আপনজন ডেস্ক: বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকে রাজ্যে রাজ্যের বেশ কিছু জায়গায় সহিংসতা শুরু হয়েছে। সেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হযেছেন কমপক্ষে ১৪জন। সেই রাজনেতিক প্রতিহংসা চরিতার্থে এবার দৃষ্টান্ত হয়েছে থাকছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জীবনতলা এলাকা। এরাকার মানুষের অভিযোগ ক্যানিং পূর্ব কেন্দ্র থেকে এবারও তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সওোত মোল্লা জিতেছেন। আর জেতার পর তার লাগামহীন সন্ত্রাসে গোটা জীবনতলা থানা এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। স্থানীয় বহু মানুষের অভিযোগ, নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকে জেসিপি গাড়ি দিয়ে একের পর এক দোকানপাট-ঘরবাড়ি বেঙে ভেলা হচ্ছে যারা মূলত সওোত মোল্লার বিরোধিতায় সরব হয়েছিলেন। সওকত মোল্লার সেই আক্রোশের শিকার হওয়অর মানুষজনদের মধ্যে বেশিরভাগই পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীর দল আইএসএফের সমর্থক। তবে, আইসএফ সমর্থকদের ‘জব্দ’ করতে দিয়ে সাধারণ ও গরিব মানুষদেরও ঘরবাড়ি যেভাবে ভেঙে ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ তা নজিরবিহীন হয়ে উঠছে। ইতিমধ্যে জীবনতলা এলাকার মানুষ সওকাত মোল্লা ও তার দলবলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। এমন এক অভিযোগের কপি ‘আপনজন’-এর হাতে এসেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ক্যানিং পূর্ব বিধানসভা এলাকার জীবনতলা থানার অন্তর্গত শিংহেশ্বর পূর্ব গ্রামের বাসিন্দা আকেয়াড় মিস্ত্রি জীবনতলা থানা ও বারুইপুর পুলিশ জেলাকে যে অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে লিখেছেন, ‘গত ৩রা মে তৃণমূলের কিছু দুষ্কৃতীরা আমার বাড়িতে ঢুকে পড়ে আমার ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে, আমার একমাত্র আয়ের পথ আমার অটো রিক্সা। দুষ্কৃতীরা সেই অটোটাও ভেঙে দেয়। এবং আমাকে ও আমার পরিবারকে হুমকি দেয় ও মারধর করে। তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা হল সওকাত মোল্লা, হাকিম মিস্ত্রি... যথা শীঘ্র সম্ভব দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিন।’
স্থানীয় মানুষদের অভিযোগ, জেসিপি গাড়ি নিয়ে কমপক্ষে আড়াইশো বাড়ি-ঘর-দোকাটপাট ভাঙচুর করা হয়েছে। আর অভিযোগের তীর সেই সওকাত মোল্লার বাহিনীর দিকে।
উল্লেখ্য, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের কর্মী সমর্থকদে মান্ত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। এখন প্রধান সমস্যা করোনা। তাই করোনা মোকবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়তে কোনও ধরনের উন্মাদনায় না গিয়ে শান্তিতে থাকার আহ্বান জানান। কিন্তু সেই আহ্বা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ক্যানিং-জীবনতলা এলাকায়।
নির্বাচন পরবর্তী রাজনেতিক হিংসার খবর মিলছে রাজ্যের বেশ কিছূ জায়গায়। কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে যাওয়ার মুখে জীবনতলা-ক্যািনং এলাকা। আর সেই সহিংসতা যে চুপিসাড়ে নয় তারও প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। রযমান মাস সংযমের মাস। কিন্তু এই মাসে সংযম হারিয়ে যেভাবে সন্ত্রাসের মুখে পড়ছে মূলত মুসলিমরা তা অবাক করারর মতো। অবশ্য জীবনতলা এলাকার এই হামলাকারীরাও সংখ্যালঘেু বলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এ বিষয়ে উল্লেখ্য, বাঙড় এলাকায় পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীর উপর সওকাত মোল্লার দলবলের হামলাকে কেন্দ্র করে আব্বাসের রাজনৈতিক দল আইএসএফ-এর আত্মপ্রকাশ। এই নতুন দল ভাঙড়ে জয় পেলেও ক্যানিং পূর্ব কেন্দ্রে সওকাত মোল্লাকে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে ফেলে দেয়। তাই এলাকার মানুষজন বলছেন, সেই আক্রোশ মেটাতে চলেছেন সওকাত মোল্লা।
যদিও সওকাত মোল্লা এক টিভি চ্যানেলের সামনে নাম না করে প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছেন, আগুন নিয়ে খেলা শুরুর করেছিল আইএসএফ। এ নিয়ে সওকাত মোল্লাকে টিভি চ্যানেলের সাংবাদিককে বলতে শোনা যায়, ‘যে আগুন ওরা জ্বালানোর চেষ্টা করেছিল সেই আগুনে ওদেরকে পুড়িয়ে মারব। একথা অন ক্যামেরায় বলে যাচ্ছি।’
এছাড়া আরও বলেন, ভয়ঙ্কর খেলা শুরু হবে। আর পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীকে সওকাত মোল্লা বাঁদর বলে কটাক্ষ করেন। ক্যামেরার সামেনে সওকাতকে বলতে শোনা যায়, ‘একটা ভণ্ড, একটা কুঁজো, একটা বাঁদর আব্বাস মুসলিমদেরকে ভাগ করতে চেয়েছে। তার জন্য ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে হিসেব নেব’।
হ্যাঁ, ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে হিসেব নেওয়া শুরু হয়ে গেছে। আর তার শিকার হচ্ছে যারা শুধু আইএসএফ সমর্থক তারা নন, তাদের সঙ্গে গরিব মানুষরাও যারা কোনওভাবেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। যারা তিন দিন আনে দিন খায়, টালির ঘরে বাস করে, তাদের ঘরবাড়ি সওকাতের লাগামহীম সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে বলে প্রবল অভিযোগ উঠেছে। পবিত্র রমযান মাসে সংযম না থাকায় জীবনতলার আকাশ বাতাস আক্রান্তদের কান্নাভরা আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠছে। আর এলাকা জুড়ে এক আতঙ্ক সৃষ্টি হযেছে, কে জানে কার বাড়ি, দোকান কখন ভেঙে ফেলবে সওকাত মোল্লার বাহিনী।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct