ঘসেটি বেগমের পুনর্জন্ম
আহমদ রাজু
ঘসেটি বেগমের সাথে আমার খালার কবে দেখা হয়েছিল তা হলফ করে বলতে পারবো না। তবে দেখা হয়েছিল এটা একপ্রকার নিশ্চিত বলা যায়। কীভাবে হয়েছিল- কোন মাধ্যমে হয়েছিল তা অবশ্য বলা মুষ্কিল। তা না হলে ইতিহাসের সাক্ষী সেই ঘসেটি বেগমের সাথে কেন খালার এত মিল থাকবে? কেনই বা নানা তার বড় মেয়ের নাম ঘসেটি বেগম রাখবেন? আমি তখন ক্লাস এইটের ছাত্রী। মন প্রাণ দিয়ে লেখাপড়া ছাড়া আর বিশেষ কোন কাজ নেই। বাবা- মা দু’জনেই স্কুল শিক্ষক। মা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা আর বাবা প্রাইমারি স্কুলের সহকারি শিক্ষক; তফাত এই যা। তবে এই উঁচু-নিচুর কারণে সমন্বয় হীনতায় তাদের কাউকে ভুগতে দেখিনি কোনদিন। কিংবা কখনও এ নিয়ে তাদের মাঝে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়েছে এমন কিছু চোখে পড়েনি। আমি মায়ের স্কুলের ছাত্রী বলেই তিনি আমাকে স্কুলে নিয়ে যেতেন। বাবার সাথে স্কুলে যাবার ইচ্ছা থাকলেও কোনদিন তা সম্ভব হয়নি। নিয়মিত বাড়ি থেকে বেরিয়ে তিন রাস্তার মোড় পর্যন্ত একসাথে যেতাম। তারপর বাবা চলে যেতেন উত্তর দিকে, আমি আর মা পূর্ব দিকে। আমার স্পষ্ট মনে আছে, সেদিন ছিল শনিবার, আষাঢ়ের প্রথম দিন। প্রথম পিরিয়ডে বাংলার খগেন স্যার ক্লাসে ঢুকেই বলেন, ‘বৃষ্টি আসুক- না আসুক; আজ পহেলা আষাঢ়।’ বইয়ে পড়েছি, আষাঢ়ে কদম- কেয়া ফোটে, থৈ থৈ করে চারিদিক বৃষ্টির জলে। এবারের খরায় জনজীবনে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা, সেটা জানি। তাইবলে ফুলতো ফুটতেই পারে। টিফিনে উৎফুল্ল মন নিয়ে স্কুলের পূর্ব পাশে যেয়ে কদম গাছের দিকে তাকাই- পেছনের কেয়ার ঝোঁপের দিকে তাকাই। কোথাও ফুল দেখি না। তখন বুঝতে পারি- গাছে ফুল না ফুটলেও ক্যালেণ্ডারের পাতায় আষাঢ় এসে গেছে। হঠাৎ দেখি কোন এক অদৃশ্য কারণে আকাশের মন বিষাদে ভরে উঠেছে। তার মুখ কালো থেকে কালোতর! যা ক্ষণেক পরেই বৃষ্টি হয়ে ঝরতে শুরু করে বিরামহীন। এরই মাঝে তালেব স্যার এসে আমাকে অফিসে ডেকে নিয়ে যান। আমি বুঝতে পারি, কিছু একটা হয়েছে। তা না হলে স্কুলে আয়া-দপ্তরী কতইতো আছে, আমাকে ডাকার জন্যে স্যার কেন? উৎকণ্ঠা নিয়ে স্যারের পেছন পেছন অফিসে ঢুকেই দেখি মা তার চেয়ারে বসে আমার দিকে ফ্যালফেলিয়ে তাকিয়ে আছেন! যে যেভাবে পারছে তাকে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করছে। ইলেকট্রিক ফ্যান মাথার ওপরে সমানে ঘুরলেও করিম স্যার ও সোলাইমান স্যার হাত পাখা দিয়ে তাকে বাতাস করছেন অনাবরত। আয়া রত্না আন্টি তার মাথায় তেল-পানি দিয়ে দিচ্ছে। আমি তখনও বুঝে উঠতে পারিনি বিষয়টা কী ঘটেছে। উৎকণ্ঠা নিয়ে বললাম, ‘কী হয়েছে মা’র? উনি ওভাবে আছেন কেন?’ রুবি ম্যাডাম আমাকে তার কাছে টেনে নিয়ে বলে, ‘আনজানা, তোমার বাবা এক্সিডেন্ট করেছে।’ আমি বুঝেছিলাম কিছু একটা হয়েছে। তাই বলে এতটা খারাপ সংবাদ শুনতে হবে তা বুঝতে পারিনি। হতচকিত হয়ে যাই মুহূর্তে। অজান্তেই কান্না চলে আসে আমার। কাঁদতে কাঁদতে বললাম, ‘কী বলেন ম্যাডাম! বাবা এখন কেমন আছেন?’ ম্যাডাম কোন কথা বলে না। তার দু’চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু ধারা; যা আমার চোখ এড়ায় না। তালেব স্যার বলল, ‘তুমি স্মার্ট গার্ল। নিজেকে অবশ্যই সামলাতে পারবে।’আমার প্রচণ্ড কান্না পেলেও অদৃশ্য কারণে খুব বেশি কাঁদতে পারি না। দুই হাত দিয়ে চোখ কচলাতে কচলাতে বললাম, ‘কোন খারাপ কিছু কী স্যার?’
‘আগে চলো আমরা হাসপাতালে যাই। তুমি নিজেকে শক্ত করো। আই মিন তোমার মাকে তোমারই দেখতে হবে।’ বলল তালেব স্যার।নারান কাকা ইতিমধ্যে ছুটির ঘন্টা দিয়ে দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা সব বারান্দায় জটলা পাকিয়ে আছে বৃষ্টি থামার অপেক্ষায়। বৃষ্টি উপেক্ষা করে আমরা মাকে নিয়ে সদর হাসপাতালে ছুটে যাই। যা কখনও ভাবিনি- কখনও কল্পনায় আসেনি তাই ঘটেছে। লাশকাটা ঘরে পড়ে আছে বাবার দেহ। শরীর তার রক্তে আচ্ছাদিত। আমি উদভ্রান্তের মতো বাবার দেহটাকে জড়িয়ে ধরি; যেমন করে তিনি আমাকে সময়-অসময় বুকের ভেতর টেনে নিতেন পরম মমতায়। মা’র দুই বাহু ধরে রেখেছেন স্কুলের দুইজন শিক্ষিকা। তিনি বাবার লাশের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন; মুখ দিয়ে কোন শব্দ বের হয় না। যে কিনা সাড়ে সাতশো ছাত্র-ছাত্রীর সংসার অবলীলায় সামলান আর তিনি কিনা বাবার মৃত্যু সংবাদে নিজেকে আর সামলাতে পারেননি? হয়তো এমনই হয়। হয়তো উনার জায়গায় থাকলে আমার অবস্থা এর চেয়ে বেশি কিছু হতো। মেয়ে হিসাবে আমার ভেতরে দুঃখ, কষ্ট, হতাশা জন্ম নিয়েছে সত্যি তবে তা যথোপোযুক্ত নয় অন্তত মা’র তুলনায়। তারপর মা অবশ্য বছর দুই বেঁচে ছিলেন। সে সময়ের ভেতরে তার মুখ দিয়ে আমি কোন কথা শুনিনি।বাবার মৃত্যুর কিছুদিন পর বড় খালা অঞ্জনাকে নিয়ে আমাদের এখানে চলে আসে। খালুর সাথে কী না কী কারণে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছিল বেশ ক’বছর আগে। তারপর আর বিয়ে থা করেনি। একপ্রকার বাপের বাড়ি কনফার্ম খিতু হয়েছিল সে। বাবার মৃত্যু আর মায়ের নিষ্প্রভ অবস্থায় আমার কথা ভেবে মামারা জোর করেই তাকে পাঠিয়ে দেন যাতে আমার কোন কষ্ট না হয়। তাকে দেখে মা হয়তো মনে মনে খুশিই হয়েছিলেন। তা না হলে কেন মৃত্যুর দু’দিন আগে আমাদের বিস্মিত করে কাঁপা কাঁপা হাতে আমার ডান হাতটা নিয়ে খালার হাতের ওপরে দিয়ে দেবেন? তখন ঠোঁট নাড়িয়ে কিছু একটা বলতে চেয়েছিলেন; যা আমরা বুঝতে পারিনি। তবে এটুকু বুঝেছিলাম, তিনি খালার হাতে আমার হাতটা তুলে দিয়ে হয়তো বলতে চেয়েছিলেন, ‘আমার মেয়েটাকে নিজের মেয়ের মত মানুষ করো।’ কিংবা ‘আজ থেকে এ-ই তোর মা। তার কথা সব সময় মেনে চলিস।’ ইত্যাদি ইত্যাদি। মায়ের আচরণে সেদিন আকাশজোড়া খুশি হয়েছিলাম। মনের মাঝে আশার আলো দানা বেঁধেছিল। এই বুঝি তিনি ভাল হয়ে উঠলেন! ভাল হয়ে ওঠার বদলে তিনি যে আমাকে ছেড়ে চলে যাবেন তা বুঝতে পারিনি। তারপর অলিখিতভাবে খালা’ই হয়ে ওঠে আমার নতুন দিনের অভিভাবক। অঞ্জনা আর আমি সমবয়সী। দু’জনে স্কুলে যাই একসাথে- থাকি একসাথে। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর সরকার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এককালীন যে টাকা দিয়েছিল তার সবই দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক উদ্যোগ নিয়ে আমার নামে ব্যাংকে এফডিআর করে রাখে। আসল টাকা আমার বয়স আঠারো না হলে তুলতে পারবো না। মাসিক মুনাফার টাকা দিয়েই আমাদের সংসার চলতে থাকে। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মহা বিয়োগের কষ্ট একটু একটু করে দূর হচ্ছিল। আর না হয়ে কোন উপায় আমার সামনে অবশিষ্ট ছিল না, তা বুঝতে পারি। তাইতো নিজের মনকে নিজেই বহুবার সান্ত্বনা দিয়েছি। ভুলতে না চাইলেও ভুলতে চেষ্টা করেছি। তাছাড়া খালা যথাসম্ভব চেষ্টা করে আমাকে মা- বাবার অভাব থেকে দূরে রাখতে। কখনও পারে- কখনও পারে না। তাই বলে তাকে দোষ দেওয়া চলে না। সে মেয়ে মানুষ, একলা সব দিকে সামলাবেন কীভাবে?সেহরাব রেহমান শহরে নতুন এসেছে। আমেরিকা প্রবাসী; সেখানে বড় ব্যবসা তার। বাড়ি গাড়ি কোন কিছু কমতি নেই। মাসব্যাপী পত্রিকায় চার রঙা বিজ্ঞাপন দিচ্ছে- সম্ভ্রান্ত পরিবারের পাত্রী পেলে বিয়ে করে নিয়ে যাবে আমেরিকা। কোন রকম পূর্ব ইঙ্গিত ছাড়াই আজ বিকেলে সে দু’জন অভিভাবক নিয়ে আমাদের বাড়ি এসে উপস্থিত। আমি কলেজ থেকে ফিরেছি মাত্র। অঞ্জনা ফেরেনি। কি এক কাজের জন্যে থেকে গিয়েছে। প্রথমে বুঝতে না পারলেও ঘরে ঢুকতেই খালা বলল, ‘তোমাকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছে। যাও সাজগোছ করে নাও।’ আমি সাজগোছ ছাড়াই একপ্রকার সাদামাঠাভাবে তাদের সামনে যেয়ে বসি। আমাকে একপলক দেখেই তাদের পছন্দ হয়। মাঝ বয়সী একজন বলল, ‘কন্যাকে আমেরিকা নিয়ে যেতে অনেক টাকা খরচ হবে। অর্থেক পাত্রীপক্ষকেই বহন করতে হবে।’
খালা বলল, ‘কিছু যদি মনে না করেন তাহলে জানতে পারি কত টাকা আমাদের দিতে হবে?’লোকটি কাটা চামচ একটি বড় সাইজের মিষ্টিতে বিদ্ধ করে মুখে পুরে দিয়ে দুই পাটি দাঁত দিয়ে পিষতে পিষতে বলল, ‘অবশ্যই জানতে পারেন। পনের লক্ষ টাকার কম হবে না। পনের লক্ষই ধরেন।’আমিতো শুনে হতবাক। এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে বিদেশে নেবার নাম করে অলিখিত যৌতুক দাবী! রাগে শরীর জ্বলে ওঠে। আর কালক্ষেপন না করে উঠে ঘরের ভেতরে চলে যাই।খালা আমাকে অনেকভাবে বোঝাতে চেষ্টা করে, ‘এমন পাত্র হাতছাড়া করা যাবে না, স্বপ্নের দেশে থাকে, অনেক বড় ব্যবসায়ী ইত্যাদি ইত্যাদি।’ আমিই রাজি হই না। যৌতুক দিয়ে কোনভাবেই বিয়ের পিঁড়িতে বসবো না; তাতে পাত্র স্বপ্নের দেশে থাকুক বা স্বর্গের দেশে থাকুক। পরের দিন রাতে আচমকা খালা আমার কাছে এসে জানাই, ‘কোন টাকা লাগছে না। ছেলে নিজেই সব টাকা খরচ করবে।’আমিতো গাছ থেকে পড়ি। যে প্রথমে আমেরিকা নিয়ে যাবার কথা বলে পনের লক্ষ টাকা দাবী করে, আর সে কিনা টাকা ছাড়া বিয়ে করবে! মনের ভেতরে খটকা লাগে। আমি খালাকে বললাম, ‘আচ্ছা খালা, আমাদের পক্ষ থেকে খোঁজ খবর নেবার প্রয়োজন আছে না? বাড়ি ঘর দেখা হলো না- কোন কিছু জানা হলো না। দরকার হলে মামাদের সেখানে পাঠাও।’খালা মুখে বিরক্তি ভাব প্রকাশ করে বলল, ‘ছেলে স্বপ্নের দেশে থাকে। এদেশে তার কেউ নেই। দেখতে হলে সেখানে যেয়ে দেখতে হবে।’ আমি আর কথা বাড়াই না। অগত্যা নিজেকে সঁপে দিই ভাগ্যের ওপরে। লাল-নীল আলোয় আলোকিত সমস্ত বাড়ি। সামনের ছোট ছোট আমগাছও তার বাইরে নয়। তারাও সেজেছে বর্ণিল সাজে। অতিথির তালিকা লম্বা না হলেও একদম ছোট সেকথা বলা যাবে না। মামা বাড়ির কাউকে খালা দাওয়াত দেয়নি কোন এক অদৃশ্য কারণে। কেন দাওয়াত দেয়নি তা অবশ্য একবার খালার কাছে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তখন সে বলেছিল, ‘দাওয়াত যাচ্ছে কোথায়? যে কোন সময় তাদের দাওয়াত দেওয়া যাবে।’ খালার এই কথায় আমি সন্তুষ্ট হতে না পারলেও কিছু বলতে পারি না। হাজার হলেও সে এখন আমার অভিভাবক। দুপুর একটা। বাড়ির ভেতরে লোকে লোকারণ্য। আমাকে বউ সাজিয়ে ঘরে বসিয়ে রাখা হয়েছে। একটু পরেই বর আসবে আমাকে নিয়ে যেতে। হঠাৎ মাথাটা কেমন যেন ঝিন ঝিন করে ওঠে। তারপর কী হয়েছিল কিছুই জানি না। পরেরদিন সকালে যখন জ্ঞান ফেরে তখন পরিবেশটা একদম অন্যরকম। সব কেমন যেন থমথমে ভাব। মাথাটাও ভারী বেশ। খালাকে ডাক দিতে সে আমার কাছে আসে। মুখ তার মলিনতায় ভরা। বললাম, ‘কী হয়েছে খালা? খারাপ কিছু?’খালা আমতা আমতা করে বলল, ‘কাল তুই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলি বলে এ বাড়ির সম্মান বাঁচানোর জন্যে অঞ্জনাকে তোর জায়গায় বসিয়েছিলাম।’আমি মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে বললাম, ‘এতে খারাপের কিছুতো দেখছি না। তুমি ঠিকই করেছো।’‘ভাবলাম তুই কিছু মনে করিস কি না?’‘না খালা; আমি কিছু মনে করিনি।’খালার মুখটা আনন্দে ভরে ওঠে আমার কথায়। বলল, ‘তুই আমাকে ভুল বুঝিস না মা।’‘ভুল বুঝবো কেন খালা? তুমি যেটা সঠিক মনে করেছো সেটাই করেছো। এ বাড়ির প্রতি আামার যেমন অধিকার আছে তেমনি তোমারও আছে। ভালোই ভালোই অনুষ্ঠানটা হয়েছে কিনা তাই বলো।’‘তা হয়েছে। সবই ঠিক ছিল। শুধু.....’খালার কথা শেষ না হতেই বললাম, ‘আচ্ছা, বাদ দাও ওসব। টিভির রিমোর্টটা একটু এগিয়ে দাও।’ খালা রিমোটর্টা আমার হাতে দিয়ে পাশে বসে। আমি সবুজ সুইচটা চাপ দিতেই টিভির পর্দায় যে সংবাদ ভেসে ওঠে তাতে আমার চক্ষু ছানাবড়া। হাতে হ্যাণ্ডকাপ পরানো অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে সেহরাব রেহমান! সাথে তার এক সাগরেদ। সংবাদে বলে, তারা আসলে প্রতারক! মেয়েদের আমেরিকায় নিয়ে যাবার কথা বলে বিয়ে করে। তারপর সুযোগ বুঝে সর্বস্ব নিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় তাদের পেশা। আমেরিকা তো দূরে থাক, সে প্রতিবেশি দেশ ভারতেও কোনদিন যায়নি। তাছাড়া সেহরাব রেহমান তার ছদ্ম নাম। অত্যন্ত চতুরতার সাথে এক এক জায়গায় এক এক নাম ব্যবহার করে। সংবাদ দেখে খালা বুক চাপড়ায়। মেয়েকে ফিরে পাবার আশায় হা পিত্যেশ করে সময় গোনে। হঠাৎ আমার মোবাইল ফোনটা বেঁজে ওঠে। ওপাশ থেকে ব্যাংক ম্যানেজার বলল, ‘মুগদা শাখায় পনের লক্ষ টাকার তোমার একটা চেক জমা পড়েছে। একাউন্ট নো ডেভিট ইনস্ট্রাকশন করে রাখায় সে টাকা তুলতে পারছে না। তুমি চাইলে ব্যাংকে এসে কন্টিনিউ করে নিতে পারো।’আগে পাছে কোন কিছু না ভেবে বললাম, ‘প্রশ্নই ওঠে না। পারলে যে চেক নিয়ে গেছে তাকে গ্রেফতার করার ব্যবস্থা করুন।’ আমার বুঝতে বাকি থাকে না কী হয়েছিল গতকাল। তাইবলে নিজে খালা এমন কাজ করবে তার আপন মৃত বোনের মেয়ের সাথে? এত গভীর ষড়যন্ত্র! সুচতুরভাবে চেকে সই করিয়ে নিয়ে মেয়ের বিয়েতে যৌতুক হিসাবে দিয়ে দিলো আমার সর্বস্ব! মনে পড়ে ঘসেটি বেগমের কথা। সেও তো এমন করেছিল কালের স্রোতে পড়ে। তাহলে আজ- এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে এমন কেন হবে না?খালা জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিল। আমি তার দুই বাহু ধরে মৃদু ঝাঁকি দিয়ে বললাম, ‘তুমি এই কাজটি করতে পারলে খালা? তোমাকে যে আমি মায়ের আসনে বসিয়ে রেখেছি।’ সে ক্ষণেক আমার দিকে মুখ ফিরিয়ে বলল, ‘কী করবো বল? আমার নামের সাথে ইতিহাস জড়িয়ে আছে যে।’
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct