আজিজুর রহমান, গলসি, আপনজন: দুর্ঘটনায় আহত এক ব্রাহ্মণের চিকিৎসায় সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন এলাকার ইমাম মাওলানারা। আর এমন কাজে আবারও সম্প্রীতির ছবি ফুটে উঠল বর্ধমানের গলসিতে। মানুষ যে মানুষের জন্য তা প্রমাণ করল “কল্যাণের শপথ” নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এই সংগঠনের মাওলানা সদস্যরা চাঁদা সংগ্রহ করে কুড়ি হাজার টাকা তুলে দিলেন রেল দুর্ঘটনায় আহত গলসির বাসিন্দা পিন্টু চ্যাটার্জ্জীর চিকিৎসার জন্য। তাদের এমন কাজের প্রশংসা করেছেন পরিবার প্রতিবেশীরা। প্রতিবেশী অরিন্দম নন্দী জানিয়েছেন, বেশকিছু অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালের চিকিৎসার বিল দাঁড়ায় ১৫ লক্ষ টাকা। পরিবারের লোকেরা কোনক্রমে ৮ লক্ষ টাকা জোগাড় করেছেন। তারপর বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা চলছে। আজকে মাওলানা সাহেবরা তাদের অল্প আয় থেকে যেটুকু সাহায্য করেছেন তাতে গর্বে আমার বুক ভরে গেছে। এটাই তো আমাদের ভারত। আমি ব্যক্তিগত ভাবে ওনাদের ঋণ শোধ করতে পারব না। তাদের ইচ্ছা কত মহৎ কত বড় তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। জানা গেছে, গলসির চৌমাথার বাসিন্দা পিন্টু চ্যাটার্জী একটি প্লাই কোম্পানির সেলসম্যানের কাজ করেন। তিনি গত ২৭ শে মে রাতে বর্ধমান স্টেশনে ট্রেনে চাপতে গিয়ে নিচেই পড়ে যান। লোহার আঘাতে তার শরীরের একাধিক জায়গার হাড় ভেঙে যায়। ওইদিন প্রথমে তাকে বর্ধমানে ও পরে অবস্থার অবনতির জন্য কোলকাতার আর এন টেগর হসপিটালের স্থানান্তর করা হয়। অর্থ সংকট হওয়ায় বর্তমানে দুশ্চিন্তায় রয়েছে পরিবারটি। কল্যাণের শপথ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য হাজী মহববুবুল হক জানিয়েছেন, ভিন্ন ধর্মের হলেও হিন্দুরা আমাদের ভাই। আর এটাই আমাদের দেশের ঐতিহ্য। তাই ব্রাহ্মণ পরিবারটির দুশ্চিন্তা দুর করতে এগিয়ে এসেছেন আমাদের সদস্যরা। তিনি চান তাদের মতোকরে সবাই পাশে দাঁড়ালে পরিবারটির দুশ্চিন্তা দুর হয়ে যাবে। মাওলানা রমজান আলি বলেন, আমরা ইমামতি করি, অল্প বেতন পাই। সেখান থেকেই যত সামান্য করে দিয়ে নুন্যতম টাকা তুলে দিয়েছি। পিন্টু চ্যাটার্জীর আত্মীয় চন্দন দেবনাথ বলেন, মুসলিম ভাইদের কাজ দেখে আমার প্রাণ ভরে গেছে। মাওলানাদের প্রচেষ্টা নয় ওটা দুয়া। ওই দুয়াতেই সুস্থ হবে পিন্টু। ইমাম-মাওলানাদের ওই কাজে সমাজে সম্প্রীতি এক অন্য ছবি ফুটে উঠল তা বলাই বাহুল্য।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct