নিজস্ব প্রতিবেদক, মুর্শিদাবাদ, আপনজন: রাজ্য পরিযায়ী শ্রমিক বোর্ডের চেয়ারম্যান সাংসদ সামিরুল ইসলাম জানিযেচেন, গত ১০ই জুন পরিযায়ী শ্রমিক বোর্ডের কাছে খবর আসে যে মালদা, মুর্শিদাবাদ এবং পূর্ব বর্ধমান থেকে মুম্বইতে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতে যাওয়া কিছু শ্রমিককে মুম্বই পুলিশ বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করেছে। এই খবর পাওয়ার পর পরিযায়ী শ্রমিক বোর্ড এবং পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের পক্ষ থেকে মুম্বই পুলিশের সাথে যোগাযোগ করা হয়। আটক শ্রমিকদের পরিবারের পক্ষ থেকেও তাদের প্রয়োজনীয় পরিচয়পত্র ও অন্যান্য নথি মুম্বই পুলিশকে পাঠানো হয়।
তিনি জানান, তবে আশ্চর্যজনকভাবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার, পুলিশ এবং পরিযায়ী শ্রমিক বোর্ডকে কিছু না জানিয়ে আটক শ্রমিকদের মধ্যে পাঁচজনকে বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হয়। অভিযোগ উঠেছে, বিএসএফ তাদের মারধর করে জোর করে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দেয়।
সামিরুল জানান, বাংলাদেশের মাটিতে আহত, সহায় সম্বলহীন, ক্ষুধার্ত এবং অসহায় অবস্থায় বাংলার এই পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গ সরকার, পুলিশ এবং পরিযায়ী শ্রমিক বোর্ডের পক্ষ থেকে দিনরাত এক করে চেষ্টা চালানো হয় তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য। অবশেষে চাপে পড়ে বিএসএফ তাদের ফিরিয়ে এনেছে।
মুর্শিদাবাদের নাজিমুদ্দিন মন্ডল, বেলডাঙ্গার মিনারুল শেখ এবং পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের মোস্তাফা কামালকে ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে এনে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে বিএসএফ। আরও দুজনকে (মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার শামীম খান ও ভগবানগোলার মেহবুব শেখ) ফেরানোর প্রক্রিয়া চলছে।
মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর আন্তরিক ও সক্রিয় উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ জানানো হয়েছে পরিযায়ী শ্রমিক বোর্ডের তরফে।
এই ঘটনা বেশ কিছু গুরুতর প্রশ্ন তুলে ধরেছে: সমস্ত বৈধ পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও মুম্বই পুলিশ কেন তাদের বিএসএফের হাতে তুলে দিল? বিএসএফ ভারতীয় নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও কেন তাদের সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশে যেতে বাধ্য করল? কেন এই সমস্ত কিছুই পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে না জানিয়েই করা হল? পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছ থেকে তাদের রাজ্যের বাসিন্দাদের পরিচয় সম্পর্কে কিছু না জেনেই কীভাবে তাদের উপর অবৈধ নাগরিকের তকমা সেঁটে দেওয়া হলো? এদের অনেকেই কমপক্ষে কয়েক পুরুষ ধরে এই রাজ্যের বাসিন্দা।
শুধুমাত্র মাতৃভাষা বাংলা হওয়ার কারণেই কি এই বৈষম্য ও বিদ্বেষ? বাংলা ভাষায় কথা বললেই কি ভারতের বাঙালিরা বাংলাদেশী হয়ে যায়?
ভারতের সংবিধান নিজের মাতৃভাষায় কথা বলা, দেশের যেকোনো রাজ্যে গিয়ে বসবাস ও কর্মসংস্থানের অধিকার দিয়েছে। সেই অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারে না। এই পরিস্থিতিতে নাগরিক সমাজ কি পরিযায়ী শ্রমিকদের এই “ঘরেও নহে পারেও নহে যে জন আছে মাঝখানে” এর দুর্দশা নিয়ে সরব হবে না?
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct