আপনজন ডেস্ক: ছয় বছর আগে কেন্দ্রীয় সরকার ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ তা ৪:১ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বহাল রেখেছে সোমবার। সুপ্রিম কোর্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিরা মনে করেন যে ৮ নভেম্বর, ২০১৬ তারিখে কেন্দ্রের বিজ্ঞপ্তিটি বৈধ। ৫৮টি মামলার প্রেক্ষিতে রায় দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, কেন্দ্রের নোট বাতিল সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে গলদ ছিল না। যদিও বিচারপতি বিভি নাগারত্না তার ভিন্নমতের দৃষ্টিভঙ্গিতে বলেন, যদিও নোটবন্দির বিষয়টি সুচিন্তিত ছিল, কিন্তু এটি আইনি ভিত্তিতে (এবং বস্তুর ভিত্তিতে নয়) অবৈধ ঘোষণা করা দরকার। বিচারপতি এস আব্দুল নাজির, বিচারপতি বিআর গাভাই, বিচারপতি এএস বোপান্না, বিচারপতি ভি রামাসুব্রহ্মণ্যম এবং বিচারপতি বিভি নাগারত্নের সমন্বয়ে গঠিত ৫ জনের ডিভিশন বেঞ্চ একটি ডিভিশন বেঞ্চের রেফারেন্সের উত্তর দিচ্ছিলেন। এটি ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর রায় সংরক্ষণ করেছিল। বিষয়টি এখন ডিভিশন বেঞ্চে ফেরত পাঠানো হয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠের রায় পড়ে বিচারপতি বিআর গাভাই বলেন, নোটবন্দির উদ্দেশ্যগুলির (কালোবাজারি নির্মূল করা, সন্ত্রাসে অর্থায়ন ইত্যাদি) অর্জনের সাথে একটি যুক্তিসঙ্গত যোগসূত্র রয়েছে। তবে, উদ্দেশ্য সফল হয়েছে কি না তা প্রাসঙ্গিক নয়। ডিভিশন বেঞ্চ আরও বলে, বাতিল মুদ্রা বিনিময়ের জন্য ৫২ দিনের নির্ধারিত সময়কে অযৌক্তিক বলা যায় না। আরও বলা হয়, নোটবন্দির সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াটিকে দোষারোপ করা যায় না। বেঞ্চ জানায়, আরবিআই আইন-এর ধারা ২৬ (২) যা কেন্দ্রকে যে কোনও মূল্যের যে কোনও নোটের যে কোনও সিরিজ বাতিল করার ক্ষমতা দেয়, মুদ্রার পুরো সিরিজকে নোট বাতিল করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। যদিও, বেঞ্চের পাঁচজন সদস্যের মধ্যে একমাত্র বিচারপতি বিভি নাগারত্না নিজের রায়তে জানান, সরকারের সিদ্ধান্ত বেআইনি ছিল। তার রায়, ১০০০ ও ৫০০ টাকার সমস্ত নোট নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে না কেন্দ্র। বিচারপতি নাগারত্না বলেন, ২০১৬ সালে বিমুদ্রাকরণের সিদ্ধান্ত ক্ষমতার প্রয়োগ ছিল মাত্র। নিঃসন্দেহে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত সৎ উদ্দেশে নেওয়া হয়েছিল। তবে শুধু মাত্র আইনি দৃষ্টিতে দেখতে গেলে নোট বাতিলের এই সিদ্ধান্ত বেআইনি।
প্রসঙ্গত, মামলাকারীদের আইনজীবী পি চিদরম্বম দাবি করেছিলেন, নোট বাতিল সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আরবিআই-এর পরামর্শ নিতে হয় কেন্দ্রকে। তবে এই ক্ষেত্রে নাকি আরবিআই-এর সঙ্গে কেন্দ্রের বৈঠকের যাবতীয় তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসের ৮ তারিখ সন্ধ্যায় দেশের উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে ১০০০ টাকা এবং ৫০০ টাকার নোট বাতিল করার ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় ৫৮টি মামলা রুজু হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। সেই সব মামলার শুনানি সম্পন্ন হয়েছিল গতবছর। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সৈয়দ আবদুল নাজিরের নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে কেন্দ্রের নোট বাতিল সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলে। সেই সব মামলার প্রেক্ষিতে আজ রায়দান করল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি নাগারত্না ছাড়া বেঞ্চের চার বিচারপতির অবশ্য মত, শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, কেবলমাত্র কেন্দ্র নোটবাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেই তা বাতিল করা যায় না। প্রসঙ্গত, নোট বাতিলের সময় ১৭.৯৭ লক্ষ কোটি টাকা মূল্যের নোট ছিল বাজারে। এর মধ্যে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটের মূল্য ছিল ১৫.৪৪ লক্ষ কোটি টাকা। সেই টাকার ৯৮.৯ শতাংশ বা ১৫.৩১ লক্ষ কোটি টাকার নোটই ফিরে আসে ব্যাঙ্কগুলির কাছে। ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর ১০০০ টাকা এবং ৫০০ টাকার নোট রাতারাতি বাতিল করে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কালো টাকা রোধ করতেই সেই পদক্ষেপ করা হয়েছিল। তবে সরকারের সেই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হয়েছিল জনস্বার্থ মামলা। যদিও সরকারের বক্তব্য ছিল, নোট বাতিলের কারণে জনসাধারণের কষ্ট হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু সেই অভিযোগের ভিত্তিতে সরকারের ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলকে ত্রুটিপূর্ণ বলা যেতে পারে না।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct