এম মেহেদী সানি, খলতপুর, আপনজন: মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের পর সর্বভারতীয় মেডিকেল প্রবেশিকা পরীক্ষা ‘নিট’এ নজরকাড়া সাফল্য পেয়েছে আল-আমীন মিশনের শিক্ষার্থীরা । নিট’এ ৫০০-র বেশি নম্বর পেয়ে মিশনের ৪৭১ জন ছাত্র-ছাত্রী মেডিকেল পড়ার সুযোগ পেতে চলেছে । স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বাসিত গোটা আল-আমীন পরিবার ৷ আর সেই আনন্দ ভাগ করে নিতে রবিবার সকাল থেকেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে আল-আমীন মিশনের বিভিন্ন শাখার নিট’এ সফল শিক্ষার্থীরা সপরিবারে খলতপুরের মূল ক্যাম্পাসে উপস্থিত হন ৷ প্রথম সারিতে থাকা প্রায় শতাধিক হবু ডাক্তারদের কাছে পেয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানের আয়েজন করেন আল-আমীন মিশনের সাধারণ সম্পাদক এম নূরুল ইসলাম । সদ্য সাফল্যের স্বাদ পাওয়া উচ্ছ্বাসিত ছাত্র-ছাত্রীদের আগামী দিনের পথ চলা সহজ করতে একতরফা দিকনির্দেশনাও দেন এম নূরুল ইসলাম, মিশনের সুপারিনটেনডেন্ট মারুফ আজম ৷ ডাক্তার হওয়ার পরে সমাজের বৃহত্তর পরিসরে কাজ করার জন্য ডাব্লিউবিসিএস, আইএএস অফিসার, মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল হওয়ার স্বপ্ন দেখান তাঁরা ৷
সাফল্যের পরিসংখ্যান তুলে ধরতে গিয়ে এম নূরুল ইসলাম পড়ুয়াদের ফলাফল বিশ্লেষণ করে বলেন, ‘নিট’এ ৫০০-র বেশি নম্বর পেয়ে মিশনের ৪৭১ জন ছাত্র-ছাত্রী মেডিকেল পড়ার সুযোগ পেতে চলেছে ।’ সর্বভারতীয় পর্যায়ে যাদের স্থান ৫২৬৭২ এর মধ্যে ৷ হবু ডাক্তারদের শুভেচ্ছা জানিয়ে তাঁদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তোমাদেরকে সফলতার উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে হবে, শুধুমাত্র ডাক্তার হলেই চলবে না ৷ মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল হতে হবে ৷’ আল-আমীন প্রাক্তনী,স্বনামধন্য ডাক্তারদের কথা উল্লেখ করে তাঁদের মতো সাফল্য পেতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান ৷ প্রকৃত মানুষ হয়ে সমাজসেবায় ব্রতী হওয়ার পাশাপাশি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সকলকে এগিয়ে আসার কথা বলেন এম নূরুল ইসলাম ৷ মিশনের সুপারিনটেনডেন্ট মারুফ আজম এ দিন হবু ডাক্তারদের এমবিবিএস সম্পন্ন করার পর ডাব্লিউবিসিএস, আইএএস অফিসার হওয়ার লক্ষে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন ৷ এ সময় রাজ্যের সংখ্যালঘু বিষয়ক মাদ্রাসা শিক্ষা দপ্তরের প্রধান সচিব আইএএস পিবি সেলিমের শিক্ষা জীবনের কথা তুলে ধরে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করেন ৷ বলেন, ‘বর্তমান আইএএস পিবি সেলিম প্রথমে এমবিবিএস সম্পন্ন করে ডাক্তার হন ৷ পরে আইএএস অফিসার হয়েছেন ৷ তাহলে তোমরা কেন পারবে না ? চেষ্টা করো তোমরাও সফল হবে ৷’
উল্লেখ্য, এবছরের নিট পরীক্ষায় আল আমীন মিশনের পড়ুয়াদের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন খলতপুর ক্যাম্পাসের সৈয়দ তামজীদ হোসেন । ৭২০-র মধ্যে তামজীদের প্রাপ্ত নম্বর ৬৩০ । সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে তামজীদের র্যাঙ্ক ২৪০ । মিশন সূত্রে খবর, চলতি বছরই তামজীদ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন । উচ্চ মাধ্যমিকেও দুর্দান্ত ফল করেছিলেন । রাজ্যের মধ্যে দশম স্থান অধিকার করে সকলকে চমকে দিয়েছিলেন তামজীদ । এর পরেই রয়েছেন খলতপুর ক্যাম্পাসেরই আরাফাত হোসেন । নিট এ আরাফাতের প্রাপ্ত নম্বর ৬২৫ । সর্বভারতীয় ব্যাঙ্ক ৩৩০ । তামজিদের মতোই আরাফাতও এবছরই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। উচ্চ মাধ্যমিকে ৯৮.৪০ শতাংশ নম্বর পেয়ে মেধাতালিকায় সপ্তম স্থান অধিকার করেছিলেন মালদার গাজলের এই কৃতী সন্তান । এর পরেই রয়েছেন মিশনের বজবজ শাখার সরিফ হাসান । মুর্শিদাবাদের এই কৃতী পড়ুয়া নিট পরীক্ষায় ৬০২ নম্বর পেয়েছেন। সর্বভারতীয়স্তরে তাঁর র্যাঙ্ক ১, ২১৮ । আগামী দিনে তিনিও ডাক্তার হয়ে দুঃস্থ ও দরিদ্র মানুষদের সেবা করতে চান। ছাত্রীদের মধ্যে ভালো ফল করেছেন নয়াবাজ (গার্লস) ক্যাম্পাসের পড়ুয়া সামিমা বিশ্বাস। মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির হুকরাহাটের বাসিন্দা সামিমা। নিট-এ সামিমার প্রাপ্ত নম্বর ৫৮৫। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে সামিমার র্যাঙ্ক ২,৭৬৪। এই ফলাফলে খুশি সামিমা। এই সাফল্যের জন্য সামিমা সহ সকলেই অধিকাংশ কৃতিত্ব দিয়েছেন আল - আমীন মিশনকে ।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct