সাদ্দাম হোসেন মিদ্দে, ভাঙড়, আপনজন: সাগরদিঘি বিধানসভা উপনির্বাচনে তৃণমূলের পরাজয়ের পর এবার সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্ক ধরে রাখতে তৎপর হল তৃণমূল কংগ্রেস। সাগরদিঘির প্রভাব যাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে না পড়ে তার জন্য এবার নতুন করে কোমর বেঁধে নামতে চলেছে রাজ্যের শাসক দল। সাগরদিঘি আর ভাঙড়— দুটি বিধানসভা নির্বাচনী কেন্দ্রে বৃহদাংশ ভোট সংখ্যালঘু। ২০১১ জনগণনা অনুযায়ী সাগরদিঘির মতোই ভাঙড়ে সংখ্যালঘু জনসংখ্যা ৬৭ শতাংশ। তাই তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে সাগরদিঘির সংখ্যালঘু ভোটের ভীতি এবার জোরকদমে কাজ করছে ভাঙড়ে। যদিও দলের ভরাডুবি নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস বিশেষ তদন্ত কমিটি গড়েছে। তারা তদন্ত শুরু করলেও তৃণমূলের হারের কারণ সংখ্যালঘু ভোটে ধস, না দলের অন্তর্ঘাত তা এখনও স্পষ্ট নয়। সেই তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের আগেই তৃণমূল কংগ্রেস এবার বিশেষ নজর দিল ভাঙড়ের উপর। ভাঙড়ের বিধায়ক তথা আইএসএফ নেতা পীরজাদা নওশাদ সিদ্দিকীকে পুলিশের গ্রেফতারির পর তার প্রভাব সাগরদিঘি বিধানসভার উপনির্বাচনে পড়েছির কিনা তা নিয়ে ধন্দ থাকলেও পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তৃণমূল কোনও ধরনের ঝুঁকি নিতে রাজি নয় ভাঙড়ে। আর সেক্ষেত্রে এবারও ভাঙড়ে যেন ‘ভ’ ভীতি কাজ করছে শাসক তৃণমূলের! ভরসা নেই ভূমিপুত্রের উপর! বরং ভরসা যেন ‘ব’ এর উপর! অর্থাৎ দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ভাঙড়ে কোনো ভূমিপুত্রকে তৃণমূলের সাংগাঠনিক দায়িত্ব নয়। বহিরাগততেই ভরা শাসকের। বহিরাগত রেজাউল করিমের পর এবার দায়িত্ব পড়শি সওকাত মোল্লার উপর।
শনিবার কলকাতার ভবানীপুরে নিজের বাড়িতে বিশেষ বৈঠক ডাকেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক তথা ভাঙড়ের পড়শি ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক সওকাত মোল্লা , ভাঙড়ের তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম, রেজাউল করিম, কাইজার আহমেদ, কাশেফুল করুব খাঁন, বাহারুল ইসলাম, আব্দুর রহিম মোল্লা, বাদল মোল্লা, প্রদীপ মন্ডলরা। বৈঠকে সওকাত মোল্লাকে ভাঙড়ের পর্যবেক্ষক নিযুক্ত করা হয়েছিল। এর আগে বীরভুমের চিকিৎসক রেজাউল করিমকে ভাঙড় বিধানসভা কমিটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়েছিল। ভাঙড় বিধানসভা এলাকার ১৩টি অঞ্চল দুটি ব্লকে বিভক্ত। একটি হল ভাঙড় ১এ ও ভাঙড় ২ নম্বর ব্লক। বর্তমানে দুটি ব্লকই সভাপতি শূন্য। একদিকে গোটা রাজ্যের মধ্যে ভাঙড়ে আনকোরা আইএসএফ জয় লাভ করে। সেখান থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা নওসাদ সিদ্দিকী। আইএসএফের শক্ত ঘাঁটিতেই দীর্ঘদিন ধরে সভাপতিহীন তৃণমূল। তার উপরে কথিত রয়েছে শাসকের আরাবুল, কাইজার, রেজাউল গোষ্ঠী এবং নানা উপগোষ্ঠী! ভূমিপুত্র নয় বহিরাগত দিয়েই আইএসএফকে টক্কর দিতে ছক কষেছে তৃণমূলের হাই কমান্ড। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন সওকাতের দায়িত্ব প্রদানে প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও মনে মনে গোঁসসা হতে পারে আরাবুল, কাইজারদের, মনে করছে দলের একাংশ। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।দায়িত্ব পেয়েই ভাঙড়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বরদাস্ত করা হবে না বলে বিভিন্ন গোষ্ঠীর নেতাদের সতর্ক করেন সওকাত মোল্লা। এদিন তিনি বলেন, ‘ছোট খাটো গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আছে। শীঘ্রই মেটাতে হবে।’ ভাঙড়ের তৃণমূলের দুই দোর্দন্ডপ্রতাপ নেতা আরাবুল ইসলাম ও কাইজার আহমেদকে এবিষয়ে আপনজন-এর পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হলে তাঁরা দুজনই বলেন দলে কোনো অবজারভার বা পর্যবেক্ষক পদ নেই। ভাঙড়ে সওকাতের দায়িত্ব সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে আপনজনকে ভাঙড়ের বামনেতা তুষার ঘোষ বলেন, “যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেই ক্যানিং পূর্বে বিধানসভা এলাকায় বিধানসভা নির্বাচনের পর প্রায় ২০০ বাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভাঙা হয়েছে। ভাঙড়ের জাগ্রত জনগণ বুলডোজারের রাজনীতি এখানে চলতে দেবে না। পঞ্চায়েত নির্বাচন যদি কিছুটা নিরপেক্ষ হয় তাহলে ভাঙড়ে তৃণমূলের আস্থিত্ব থাকবে না।”
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct