মেসির বিশ্বকাপ জয়ে আলোকিত হল ফুটবলের সৌন্দর্য
ফৈয়াজ আহমেদ
২০২২-এর ১৮ ডিসেম্বর। শেষ হলো ছত্রিশ বছরের যাত্রা। হৃদয় গহীনে জমে থাকা কালো মেঘ সরে গেল। মরুর বুকে অঝোরে ঝরল আনন্দের ফল্গুধারা। সুখের কান্নায় গড়িয়ে পড়া লোনাজল গড়ে দিল নীল-তরঙ্গের এক স্বপ্নিল সমুদ্র। এ যে মেসিময় রাত। আর্জেন্টিনার স্বপ্নপূরণ। ভিনগ্রহের ফুটবলার, ক্ষুদে জাদুকর মেসির স্বপ্নপূরণ। স্বাভাবিকভাবেই আনন্দ-উচ্ছ্বাস আর উন্মাদনার সাক্ষী হয়ে থাকলো ফুটবল বিশ্ব। বলা হয়ে থাকে ফুটবল এমন খেলা, যার পরতে পরতে থাকে সৌন্দর্য, কৌশল, গতি আর ছন্দের মহামিলন। থাকে ঝলকানি। থাকে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস-আনন্দ। হৃদয়ে রক্তক্ষরণও এ খেলার অংশ। সেই খেলায় এবার ভক্তদের শিরায় মিশে গেলেন লিওনেল মেসি। যিনি ফুটবল ঈশ্বর-খ্যাত দিয়াগো মারাদোনার পরই উচ্চারিত হন। অধরা স্বপ্নটি নাটকীতায় ভর করে ঠিক মেসির বুকে জায়গা করে নিল। আর্জেন্টিনার পারানা নদীর পশ্চিম তীরের রোজারিও শহর, শান্তশিষ্ট এই শহরের মায়ায় বেড়ে ওটা সেই ছেলেটি আজকের মেসি। লিওনেল মেসি, স্রেফ জাদুকর। যার পায়ের জাদু বিশ্ব কাঁপিয়ে দেয়। দিয়েছেও। যার ছন্দময় ফুটবল নাচুনি দেখতে অপেক্ষা করেন বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ভক্ত। আমাদের দেশ, ভারতের লাখ লাখ ভক্তও বিশ্ব মাড়িয়ে ঠিক পৌঁছে গেছেন মেসির পরিবারে। যেখানে এই ভারত এখন দারুণ উচ্ছ্বাসের। আনন্দের।
১৯৭৮ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জয় করে আর্জেন্টিনা। মাঝে ৮ বছরের অপেক্ষা। এ অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় ১৯৮৬ সালে। এবার মারাদোনার হাত ধরে বিশ্বকাপ জয় করে আর্জেন্টিনা। মারাদোনা হয়ে ওঠেন ফুটবল ঈশ্বর। হৃদয়ের মধ্যমণি। এরপর দীর্ঘ ৩৬ বছরের অপেক্ষা। এই এত বছর দশ নম্বর জার্সিধারী মেসির দিকে তাকিয়ে ছিলেন আর্জেন্টাইন ভক্তরা। এতদিন ভক্তরা নিরাশ হয়েছেন। কিন্তু এবার মেসি হাসি ফোটালেন বিশ্বময়। তাই বিশ্বজুড়ে এখন মেসি বন্দনা। এরই মধ্যে মেসির বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে ঘুমানোর ছবি ভাইরাল হয়েছে। স্বপ্ন হলো সত্যি। সোনালি ট্রফি হলো তার। তবু লিওনেল মেসির যেন মনে হচ্ছে-এখনও তিনি স্বপ্নের জগতে আছেন। আবার এমনও মনে হতে পারে, ৩৬ বছরের অপেক্ষার অবসান হয়েছে। জেতা হয়েছে ট্রফি। কেউ যদি কেড়ে নিয়ে যায়। তাই হাতছাড়া করতে নারাজ আর্জেন্টাইনদের স্বপ্নপূরণের মহানায়ক। কাতার থেকে বিশ্ব জয় করে মেসিরা ফিরেছেন দেশে। বুয়েনস এইরেস বরণ করে নিয়েছে বিশ্বজয়ী বীরদের। উৎসব ও উন্মাদনার কমতি নেই। এরইমাঝে মেসির পোস্ট করা একটি ছবি চমকে দিয়েছে নেটিজেনদের। ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা তিনটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে মেসি বিছানায় শুয়ে আছেন বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে। বিশ্বকাপ জেতার পর দেশে ফিরে বুয়েনস এইরেসে রাতভর উৎসবের পর সকালে নিজের হোটেলকক্ষে ট্রফি হাতে সহাস্যে ছবির জন্য পোজ দেন মেসি। তিনটি ছবি ভক্তদের উপহার দিয়ে ক্যাপশনে লেখেন-‘গুড মর্নিং!’ তার স্বপনে-শয়নে ছিল সোনালি ট্রফি। অধরা ট্রফি স্পর্শ করার পরও যেন সাধ মিটছে না। অমৃত কখনো অরুচি হয় না। এও একটা কারণ হতে পারে স্বপ্নে দেখা ট্রফি বাস্তবে ধরা পড়ার পর হাতছাড়া না করার।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, কয়েকজন তারকা খেলোয়াড়ের সঙ্গে মেসিরও এই বিশ্বকাপ শেষ। তিনি আর খেলবেন না; বা খেলতে পারবেন না। আক্ষেপটা ঠিক এখানেই। এই মেসির ঝুলিতে কী নেই? বিশ্বকাপ শিরোপা ছাড়া অন্য সব অর্জনই মেসির ঘরে। শুধু একটি আক্ষেপ-আফসোস! শুধু একটি চাওয়া, সেটি হলো একটি বিশ্বকাপ শিরোপা। মেসির জন্য এই কামনা ছিল দল-মত-নির্বিশেষে প্রায় সবার। এমনকি বিশ্বকাপে অংশ নেয়া অনেক দল ও খেলোয়াড়ও চেয়েছেন এবারের শিরোপাটি মেসির হাতে যাক। ঈশ্বর সেই করুণা করুক। তার দিকে মুখ তুলে তাকান। হ্যাঁ, সেই চাওয়া, সেই কামনা সত্যি হয়েছে। সেই স্বপ্নপূরণ হয়েছে। এমন চাওয়া-পাওয়ার মাধ্যমে ফুটবলের সত্যিকার প্রেম-ভালোবাসা ও আবেগ নতুনমাত্রা পেল। স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল হয়ে রইলো ফুটবলের সৌন্দর্য। উত্তেজনাপূর্ণ ফাইনালের মধ্য দিয়ে পর্দা নামলো কাতার বিশ্বকাপের। রোববার রাতে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি ছিল দোহার লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে, যেখানে নাটকের পর নাটক মঞ্চস্থ করে দুটি দল। অবশেষে ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপের শিরোপা জয় করে আর্জেন্টিনা। এ নিয়ে তৃতীয়বার বিশ্ব আসরের শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব দেখালো ল্যাটিন আমেরিকার দেশটি। এই ঐতিহাসিক জয়কে সম্মান জানাতে পিছিয়ে নেই আর্জেন্তিনার সরকারও। সংবাদ সংস্থা ডেইলি মেইল-এর খবর অনুযায়ী, বিশ্বকাপ জয়ের পর আর্জেন্টাইন তারকা লিওনেল মেসির মুখচ্ছবি ১০০০ পেসো ব্যাংক নোটে রাখার কথা চিন্তা করছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ডেইলি মেইল তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, কাতারে জাতীয় দলের ঐতিহাসিক জয়কে স্মরণীয় করে রাখতে আর্জেন্টিনার কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগ্রহী। ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনালে পেনাল্টি শ্যুটআউটে ৪-২ গোলে মহাকাব্যিক জয়ের আগে থেকেই এই ধারণা নিয়ে কাজ করছে তারা। আলোচিত ১০০০ পেসো নোটের মুদ্রিতব্য খসড়া ভাইরাল হয়ে গেছে এরই মধ্যে। ভক্তরাও এটিকে দ্রুতই সার্কুলেশনে দেখতে আগ্রহী। সম্ভাব্য ওই ১০০০ পেসোর নোটের এক পাশে মেসির ছবি থাকবে। সঙ্গে থাকবে মেসির স্বাক্ষর ও মেসির নাম। অন্য পাশে ২০২১ সালে কোপা আমেরিকার শিরোপা জয়ের পর দলের উল্লাসের ছবি থাকবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct