অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে মালয়েশিয়ায় ক্ষমতায় আসা আনোয়ার ইব্রাহিমের সরকার কতদিন টিকবে এই হিসাব শুরু করেছে অনেকে। যদিও প্রাথমিক পরীক্ষাগুলো তিনি বেশ ভালোভাবে উতরে গেছেন। এর মধ্যে পেরিকাতানের বাইরের সব এমপির সমর্থনে সংসদের স্পিকার নির্বাচিত করতে সক্ষম হয়েছেন আনোয়ার। আস্থা ভোটে জয়ী হওয়ার চ্যালেঞ্জেও তিনি জিতেছেন। মন্ত্রিসভা গঠনে বিপত্তি হয়নি। এর পরও বেশ কিছু উদ্বেগ ও চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে আনোয়ারের সামনে। এ নিয়ে লিখেছেন মাসুম খলিলী। আজ দ্বিতীয় কিস্তি।
বলা বাহুল্য, আনোয়ারের ক্ষমতায় থাকার জন্য আহমদ জাহিদের প্রয়োজন আছে। প্রধানমন্ত্রী তার মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে সমর্থন করার জন্য উমনুতে আর কাকে বিশ্বাস করতে পারেন? যদি দলীয় ভোটে আহমেদ জাহিদ পরাজিত হন এবং তার স্থলাভিষিক্ত হন এমন একজন উমনু নেতা যিনি টিম জাহিদে নেই, সে ক্ষেত্রে আনোয়ার বারিসানের সমর্থন হারাতে পারেন। ঐক্য সরকারের জন্য যে সমঝোতা স্মারক পাকাতান, বারিসান, জিপিএস, গাবুঙ্গান রাকয়াত সাবাহ (জিআরএস) এবং পার্টি ওয়ারিসান এর মধ্যে হয়েছে তা একটি ‘স্মারক’ মাত্র। এতে স্বাক্ষরকারী দলগুলোর যেকোনো এমপি সরকারি প্রস্তাব সমর্থন করেন না করলে তিনি এমপি থাকার ব্যাপারে অযোগ্য বলে গণ্য হবেন। কিন্তু যেকোনো জোট বা দল সমঝোতা স্মারক থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। অবশ্য বর্তমান পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে, উমনুর সর্বকালের সবচেয়ে খারাপ নির্বাচনী ফল সত্ত্বেও (মাত্র ২৬টি আসনে জয়ী), আহমদ জাহিদ যেকোনো প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে উমনু সভাপতি হিসেবে জয়ী হবেন। এই মুহূর্তে, সেমব্রং এমপি দাতুক সেরি হিশামুদ্দিন হুসেইন বা খায়েরি জামালুদ্দিন প্রমুখ আহমদ জাহিদের বিরুদ্ধে গুরুতর চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারবেন না। দলের ওপর জাহিদের প্রভাব এখন অনেক শক্ত। তিনি পল্লী ও আঞ্চলিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপ্রধানমন্ত্রী, যিনি উমনু প্রতিনিধিদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। এ কারণেই আনোয়ার দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও জাহিদকে উপপ্রধানমন্ত্রী করেছেন। আহমদ জাহিদের পৃষ্ঠপোষকতার একটি উদাহরণ হলো যেদিন কেন্দ্রীয় সরকারের স্তরে সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং সরকার-সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোতে সব রাজনৈতিক নিয়োগ বন্ধ করা হয়েছিল, উমনুর প্রাক্তন মাচাং সংসদ-সদস্য দাতুক আহমদ জাজলান ইয়াকুবকে ফেলক্রা বেরহাদের চেয়ারম্যান হিসেবে সে দিন পুনরায় নিযুক্ত করা হয়। এর মধ্যে জাহিদ তার নেতৃত্বে সামনে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করতে অনেকখানি সফল হয়েছেন। সরকারে উপপ্রধানমন্ত্রী হবার পর তার হারানো প্রভাব নতুন করে যুক্ত হওয়ায় দলীয় প্রধান হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা জাহিদের জন্য অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
আনোয়ারের সামনে আরেক পরীক্ষা হিসেবে সামনে আনা হয় সংসদের উদ্বোধনের পর রাজকীয় ভাষণের জন্য ধন্যবাদ প্রস্তাব পার্লামেন্টে পাস করা, যা কার্যকরভাবে বছরের জন্য সরকারের নীতি কর্মসূচি হিসেবে বিবেচিত হয়। স্পিকার নির্বাচন ও আস্থা ভোটের পর এতে কোনো সমস্যা হবে বলে মনে হয় না। ২০২৩ সালের বাজেটের অনুমোদন হবে ঐক্য সরকারের সামনে আরেক পরীক্ষা এবং সেটিও বড় কোনো সমস্যা হিসেবে আসবে না বলেই এখন মনে হচ্ছে। আনোয়ারের ঐক্য সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হবে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য পেনাং, সেলাঙ্গর, নেগ্রি সেম্বিলান, কেদাহ, কেলান্তান এবং তেরেঙ্গানু রাজ্যের নির্বাচন। পেনাং, সেলাঙ্গর, নেগ্রি সেম্বিলানে শাসক জোটের সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। বাকি তিনটিতে রয়েছে বিরোধী জোটের দলগুলো। এর মধ্যে অনুষ্ঠিত দু’টি নির্বাচনের একটি সরকার পক্ষ এবং আরেকটিতে বিরোধী পক্ষ জয় পেয়েছে। এখনো পর্যন্ত মনে হচ্ছে এই রাজ্য নির্বাচনে শাসক ও বিরোধী দলগুলো জোটগতভাবে লড়বে। এটি হলে পেনাং এবং সেলাঙ্গরে ঐক্য সরকার নতুন করে সরকার গঠনে সক্ষম হতে পারে। অন্য দিকে কেলান্তান ও তেরাঙ্গানুতে পেরিকাতানের জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। কেদাহ এবং নেগরি সেম্বিলানে কি ফলাফল হয় সেটি দেখার বিষয়। একই সাথে অন্য রাজ্যগুলোতে বিপরীতপক্ষের আসন সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। পেরিকাতান ন্যাশনালের নেগ্রি সেম্বিলান চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন যে পিএন রাজ্যের ৩৬টি আসনের মধ্যে অন্তত ১৯টি আসনে জয়ী হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। কেদাহ রাজ্যে বিগত সংসদ নির্বাচনে পেরিকাতানের পক্ষে একটি ছাড়া সব আসনে জয় এসেছে। কেলান্তান ও তেরাঙ্গানুতে সব আসন পেয়েছে পেরিকাতান। এই ধারা যদি বজায় থাকে তাহলে এসব রাজ্যে বিরোধী পক্ষ জয় পাবে বলেই হিসাব করতে হবে। আর এই বার্তাও যাবে যে মালয় জনগণের মধ্যে পাস-বারাসাতুর আবেদন ঐক্য সরকার গঠনের পরও অব্যাহত রয়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct