আজিম সেখ ও সেখ রিয়াজুদ্দিন, বীরভূম, আপনজন: আসানসোল জেল থেকে কলকাতায় নিয়ে যাবার পথে মঙ্গলবার সকাল পৌনে ন’টা নাগাদ অনুব্রত মণ্ডলের কনভয় থেমেছিল শক্তিগড়ে। সেখানে কচুরি, ল্যাংচা, রাজভোগ—ইত্যাদি খান অনুব্রত। সঙ্গে থাকা পুলিশকর্মীরাও ব্রেকফাস্ট সারেন সেখানে। কিন্তু সেই কচুরির দোকানের টেবিলেই অনুব্রতর সঙ্গে তিনজন যুবককে কথা বলতে দেখা যায়। আর তাই নিয়েই কৌতূহল তৈরি হয়েছে। দেখা গিয়েছে একজন সবুজ পাঞ্জাবি পরে ছিলেন। তিনি কচুরি খাওয়ার সময়ে অনুব্রতর কানে কানে কথা বলছিলেন। সামনের টেবিলে বসা দু’জনও ফিসফিস করছিলেন কেষ্টর সঙ্গে। জানা গিয়েছে ওই সবুজ পাঞ্জাবি পরা যুবকের নাম তুফান মিদ্দা। তিনি অনুব্রতর মেয়ে সুকন্যার গাড়ির চালক। আর একজন ছিলেন, তাঁর নাম কৃপাময় ঘোষ। কৃপা অনুব্রত ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা হিসেবে পরিচিত। তৃতীয়জনের পরিচয় জানা যায়নি।
শক্তিগড়ের ওই কচুরি-ল্যাংচার দোকানে বিল হয়েছিল ৯৯৫ টাকা। সেই টাকা তুফান মিটিয়েছেন বলে দাবি দোকান মালিকের। এখন প্রশ্ন উঠছে, অনুব্রত ছিলেন পুলিশি ঘেরাটোপে।তাহলে কীভাবে এই তিনজন তাঁর সঙ্গে দেখা করলেন, কথা বললেন এবং একসঙ্গে বসে খাওয়াদাওয়াও করলেন? বিজেপি এই নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে। গেরুয়া শিবিরের বক্তব্য, পুলিশের সঙ্গে সেটিং করেই ওই দোকানে আগে থেকে পৌঁছে গিয়েছিলেন তুফান, কৃপাময়রা। তারপর বেছে বেছে ওই দোকানেই কনভয় থামিয়ে অনুব্রতর ব্রেক ফাস্টের বন্দোবস্ত করে পুলিশ। জোকা ইএসআই পর্যন্ত পুলিশেরই দায়িত্ব কেষ্টকে পৌঁছে দেওয়া। তারপর ইডি তাঁকে নিয়ে দিল্লি যাবে। আসানসোল জেলে অনুব্রত থাকাকালীন যখন তাঁকে আদালতে পেশ করা হতো বীরভূমের বিভিন্ন তৃণমূল নেতা দেখা করতে যেতেন। তাঁদের নানান সাংগঠনিক নির্দেশও দিতেন কেষ্ট। কাউকে বলতেন ময়ূরেশ্বরটা ভাল করে দেখে নিতে হবে। কাউকে বলতেন মুরারইয়ে প্রতি সপ্তাহে কর্মসূচি চাই। এবার বাংলা ছেড়ে দিল্লি যেতে হচ্ছে তাঁকে। তার আগে শক্তিগরের খাবারের দোকানে এই তিনমূর্তির সঙ্গে অনুব্রতর কথাবার্তা নতুন জল্পনা, কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, এই ঘটনাকে টেনে ইডি দেখাতে পারে অনুব্রত ঠিক কতটা প্রভাবশালী। যাঁর জন্য পুলিশ ফাঁক তৈরি করে দেয় যাতে মেয়ের গাড়ির চালক থেকে ঘনিষ্ঠ নেতা দেখা করতে পারেন, কচুরি খাওয়াতে পারেন। এখন দেখার দিল্লিতে যাওয়ার পর অনুব্রতর ভবিষ্যত্ কোন পথে বাঁক নেয়।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct