নিজস্ব প্রতিবেদক , মেদিনীপুর, আপনজন: আইআইটি খড়গপুরে একের পর এক ছাত্র মৃত্যু ফের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল। খড়গপুর আইআইটিতে যেন রহস্য পিছু ছাড়ছে না। বারবার ছাত্র-মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে হোস্টেল থেকে। ফের অস্বাভাবিক মৃত্যু খড়্গপুর আইআইটির পড়ুয়ার। রবিবার সকালে ঘর থেকে উদ্ধার ঝুলন্ত দেহ। মৃত পড়ুয়ার নাম মহম্মদ আসিফ কামার। আইআইটি খড়্গপুরের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-র তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন মুহাম্মদ আসিফ কামার। আসিফ আইআইটি খড়্গপুরের মদন মোহন মালব্য হলের এসডিএস ব্লকের ১৩৫ নম্বর রুমে থাকতেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। শনিবার রাত থেকেই আসিফের রুমের দরজা লাগানো ছিল। সহপাঠীরা বারবার দরজা খোলার চেষ্টা করেও যখন ব্যর্থ হন, তখনই খবর দেওয়া হয় পুলিশে। রবিবার সকালে আইআইটি ক্যাম্পাসের মধ্যে থাকা হিজলি ফাঁড়ির পুলিশ গিয়ে রুমের দরজা ভেঙে আসিফের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে। মৃতদেহ খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। আসিফ বিহারের শিওহর জেলার গারাহিয়ার গ্রামের বাসিন্দা বলে পুলিশ সূত্রে খবর। তার বাড়ির লোকদের সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয়। খড়্গপুর আইআইটি-তে ৪ মাসের মধ্যে ৩ জন মেধাবী পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যুতে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। তবে, এই মৃত্যু রহস্যের শুরু বলা যেতে পারে ২০২২ সালে। ২০২২-এর অক্টোবর মাসে রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় খড়গপুর আইআইটিতে তৃতীয় বর্ষের ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র ফাইজান আহমেদের। তার বাড়ির লোকজন এই মৃত্যুকে খুন বলে অভিযোগ করেছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয় বলে অভিযোগ ছিল। এবারও আসিফ কামারের মৃত্যু রহস্যে তার সঙ্গে এক তরুণীর সম্পর্কের কথা সামনে আনা হচ্ছে। জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, আসিফ ভিডিয়ো কলে দিল্লির এক তরুণীর সঙ্গে কথা বলতে বলতেই আত্মহত্যা করেন। ওই তরুণীই আইআইটি কর্তৃপক্ষকে খবর দেন। পুলিশ অবশ্য তদন্ত শুরু করেছে বলে জানা গেছে। কিন্তু পুলিশি তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে বরাবর নানা সন্দেহ তৈরি হয়েছে। এর আগে গতবছর ফাইজান আহমেদের মৃত্যুর পর পুলিশি তদন্ত রিপোর্ট নিয়েও সন্তুষ্ট ছিল না তার পরিবার। প্রথম ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে কার্যত আত্মহত্যার তত্ত্ব উঠে এলেও ,খুন করা হয়েছে মেধাবী ফাইজানকে, এই দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে সিআইডি তদন্ত বা সিট গঠনের দাবি জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অসমের বাসিন্দা ফাইজানের মা। আদালতের নির্দেশে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত, রুজু হয়েছিল খুনের মামলা।
ফাইজানের পরিবারের সে সময় অভিযোগ ছিল এক কানের নীচে অস্ত্রের আঘাত, আরেক কানের নীচে গর্ত। দ্বিতীয় অটোপসিতে দেহে গুলির চিহ্ন, গলায় কোপানোর ক্ষত ছিল। ২০২২-এ ফাইজানের দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের রিপোর্ট কলকাতা হাইকোর্টে জমা দিয়েছিলেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ অজয়কুমার গুপ্ত। ফাইজান আহমেদকে খুন করা হয়েছিল বলে রিপোর্টে জানিয়েছিলেন বর্ষীয়ান ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ অজয়কুমার গুপ্ত। এরপর অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা সিবিআই তদন্ত চেয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী। তারপরেই ফাইজান মৃত্যু রহস্য অধরাই থেকে গেছে। এবার আসিফ কামারে মৃত্যুও ফের প্রশ্ন তুলে দিল, আসলে এটি আত্মহত্যা না খুন?
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct