সঞ্জীব মল্লিক, বাঁকুড়া, আপনজন: দিনভর আন্দোলনের জের, বুধবার রাতেই বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সাঁওতালি মাধ্যমে স্নাতকোত্তর স্তরে পঠন পাঠনের অনুমতি দিল উচ্চ শিক্ষা দফতর, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর প্রশ্নের মুখে রাজ্য সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা । সাঁওতালি মাধ্যমে স্নাতকোত্তর স্তরে পঠন পাঠনের দাবীতে বুধবার দিনভর বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের নেতৃত্বে আন্দোলন করেন সাঁওতালি মাধ্যমের পড়ুয়ারা। আন্দোলনের জেরে বুধবার দিনভর অবরুদ্ধ থাকে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক। আন্দোলনের মুখে চাপে পড়ে শেষ পর্যন্ত বুধবার রাতেই ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে সাঁওতালি মাধ্যমে স্নাতকোত্তর স্তরে পঠন পাঠন চালুর অনুমতি দেয় রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দফতর। জানা গেছে চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই সাতটি বিষয়ে সাঁওতালি মাধ্যমে পঠন পাঠনের অনুমতি দিয়েছে উচ্চ শিক্ষা দফতর। এই অনুমতি আসলে আন্দোলনেরই ফসল বলে মনে করছে আদিবাসী সামাজিক সংগঠনের নেতৃত্ব।
বাঁকুড়া জেলায় প্রাথমিক স্তর থেকে সাঁওতালি মাধ্যমে পড়াশোনা করা পড়ুয়ারা চলতি শিক্ষাবর্ষে এই প্রথম স্নাতক উত্তীর্ণ হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবে তাঁরা ভেবেছিলেন স্বাভাবিক নিয়মেই বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই স্নাতকোত্তর স্তরে তারা পঠন পাঠনের সুযোগ পাবেন। কিন্তু তেমনটা হয়নি। বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সাঁওতালি মাধ্যমে পঠন পাঠনের কোনো পরিকাঠামো না থাকায় সাঁওতালি মাধ্যমের পড়ুয়াদের স্নাতকোত্তর স্তরে ভর্তির কোনো বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি। এর ফলে ব্যাপক সমস্যায় পড়ে বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়েত অধীনে থাকা বিভিন্ন কলেজ থেকে সাঁওতালি মাধ্যমে স্নাতক উত্তীর্ণ প্রায় ২০০ পড়ুয়া। বিষয়টি বারেবারে বিশ্ববিদ্যালয়কে বারে বারে জানিয়েও লাভ না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত বুধবার আন্দোলন শুরু করে সাঁওতালি মাধ্যমের পড়ুয়ারা। আদিবাসীদের সামাজিক সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পরগণা মহলের নেতৃত্বে বুধবার দিনভর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেট ঘেরাও করে রাখার পাশাপাশি দিনভর অবরোধ করে রাখা হয় ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক। আর এই আন্দোলনেই শেষ পর্যন্ত নড়েচড়ে বসে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দফায় দফায় আন্দোলনকারীদের সাথে বৈঠক করে তড়িঘড়ি উচ্চ শিক্ষা দফতরে প্রয়োজনীয় নথিপত্র পাঠিয়ে অনুমতি চাওয়া হয়। বুধবার রাতে রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দফতরের তরফে বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুমতি দেওয়া হয়। উচ্চ শিক্ষা দফতর বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর স্তরে মোট সাতটি বিষয়ে সাঁওতালি মাধ্যমে পঠন পাঠনের সুযোগ দেওয়ায় আপাতত খুশি আন্দোলনকারী পড়ুয়া ও সমাজ সংগঠনের নেতৃত্বরা। এস এফ আই এর দাবী রাজ্য সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের যৌথ গাফিলাতিতেই আটকে ছিল অনুমতি। তৃণমূল ছাত্র পরিষদ এই ঘটনার যাবতীয় দায় চাপিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার অবশ্য এর জন্য তোপ দেগেছে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধেই।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct