ালা অ্যান্ড ফ্যামিলি যাদের মোট সম্পত্তির পরিমাণ হাজার কোটি টাকা।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct