কাশ্মীরের কুপওয়ারা জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম পুঁজোয়া থেকে উঠে এসে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ২৩ বছরের তরুণী নাদিয়া বেগ। সদ্য প্রকাশিত ইউপিএসসি ২০১৯ পরীক্ষায় নাদিয়া ৩৫০ তম স্থান দখল করেছেন। এই গ্রাম থেকে নাদিয়াই প্রথম যিনি সিভিল সার্ভিসে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়ার পর সেখানে ইন্টারনেট মেলে না। তাই নাদিয়া কাশ্মীর ছেড়ে চলে এসেছিলেন দিল্লিতে। দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার আইএএস রেসিডেন্সিয়াল কোচিং অ্যাকাডেমিতে ভর্তির জন্য আবেদন করেন। যেহেতু জামিয়া বিনামূল্যে এই কোচিং দেয় তাই জামিয়াকেই তার পড়াশুনার কেন্দ্র হিসেবে বেছে নেন নাদিয়া। ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আইএএস হওয়ার লক্ষ্যে কোচিং নিতে শুরু করেন জামিয়ায়। আর এ বছর যে ৩৯ জন কৃতি জামিয়া থেকে সিভিল সার্ভিসে উত্তীর্ণ হয়েছেন তার মধ্যে স্থান করে নেন নাদিয়া।
তার এই সাফল্য নিয়ে নাদিয়া বলেন, যদি আমি গত বছর কাশ্মীরে থাকতাম তাহলে কি করে সিভিল সার্ভিসের প্রস্তুতি নিতাম ভাবতে পারতাম না। কারণ সিভিল সার্ভিসের প্রস্তুতি নিতে ইন্টারনেট খুবই জরুরি। এছাড়া আমি যে প্রত্যন্ত এলাকায় থাকি সেখানে সংবাদপত্র খুব দেরিতে যায়। এক একটা সংবাদপত্রের দাম পড়ে কুড়ি টাকা বা তার বেশি। তাই আমি ভালো মনে করে দিল্লি চলে আসি।
ইকোনোমিক্সে অনার্স গ্র্যাজুয়েট নাদিয়ার ইচ্ছা প্রশাসনিক ক্ষেত্রে অথবা বিদেশ বিভাগে কাজ করার। কিন্তু তার যা র্যাঙ্ক তাতে এই সুযোগ পাওয়া মুশকিল। তাই চাকরিতে যোগ দিলেও পুনরায় সিভিল সার্ভিসের বসার ইচ্ছা রয়েছে নাদিয়ার। তার আশা আগামীতে আরো ভালো ফল করবেন।
কাশ্মীর থেকে এবার ১৬ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন সিভিল সার্ভিসে। নাদিয়া তাদের মধ্যে একজন। নাদিয়ার পরিবারে সবাই উচ্চ শিক্ষায় নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার দুই দিদি পেশায় চিকিৎসক। আর ভাই সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার্থী। নাদিয়ার বাবা মা দুজনই সরকারি স্কুল শিক্ষক। তাই নাদিয়ার আত্মবিশ্বাস তিনি আগামীতেও সফল হবেন।
নাদিয়া বলেন, তাকে দেখে কাশ্মীরি মেয়েরা উদ্দীপিত হবে এটা বিশ্বাস। আর কাশ্মীরিরা খুব মেধাবী। তাই তাদের মন সফলতার দিকে।
তবে তার মন ভারাক্রান্ত করে দিয়েছিল ফল বের হওয়ার আগের দিন। তার ছবি ও নাম ব্যবহার করে ফেক ট্যুইটারে প্রফাইলে বিতর্কিত পোস্ট করে যা তাকে বিপদে ফেলতে পারতো। কারণ তিনি এখন সরকারি অফিসার হতে যাচ্ছেন, অথচ পোস্টটা ছিল সরকারের বিরুদ্ধে। তাই সাইবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন নাদিয়া। সেটি শ্রীনগরের পুলিশ ডিলিট করতে পারলেও তার স্ক্রিন শট প্রচার করায় উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
নাদিয়া চান জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে। তার বিশ্বাস প্রশাসনের উচ্চপদে আসীন হয়ে কাশ্মিরী জনগণের সেবাও করতে পারবেন। তাই আগামীতে সিভিল সার্ভিসে ফের বসতে চান।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct