আপনজন ডেস্ক: মেঘালয় রাজ্যের পূর্ব খাসি পার্বত্য জেলায় বুধবার রাতে সংঘর্ষে দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে ওই অঞ্চলে একটি প্রতিবাদ সমাবেশের পর ওই দুই ব্যক্তির ওপর হামলা করা হয় বলে রাজ্য পুলিশ ধারণা করছে। নিহত দুই ব্যক্তি মেঘালয়ের মূল নিবাসী নন। পুলিশ জানিয়েছে, পূর্ব খাসি পার্বত্য জেলার শেলা বিধানসভা আসনের দুটি অঞ্চল থেকে ওই দুই ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ইছামতী ও ডালডা—এই দুই অঞ্চল থেকে আলাদাভাবে ওই দুই ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতরা হলেন ঈশান সিং ও সুজিত দত্ত (ফুরুইন দত্ত)। একটি সূত্র জানিয়েছে, এরা প্রকৃত মেঘালয়ের মূল নিবাসী না হলেও স্থায়ী বসবাসকারী। এদের একজন শিখ সম্প্রদায়ের ও অন্যজন বাঙালি বলে সূত্র জানালেও পুলিশের তরফে এখনও এ ব্যাপারে প্রকৃত পরিচয় পাওয়া যায়নি। তারা অভিবাসী বলে সন্দেহ দৃঢ় হচ্ছে। বৃহস্পতিবার দুটি লাশের ময়নাতদন্ত করা হয় এবং ওই অঞ্চলে বাড়তি নিরাপত্তারক্ষী মোতায়ন করা হচ্ছে বলে পূর্ব খাসি পার্বত্য জেলার পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট ঋতুরাজ রবি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।প্রশাসনিক কর্মকর্তারা গণমাধ্যমে বলছেন, দুটি লাশের কাছেই পাথর পাওয়া গেছে। এর থেকে ধারণা করা হচ্ছে, তাঁদের হত্যা করা হয়েছে। তবে ঠিক কী কারণে দুজন হত্যা করা হয়েছে, তা নিশ্চিত করতে ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।সূত্রের খবর, খাসি ছাত্র ইউনিয়ন ও অন্যান্য প্রেসার গ্রুপের আয়োজিত সিএএ বিরোধী মিছিলের পরেই এই ঘটনা ঘটে। তবে, তফসিলভুক্ত এলাকা এবং সিএএ-র আওতার বাইরে থাকা ইছামতিতে কেন সিএএ বিরোধী বিক্ষোভ সংগঠিত করা হয়েছিল তা স্পষ্ট নয়।কেএসইউ-র এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ইছামতিতে ইউনিয়নের তরফে কোনও প্রতিবাদের আয়োজন করা হয়েছে কিনা তা তাঁর জানা নেই।
সূত্রের খবর, বুধবার বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ার পর ইছামতিতে এসবিআই ব্যাঙ্কের কাছে এক নির্যাতিতার উপর পাথর ছুড়ে মারে কয়েকজন দুষ্কৃতী। এছাড়া ডালডা থেকে কিছুটা দূরে দ্বিতীয় ব্যক্তির উপর হামলা চালানো হয়। অফিসিয়াল রিপোর্ট অনুসারে, ক্রাইম সিন ইউনিটের সাথে একটি বিশেষ অপারেশন টিম এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় শেলা পুলিশকে সহায়তা করার জন্য ইছামতিতে ছুটে গেছে।পূর্ব খাসি পাহাড়ের ডেপুটি কমিশনার, এসসি সাধুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ইছামতিতে কেএসইউ-এর ডাকা সমাবেশের ফলস্বরূপ দু’জনের মৃত্যু হয়েছে কিনা তা মেঘালয়ের পুলিশ যাচাই করছে। এক প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, নিরাপত্তার রক্ষার স্বার্থে এখনও ওই এলাকায় ১৪৪ ধারা প্রয়োগ করা হয়নি।পূর্ব খাসি পার্বত্য জেলা পর্ষদ সম্প্রতি ঘোষণা করেছিল যে কাউন্সিলের অনুমতি বা অনুমোদন ছাড়াই এলাকার অ-উপজাতি ব্যবসায়ীদের দ্বারা স্থাপিত শেলার ইছামতিতে একটি “অবৈধ” বাজার বন্ধ করে দেওয়া হবে। কেএইচএডিসির সিইএম পাইনিয়াইড সিং সিয়েম বলেন, দরবার শানং এবং হিমা সোহরার কাছ থেকে এনওসি গ্রহণ এবং কাউন্সিলের অনুমোদন ছাড়াই নতুন বাজার খোলা হয়েছিল। এটি স্মরণ করা যেতে পারে যে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে আলোচনা ও ইনার লাইন পারমিট বাস্তবায়নের দাবিতে ইউনিয়নের বৈঠকের পরে ২০২০ সালেল ২৮ ফেব্রুয়ারি ইছামতী এলাকায় ইউনিয়ন ও অ-উপজাতিদের মধ্যে সংঘর্ষে কেএসইউ সদস্য লুরশাই হাইনিউটা নিহত হন। ইছামতী অঞ্চলে আগেও আদিবাসী ও আদিবাসী নন—এমন সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাতের কারণে অতীতেও সংবাদ শিরোনামে এসেছে। আদিবাসী নন—এমন সাধারণ সম্প্রদায়ের মানুষ ওই অঞ্চলে বহিরাগত হিসেবে অতীতে আক্রমণের শিকার হয়েছেন।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct