সুইডেনের মেয়ে গ্রেটা থুনবার্গ। এখন বয়স তার উনিশ। ষোল বছর বয়স থেকে তার নাম ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়। অভিনেতা স্তানতে থুনবার্গ ও অপেরা গায়িকা ম্যালেনা আরমানের মেয়ে গ্রেটা। ২০০৩ সালে তার জন্ম। যখন তার বয়স মাত্র আট, তখন জলবায়ু পরিবর্তনের কথা শোনে সে। সে শোনে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবী ধীরে ধীরে এগিয়ে যাবে মৃত্যুর দিকে। সে প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। গরম বাড়ছে। বরফ গলে যাচ্ছে। ধূসর হয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর সবুজ বনভূমি, চারদিকে নেমে আসছে মরুভূমির অভিশাপ। এ নিয়ে লিখেছেন দিলীপ মজুমদার।
সুইডেনের মেয়ে গ্রেটা থুনবার্গ। এখন বয়স তার উনিশ। ষোল বছর বয়স থেকে তার নাম ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়। অভিনেতা স্তানতে থুনবার্গ ও অপেরা গায়িকা ম্যালেনা আরমানের মেয়ে গ্রেটা। ২০০৩ সালে তার জন্ম। যখন তার বয়স মাত্র আট, তখন ক্লাইমেট চেঞ্জ বা জলবায়ু পরিবর্তনের কথা শোনে সে। সে শোনে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবী ধীরে ধীরে এগিয়ে যাবে মৃত্যুর দিকে। সে প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। গরম বাড়ছে। বরফ গলে জল হয়ে যাচ্ছে। ধূসর হয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর সবুজ বনভূমি, চারদিকে নেমে আসছে মরুভূমির অভিশাপ। বড় বড় দেশের নেতারা মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। জলবায়ু সম্মেলন হচ্ছে বটে, কিন্তু তাতে কাজের কাজ হচ্ছে না কিছুই। এ সব ঘটনার তীব্র প্রতিক্রিয়া হল কিশোরী গ্রেটার মনে। বয়স্ক মানুষের মনে যে প্রতিক্রিয়া হওয়া দরকার। খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিল গ্রেটা। অবসাদে ভুগতে লাগল। মা-বাবা চিন্তিত। ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন গ্রেটাকে। কাউন্সেলিং শুরু হল। জানা গেল গ্রেটা ‘এসপারজার সিন্ড্রোম’এর শিকার। এটা এক ধরনের এ এস ডি বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার।
চিকিৎসায় সুস্থ হতে লাগল সে। কিন্তু মুখে তার এক কথা, ‘পৃথিবীকে না বাঁচাতে পারলে আমাকে মরে যেতে হবে’। এ বড় আশ্চর্যের কথা। এই পুঁচকে মেয়ে কিভাবে বুকের মধ্যে বিশ্বলোকের সাড়া অনুভব করল ! রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন না, ‘আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া / বুকের মাঝে বিশ্বলোকের পাবি সাড়া’। গ্রেটার যাঁরা সমালোচক, তাঁদের এই কথাটা স্মরণে রাখতে বলি। আর বুকের মধ্যে বিশ্বলোকের সাড়া যে অনুভব করে, তাকে তো কিছুতেই বেঁধে রাখা যায় না। গ্রেটার মা-বাবাও তাকে বেঁধে রাখতে পারলেন না। ২০১৮ সাল। সুইডেনের নির্বাচন। এই সুযোগটা নিল গ্রেটা। প্রতি শুক্রবার স্কুলে না গিয়ে সে সুইডেনের পার্লামেন্টের সামনে বসে পড়ল প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে। সে প্ল্যাকার্ডে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিবিধানের আবেদন। পার্লামেন্টের সামনে বসে আছে একা এক কিশোরী। যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তো একলা চলো রে। প্রথম প্রথম বিজ্ঞ বয়স্ক মানুষ তাকে উপেক্ষা করেছে। ‘ডেঁপো মেয়ে’ বলে সমালোচনা করেছে। কেউ বা বলেছে ‘অবাধ্য, ভারসাম্যহীন কিশোরী’। কিন্তু কোন সমালোচনা দমাতে পারে নি কিশোরীটিকে। জাগিয়া উঠেছে পরাণ যখন, জগতে তখন কিসের ভয় ? গ্রেটার এই প্রতিবাদের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ধীরে ধীরে। তার আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে বেলজিয়াম, কানাডা, আমেরিকা, ইংল্যাণ্ড, ফিনল্যাণ্ড, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, নেদারল্যাণ্ড প্রভৃতি দেশে। জন্ম নিয়েছে ‘ফ্রাইডেজ ফর ফিউচার’।
দাভোসের ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামে বক্তৃতা করেছে গ্রেটা। বক্তৃতা করেছে আরও অনেক জায়গায়। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকার নিউই্য়র্কে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সভায় তার বক্তৃতা সবচেয়ে স্মরণীয়। তাবড় রাজনৈতিক নেতাদের চোখে চোখ রেখে, সাম্রাজ্যবাদকুলচূড়ামণি ডোনাল্ড ট্র্যাম্পের রক্তচক্ষুকে পরোয়া না করে গ্রেটা তাঁদের স্পর্ধার দিকে আঙুল তুলেছে, বলেছে ‘হাউ ডেয়ার ইউ’--’কি আস্পর্ধা আপনাদের’ ! গ্রেটা বলেছে, ‘ আপনারা আপনাদের ফাঁকা কথায় চুরি করেছেন আমার স্বাস্থ্য ও আমার শৈশব। মানুষ ধ্বংসের মুখোমুখী অথচ আপনারা অর্থনৈতিক অগ্রগতির রূপকথা বলে চলেছেন। ‘ ধনকুবের ডোনাল্ড ট্যাম্প পরিহাস করে বলেছিলেন নাম কেনার জন্য গ্রেটা এ সব নাটক করছে। বলবেনই তো। কারণ ট্র্যাম্প জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপারটাই স্বীকার করেন না। আমরা বলেছি ২০০৩ সালে গ্রেটার জন্ম। তার মানে এখন তার বয়স ২২। কিন্তু সম্প্রতি অনলাইনে যে ছবিটি ছড়িয়ে পড়েছে তাতে মনে হচ্ছে গ্রেটার বয়স ১২১ বছর। এই ছবিটি ১৮৯৮ সালের। পাওয়া গেছে ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের বিশেষ এক আর্কাইভ থেকে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে তিনটি শিশু সোনার খোঁজে মাটি খুঁড়ছে। এ সময়ে মানুষ পাগলের মতো সোনার খোঁজে ছুটে বেড়াচ্ছিল। উত্তর-পশ্চিম কানাডার ইয়ুকন অঞ্চলে এই ছবি তুলেছিলেন এরিক হেগ নামে এক আলোকচিত্রশিল্পী। ছবিতে সামনের দিকের কিশোরীটিকে দেখতে অবিকল গ্রেটা থুনবার্গের মতো। তার মুখের আদল, তার বেণীবন্ধন সবই অবিকল। পরিহাসরসিকরা বলেছেন . মানবজাতিকে রক্ষা করতে গ্রেটা এসেছে টাইম ট্রাভেল করে।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
(লেখক সিনিয়র ফেলোশিপপ্রাপ্ত গবেষক)
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct