বিষয়: জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ
সরিফুল বিশ্বাস
শিক্ষক-আরিজুল্লাপুর হাই মাদ্রাসা
আজকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ অর্থাৎ (conservation of biodiversity) সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ:::-- যে পদ্ধতিতে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি সাহায্যে সুপরিকল্পিতভাবে প্রাকৃতিক সম্পদের হিসেব মতো ব্যবহার করা হয় এবং পরিবেশের অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি করে প্রাকৃতিক সম্পদ পুনঃস্থাপন সুরক্ষিত করা হয় তাকে সংরক্ষণ বলে! অপরপক্ষে, সজীব প্রজাতির রক্ষণাবেক্ষণ বিজ্ঞানসম্মত ভাবে তাদের ব্যবহার এবং পুনরুদ্ধার কে জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ বলে। জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ দুইভাবে করা হয় ১) ইন সিটু সংরক্ষণ ও 2) এক্স সিটু সংরক্ষণ।আজকে আমরা ইনসিটু সংরক্ষণ সম্পর্কে জানব। জীব প্রজাতিকে তার নিজস্ব স্বাভাবিক বাসস্থানে রেখে যদি সংরক্ষণ করা হয় তখন তাকে বলা হয় ইনসিটু সংরক্ষণ। সহজ ভাবে বললে বোঝায়,সুন্দরবনের বাঘ কে যদি ওই সুন্দরবনে রেখেই সংরক্ষণ করা হয় তখন সেটি হল ইন সিটু সংরক্ষণ।
ইন সিটু সংরক্ষণের উপায়::::- ১)ইনসিটু সংরক্ষণ এ উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতিকে তাদের নিজস্ব বাসস্থানে রেখে সংরক্ষণ করা হয়। ২)এই সংরক্ষণের মাধ্যমে জীবের সমগ্র বাস্তুতন্ত্র কে রক্ষা করা হয়। ৩)ইন সিটু সংরক্ষণের উপায় গুলি হল জীব বৈচিত্র হটস্পট ,সুরক্ষিত অঞ্চল এবং রিজাভ ফরেস্ট! ৪) সংরক্ষিত অঞ্চল এর মধ্যে রয়েছে জাতীয় উদ্যান, অভয়ারণ্য ,রিজার্ভ ফরেস্ট এবং বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ।
A)ন্যাশনাল পার্ক বা জাতীয় উদ্যান::-- ভারতীয় বন্যপ্রাণী বোর্ডের পরামর্শে কেন্দ্রীয় সরকারের আইন বলে ও নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত ও সংরক্ষিত বৃহৎ অঞ্চল যুক্ত স্থায়ী প্রকৃতির বনভূমিকে জাতীয় উদ্যান বলে।
১)বন্য প্রজাতি সংরক্ষণের জন্য জাতীয় উদ্যান এলাকা সংরক্ষিত থাকে।
২) এখানে উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয় প্রজাতির সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে! এখানে গাছকাটা, কৃষিকাজ ,পশুচারণ, বন্যপ্রাণী শিকার, মাছ ধরা নিষিদ্ধ ও আইনত দণ্ডনীয়।
উদাহরণ:::_গোরুমারা জাতীয় উদ্যান (পশ্চিমবঙ্গের)
জিম করবেট জাতীয় উদ্যান (উত্তরাখণ্ডের)
কানহা জাতীয় উদ্যান (মধ্যপ্রদেশের)
জিম করবেট জাতীয় উদ্যান ভারতের প্রথম জাতীয় উদ্যান বা ন্যাশনাল পার্ক।
B)অভয়ারণ্য:::--- রাজ্য সরকারের বন্যপ্রাণী বোর্ডের আদেশাবলে স্থাপিত যে নির্দিষ্ট অরণ্যে বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণীরা নির্ভয়এ বিচরণ ও জনন কার্য সম্পাদন করতে পারে তাকে অভয়ারণ্য বলে।
১) এখানে কেবলমাত্র প্রাণী প্রজাতি সমূহকে সংরক্ষণ করা হয়! এখানে যে কোন ধরনের বন্যপ্রাণী ধরা ও হত্যা করা নিষিদ্ধ!
উদাহরণ: বক্সা অভয়ারণ্য (পশ্চিমবঙ্গে), পবিতরা অভয়ারণ্য (অসম)
সংরক্ষিত বনাঞ্চল (রিজার্ভ ফরেস্ট)রাজ্য সরকারের অনুমতি নিয়ে বনদপ্তর বন আইন প্রয়োগ করে যে কোন বিশেষ অঞ্চল কে অস্থায়ীভাবে সংরক্ষিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করলে তাকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল বলে! যেমন :চাপড়ামারি রিজার্ভ ফরেস্ট!
বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ :::----
কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট হয়ে গেলে কেন্দ্রীয় সরকার আইন প্রণয়ন করে ঐ অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করেন। একে বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ বলে। পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ হল সুন্দরবন। তবে আলিপুরদুয়ার জেলাকে ও বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ ঘোষণার প্রচেষ্টায় প্রস্তুতি নিচ্ছে।ভারতের প্রথম বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ হল নীলগিরি যা মূলত পশ্চিমঘাট পর্বতের তামিলনাড়ু, কর্নাটক ও কেরালা অঞ্চলে অবস্থিত।
এক্স সিটু সংরক্ষণ_ (Ex situ conservation):-জীব প্রজাতি কে তার নিজস্ব স্বাভাবিক বাসস্থানের বাইরে নিয়ে এসে কৃত্রিম ভাবে সংরক্ষন করাকে এক্স সিটু সংরক্ষণ বলা হয়।
১)এক্স সিটু সংরক্ষণের বিপন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতিকে তাদের প্রাকৃতিক বাসস্থান থেকে দূরে নির্দিষ্ট স্থানে বিশেষ যত্ন সহকারে সংরক্ষণের আওতায় আনা হয়!
২)জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য এক্স সিটু সংরক্ষণের যে যে উপায় অবলম্বন করা হয় সেগুলি হল বোটানিক্যাল গার্ডেন, আর বরেটা , জুলজিক্যাল গার্ডেন, অ্যাকোয়ারিয়াম!
চিড়িয়াখানা (zoological garden):_যে বদ্ধ স্থানে প্রাণীদেরকে প্রদর্শনের জন্য রাখা হয় এবং যে স্থানে প্রাণীরা প্রজননের মাধ্যমে তাদের বংশ বিস্তার করতে পারে তাকে চিড়িয়াখানা বলে। পৃথিবীতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মানুষজন দ্বারা পরিচালিত চিড়িয়াখানা র সংখ্যা ৮০০টি।এগুলিতে উভচর সরীসৃপ ও স্তন্যপায়ী মিলে প্রায় 3000 টি প্রাণী প্রজাতিকে সংরক্ষণ করা হয়। চিড়িয়াখানায় বন্য পরিবেশে বিলুপ্ত এমন প্রাণীদের রাখা হয় এবং তাদের বংশ বিস্তার ঘটানো হয়।
উদাহরণ:::---
পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় অবস্থিত আলিপুর জুলজিক্যাল গার্ডেন, হায়দরাবাদ তেলেঙ্গানা তে অবস্থিত নেহেরু জুলজিক্যাল পার্ক, এছাড়া উড়িষ্যার নন্দনকানন।বোটানিক্যাল গার্ডেন (botanical garden,):_ যে স্থানে বিজ্ঞানসম্মতভাবে চিহ্নিত উদ্ভিদের চাষ করা হয়, তাদেরকে প্রদর্শিত করা হয় এবং প্রয়োজনমতো সংগ্রহ করা হয়, তাকে বোটানিকালগাডেন বলে। পৃথিবীজুড়ে 1500টির বেশি বোটানিক্যাল গার্ডেন আছে। সব মিলিয়ে 80000 টি উদ্ভিদ প্রজাতি সংরক্ষণ করা আছে। বোটানিক্যাল গার্ডেনে ঔষধি উদ্ভিদের চাষ করা হয় যা ওষুধ প্রস্তুতিতে কাজে লাগে।
উদাহরণ;;; আচার্য জগদীশচন্দ্র বোস ইন্ডিয়ান বোটানিক্যাল গার্ডেন যা কলকাতার শিবপুরে অবস্থিত! ওড়িশার ভুবনেশ্বরে ওড়িশা স্টেট বোটানিক্যাল গার্ডেন নন্দনকানন অবস্থিত।
ক্রায়ো সংরক্ষণ;:--- -১৯৬ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেট তাপমাত্রায় তরল নাইট্রোজেন এর মধ্যে নমুনা বস্তুকে সংরক্ষণ করাকে বলা হয় ক্রায়ো সংরক্ষণ ক্রায়ো সংরক্ষণ এ মূলত শুক্রাণু ,ডিম্বাণু ও বীজ সংরক্ষণ করা হয়।
উদাহরণ:- ইংল্যান্ডে অবস্থিত মিলেনিয়াম সিড ব্যাংক , যাহা বীজ সংরক্ষণ কেন্দ্র হিসাবে বিখ্যত।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct